সিসিক নির্বাচন: ১০ বছর পর আওয়ামী মেয়র পেল সিসিক

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছে। আবহাওয়ার বৈরিতাও নেই। সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রমুখী ভোটারের ঢল নেমেছে, একথা বলাই যায়। এরমধ্যেই চলছে তুমুল আলোচনা। অবশ্যই মেযর নিয়ে। এই চেয়ারে আ’লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী না জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলের সম্ভাবনা বেশী-আলোচনার বিষয় সেটিই। তবে শেষ পর্যন্ত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকেই এগিয়ে রাখছেন সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সচেতন মহল পর্যন্ত।
তাদের ধারণা, ১০ বছর পর আ’লীগের নেতৃত্ব ফিরছে সিলেটের নগরভবনে। বিএনপি এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করেছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। এ অবস্থায় সিলেটে ঐক্যবদ্ধ আ’লীগের সাথে মেয়র পদে যারা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন, তারা প্রতিযোগিতাই গড়ে তুলতে পারবেন না বলে মনে করছিলেন ভোটের মাঠে সক্রিয় গণমাধ্যম কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন ভোটাররা। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর পর সিলেট সিটি করপোরেশনের আঁতুড়ঘর নগরভবনে ফিরলো আ’লীগের কর্তৃত্ব।
এরাগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি এতই জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন যে, ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে কারাগারে থেকে অংশগ্রহণ করলেও কেউ তার বিজয় ঠেকাতে পারেনি। তিনি জয় পেয়েছিলেন বিশাল ব্যবধানে। ওই নির্বাচনে তার সঙ্গে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন প্রয়াত নেতা এমএ হক।

এর আগে কামরান ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভার চেযারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হলে ভারপ্রাপ্ত মেযর হন তিনি। ২০০৩ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বিএনপি’র প্রয়াত নেতা এমএ হককে পরাজিত করে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান।
দু’বারের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গেলে নগরভবনে প্রায় ২০ বছরের কর্তৃত্ব হারায় আ’লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সামান্য ভোটের ব্যবধানে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।অবশ্য ওই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য আরিফের জনপ্রিয়তার চেয়ে আ’লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই বেশী দায়ী করেন সচেতন মহল। ২০২০ সালে মহামারি করোনায় তাঁর অকাল মৃত্যুর পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের বিষযটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলে। নগর আ’লীগের অনেক বাঘা বাঘা নেতা কেন্দ্রে লবিং করতে থাকেন নৌকার মাঝি হতে। তবে শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও আ’লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আস্থা রাখেন যুক্তরাজ্য আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উপর।

মনোনয়ন ঘোষণার পর সিলেট আ’লীগে সমস্যা হতে পারে, ঐক্য নাও থাকতে পারে-ইত্যাদি আশঙ্কা থাকলেও শেষপর্যন্ত তা আর হয়নি। মনোনয়ন যুদ্ধে পরাজিত নেতারাও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জন্য শেষপর্যন্ত প্রচার যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন এবং শেষ অবধি তারা সবাই নৌকার জন্য ছিলেন একাট্টা। মরিয়া হয়ে কাজ করেছেন।এদিকে, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সরে দাঁড়ানোর পর নৌকা বা আনোযারুজ্জামান চৌধুরীর পথ অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায়। তখন থেকে প্রায় সবাই তার বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত মতামত দিতে থাকেন। কারণ, তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মধ্যে যারা আছেন, তাদের পক্ষে ন্যুনতম প্রতিযোগিতা গড়ে তোলাও অসম্ভব বলে মনে করেন ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মী ও সচেতন ভোটাররা।বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পূর্বপর্যন্ত সবাই ধরে নিয়েছিলেন সিলেটে বিশাল ব্যবধানে হারলেও নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী হতে যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে ধরা হচ্ছিল তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণার পর শেষ পর্যন্ত লাঙল-ই হলো নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী। তবে ভোটের ব্যবধান থাকবে বিশাল। এর মানে হলো, ১০ বছর পর নগরভবনে ফিরলো আ’লীগের কর্তৃত্ব।

You might also like