সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি, রাষ্ট্রদূতকে তলব

নিউজডেস্ক
সত্যবাণী

বাংলাদেশঃ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার।এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।রোববার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ।বাংলাদেশের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা বলেন,রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশে নতুন করে কয়েকশ’ সৈন্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার।এতে আমাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।সেই উদ্বেগের কথাই আমরা মিয়ানমারকে জানিয়ে রেখেছি।তবে ঠিক কী কারণে মিয়ানমার নতুন করে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে তা নিশ্চিত করে ওই কর্মকর্তা বলতে পারেননি।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু ও তার আশপাশের এলাকায় আরাকান আর্মিসহ কতিপয় বিদ্রোহী গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে কোনো একটি গ্রুপ মিয়ানমারের নিরাপত্তা ক্যাম্পে হামলা চালায়।তারপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, নারীদের ধর্ষণ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করলে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ে আছেন।বিদ্রোহী কোনো গ্রুপের তৎপরতার কারণে মিয়ানমার নতুন করে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে থাকতে পারে বলে ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা।মংডু শহর সীমান্তের একেবারে নিকটবর্তী নয়। ফলে সিরিয়াস কোনো ঘটনা নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ২০১৭ সালের সেনা অভিযানের পর যে কোনো ঘটনা নিয়েই বাংলাদেশের উদ্বেগ থাকে।বিশেষ করে সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হলে ২০১৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়ে রেখেছে।মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হলে সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়ে থাকে।

এবার কেন এটা করা হল না- জানতে চাইলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এটা কোনো তলব নয়; কড়া প্রতিবাদও নয়। সৈন্যরা ঘোরাফেরা করায় আমাদের স্বাভাবিক উদ্বেগ থাকে। সেনারা অভিযান চালালে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সেই কারণে আমাদের উদ্বেগের কথা আমরা জানিয়ে রেখেছি।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ রাজ্যটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে নিয়ন্ত্রিত চলাচলের মধ্যে বসবাস করছেন। অবশিষ্ট এক লাখ ২০ হাজার আছেন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তচ্যুত (আইডিপি) ক্যাম্পে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করেছি। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য তাগাদা দিয়েছি।

উল্লেখ্য,রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে দুই বছর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হলেও প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের অনীহার কারণে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।বিদ্রোহী আরাকান আর্মি গ্রুপটি সম্প্রতি মিয়ানমারের কয়েকজন সেনাকে আটক করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) হস্তান্তর করেছে।ওই সব সেনারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।মিয়ানমারে আগামী ৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।তবে আইসিসির কাছে সেনাদের হস্তান্তর কিংবা নির্বাচনের সঙ্গে মংডু এলাকায় সৈন্য বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই বলে ঢাকার কর্মকর্তারা মনে করছেন।

You might also like