সিসিক নির্বাচন:দলীয় সিদ্ধান্ত মানছেন না সিলেটের নেতাকর্মীরা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে এই সিদ্ধান্ত মানছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। তারা নির্বাচনমুখী। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মরিয়া তারা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে জমা দেয়া, এমনকি প্রচারাণাও চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ জোরেসোরে। আর তাদের এই বর্জন-গ্রহণ নিয়ে সিলেটজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেনা বিএনপি। এমন নীতিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এলাকাগুলোয় তারা অংশগ্রহণও করেন। মূলতঃ বিএনপির এমন নীতির কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলটির নীতি-নির্ধারকদের তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারেন না। আর তাই সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে কঠোর নির্দেশনাকে পাত্তা দেয়ার প্রয়োজনই মনে করছেন না তারা।

জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে বর্তমান বিএনপি সমর্থিত ৭ কাউন্সিলরের মধ্যে ৬ জনই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়। তারা মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে একমাত্র বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচন বর্জন করেছেন।বিএনপি’র বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে যে ৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তারা হলেন, নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, নগর বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও সংরক্ষিত ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, সদ্যবিদায়ী নগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক রোকশানা বেগম শাহনাজ।

আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন বিএনপি নেতা।এদিকে জানা গেছে, বিএনপি এবং ছাত্রদলের আরও কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন। সোমবার তিনি জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে এ সময় তার মুখে মাস্ক পরা থাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই চিনতে পারেননি। দু’একজন চিনলেও তিনি কারো সাথে কথা বলতে রাজি হননি। সুমনের মতো এমন আরও অনেকেই গোপনে বা আড়ালে-আবডালে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।বিএনপি’র মাঠের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচন বিমুখতা আমাদের সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। নেতারা এটা বুঝতেই পারছেন না। অংশগ্রহণ করলে কারচুপি হলেও জনগণের কাছে সেটা তুলে ধরা যেত। তাই আমরা নির্বাচনে আগ্রহী।

এমন কি ইভিএম নিয়ে সমালোচনাকেও তারা পাত্তা দিচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য, খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিছুদিন আগে। ইভিএম-এ অনুষ্ঠিত এ নির্বচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আ’লীগ নেতা ইকলাল আহমদ। এমন তরতাজা উদাহরণ চোখের সামনে থাকায় তৃণমূল বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, ইভিএম-এ হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। তাই তারা রাজনৈতিক একগুয়েমিকে পাত্তা না দিয়ে নির্বাচনমুখী।অবশ্য নগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারের পাতানো ফাঁদ বুঝতে না পেরে কোন কোন বিএনপি নেতা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। তারপরও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন বর্জন করবেন। অন্যথায় দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন।

You might also like