সুনামগঞ্জের উজান ধল গ্রামের মাঠে দু’দিনব্যাপী শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব শুরু
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ মানুষ যদি হতে চাও কর মানুষের ভজন,স্বাধীন বাংলারে স্বাধীন হবে সুখে রবে বাংলা মায়ের সন্তান স্বাধীন বাংলরে,এসব নিয়ে দ্বন্ধ কেন কেহ হিন্দু কে মুসলমান সৃষ্টিকর্তা সবারই একজন, কোন মেস্তোরি নাও বানাইল কেমন দেখা যায় ঝিলমিল ঝিলমিল করে করে রে ময়ূর পংঙ্খি নায় ,কেন পিরিতি বাড়াইলে রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি “জ্ঞানী গুণী সবাই বলেন মুক্তি আসে মানবতায়, মানবতা, মন ধর্ম-কর্ম বিফলে যায়” এমন অসংখ্যা কালজয়ী গানের রচয়িতা হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের কালনী নদী ঘেষা উজান ধল নিজ গ্রামে বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী লোক উৎসব ।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলে ও অতিথিদের আগমনে দেরী হওয়াতে রাত ৯টায় শুরু হয় এবং তা বুধবার (১৬ মার্চ) সারারাত পর্যন্ত চলবে এই লোক উৎসব। এই লোক উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজারো করিম ভক্তবৃন্দের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে গ্রামের মাঠ । মাঠের চতুরদিকে শতাধিক দোকানীরা বিভিন্ন ধরনের পন্যসামগ্রী নিয়ে বসেছে মেলা এবং শিশুদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়ে দোলনা ও। মেলার নিরাপত্তায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে দু’দিন ব্যাপী গ্রামের মাঠে প্রতিবছরের ন্যায় লোক উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শাহ আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি ও আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও আপেল মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এই দু’দিনব্যাপী লোক উৎসবের উদ্বোধন করেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজ্ঞুর আলম চৌধুরী। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদ,দিরাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী,তাড়ল ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী আহমদ,কুলজ্ঞ ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেন,বিশ^নাথ উপজেলা আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুল হাই,বাউল শিল্পী আব্দুর রহমান,বাউল সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ।
দেশ বিদেশের বাউল প্রেমী শাহ আব্দুল করিমের ভক্তবৃন্দের পদভাবে মুখরিত হয়ে উঠেছে উজান ধল গ্রামটি। রাতে এক মনোঞ্জ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। ১৯১৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী দিরাইয়ের উজান ধল গ্রামের এক গরীর পিতার ঘরে জন্মগ্রহন করেন করিম। তিনি তার জীবদ্দশায় দুই হাজারের মতো গান রচনা করেন। তার একাডেমিক কোন শিক্ষা না থাকলে তিনি রাখাল রাজা হয়ে তার দূরদর্শিতা,প্রজ্ঞা আর মেধা দিয়ে তিনি অজোপাড়া গায়ের গোচারণ ভূমিতে বসে বসে অসংখ্যা কালজয়ী গান রচনা করে আস্তে আস্তে তার গান বর্হিবিশে^ ছড়িয়ে পরে পরে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এ ব্যাপারে বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের পূত্র নুর জালাল জানান,অন্য বছরগুলোতে কোন কোম্পানী পন্সর করলেও এবার কেহ আগাইয়া আসেনি। ফলে আমার বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে আমার উজান ধল গ্রামবাসির সহযোগিতায় সাধ্যমতো এবারো লোক উৎসব করে যাচ্ছি। তিনি বলেন মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি পৃষ্টপোষকতা পেলে আমার বাবার গানগুলো বর্হিবিশে^ ছড়িয়ে দিতে এখানে একটি সঙ্গীতালয় স্থাপন করা জরুরী। সঙ্গীত বিদ্যালয় স্থাপন করা গেলে নতুন প্রজন্মের অনেক নতুন নতুন শিল্পী তৈরী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আহমদ বলেন,এই হাওরপাড়ের মানুষ শাহ আব্দুল করিমের মাধ্যমেই আমাদের সুনামগঞ্জ তথা দিরাইবাসীকে লোকজন চিনেন। দেশের বিভিন্ন জায়গাতে গেলে দিরাই পরিচয় দিলেই বলেন ও তাহলে আপনারা তো করিমের এলাকার লোকজন। আব্দুল করিম আমাদের অনুপ্রেরণা। তাই করিমের গান সংরক্ষণ করা গেলে যেমন নতুন নতুন শিল্পী তৈরী হবেন তেমনি করিম আমাদের মধ্য আজীবন বেচেঁ থাকবেন বলে জানান। তিনি ধলবাজার হতে শাহ আব্দুল করিমের গ্রামের বাড়ি উজান ধল পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজ্ঞুর আলম চৌধুরী জানান সঙ্গীত বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম একজন রাখাল রাজা ছিলেন,তিনি কালনী নদীকে ঘিরে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাকে বুকে ধারন করে লালন করে তিনি এখান থেকে বাউল গানে উৎসাহি হন এবং শেস পরিণয়ে তিনি বিশ^মন্ডলে একজন খ্যাতিমান গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কারণেই তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। ভক্তবৃন্দের দাবী আগামীতে শাহ আব্দুল করিমের এই জন্মবার্ষিকীতে সরকারের পৃষ্টপোষকতায় একটি সঙ্গীতালয় স্থাপনে সহযোগিতা কামনা করছেন।