সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ফাটল এক মাসেও মিলেনি প্রতিবেদন

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে গত ১৫ জানুয়ারি সিলেটের কদমতলি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। চালু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই টার্মিনালের ছাদের একটি অংশে ফাটল ধরা পড়ে। ফাটল ধরা পড়ার পর জরুরী সংবাদ সম্মেলন করেন সিসিক মেয়র। বাস টার্মিনাল নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে কী না তা অনুসন্ধানে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।গত ১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছিলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আসেনি।ফাটল প্রসঙ্গে টার্মিনালের নকশা করা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের ৩ শিক্ষকের একজন সুব্রত দাস বলেন, স্থাপনায় বেশ কয়েকটি অংশ থাকে। যার মধ্যে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, প্ল্যাম্বিং এই ৫টি অংশ থাকে। টার্মিনালের যে ফাটল সেটি মূল যে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন আছে তাতে নয়। এটি পার্টিশন দেয়ালের ত্রুটি। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি মূল ভিত্তিতে আঘাত আনতে পারে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঢালি কনস্ট্রাকশনের সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন জানান, এই প্রকল্পটি এখনো সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান বাস টার্মিনালটিতে সুযোগ সুবিধাসমূহ ঠিক আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করতে পরীক্ষামূলকভাবে সেবা প্রদান শুরু হচ্ছিল। এরই মধ্যে স্থাপনাটির একটি অংশে কিছু ত্রুটি দেখা যায়। তবে এটি মূল ভিত্তিতে নয়। মূল ভিত্তির বাইরের দিকের একটি অংশ। সম্ভবত সে অংশের মাটি সামান্য ধেবে গেছে তাই এমনটা হয়েছে। এটি গুরুতর কোন সমস্যা না।সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসেনি। তবে আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এটি বাইরের দিকে একটি ওয়াল, এর কারণে মূল ভিত্তিতে কোন সমস্যা হবে না। ডিজাইনের সমস্যা থাকার কারণে এটি হয়েছে। বাইরের যে পার্টিশন ওয়াল দেয়া হয়েছে সেটার উচ্চতা বেশি। এর নিচের কলামে ফাউন্ডেশন শক্তিশালী না হওয়ার কারণে এমটি হয়েছে।

২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পের আওতায় সিসিকের উদ্যোগে ৮ একর ভূমিতে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটির কাজ শুরু হয়, পরে তা বেড়ে ৬৭ কোটি টাকাতে গিয়ে দাঁড়ায়। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম টাইপ বাংলোর স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কদমতলি বাস টার্মিনাল প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করা হয়।কদমতলি বাস টার্মিনালে বিমানন্দরের আদলে বহিঃর্গমন এবং আগমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গোলাকার ৫ তলা একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন কার্যালয় স্থাপন করা হবে।যাত্রী উঠানামার জন্য পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুপরিসর পার্কিং ব্যবস্থা, পরিবহন সেবাদানকারীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট, পর্যাপ্ত যাত্রী বিশ্রামাগার, নারী, পুরুষ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিক বেড, প্রার্থনা কক্ষসহ সব ধরণের আধুনিক সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এই স্থাপনায়।এছাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন করা হয়েছে।

You might also like