সুনামগঞ্জে লাশ নিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের পাগলায় গরু চুরির অভিযোগে আটককৃত ব্যক্তি পুলিশের মারধরে মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন নিহতের স্বজনরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রাস্তায় অবরোধ প্রত্যাহারের কথা বললে পুলিশ অবরোধীকারীদের উপর চড়াও হয়। সোমবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলাবাজার এলাকার শত্রুমর্দন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম উজির মিয়া (৪৩)। গত ২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।নিহতের স্বজনরা জানান, আনুমানিক ১৩দিন পূর্বে উপজেলার দরগাপাশা গ্রাম থেকে একটি গরু চুরি হয়। এ ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে পাগলা বাজারের পাশর্^বতী শত্রুমর্দন গ্রামের উজির মিয়াকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ, এসআই প্লাটন কুমার সিংহ ও আক্তারুজ্জামান তাকে নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করে।
স্বজনরা আরো জানান, পুলিশ থানায় উজির মিয়াকে এনে মারধর করলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের দিন তাকে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়াতে তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে তিনি মারা যান।এ ঘটনার প্রতিবাদে নিহতের স্বজনরা সকালে উজির মিয়ার লাশ নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের পাগলা এলাকায় মানববন্ধন করেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শেস পর্যন্ত দুপুরের দিকে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সড়ক অবরোধ করা হয়। ফলে অবরোধ দীর্ঘ লাইনে রুপ নিলে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকরা পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এ সময় সেখানে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি ঘটনাস্থলে আসামাত্র উপস্থিত এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় গাড়ির চালক দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে লাশের উপর দিয়ে গাড়ি তুলে দেন। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা আরও ক্ষেপে গিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে ।
নিহতের ছোট ভাই গোলাম সারায়োর মাসুমের অভিযোগ, ‘পুলিশ আমার নির্দোষ ভাইকে আটক করে থানায় নিয়ে বেদড়ক পিটিয়ে আহত হওয়ার কারণেই ভাই মারা গেছেন। আমার আটককৃত ভাই অসুস্থ হওয়ার পর একটা রাতও ঘুমাতে পারেনি।শুধু যন্ত্রণায় চিৎকার করেছে।এদিকে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, বিক্ষোভ থেকে সরে যাওয়ার সময় মরদেহের ওপর দিয়ে যায় ইউএনওর গাড়ি। তার গাড়িচালক গাড়িটি মরদেহের পায়ের ওপর দিয়ে তুলে দেন।এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান তার চালক কর্তৃক লাশের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ার আলিম বলেন, কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কখনো ইচ্ছা করে লাশের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারে না। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত যেই হোক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশ^াস প্রদান করেন তিনি।