সুনামগঞ্জে হিন্দুদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সহ হেফাজতের জঙ্গী সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হেফাজতে ইসলামীর জঙ্গী মৌলবাদীদের সন্ত্রাসীদের সাম্প্রদায়িক হামলার তীব্র নিন্দা করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।আজ (১৮ মার্চ) সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও কার্যনির্বাহী পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হল-গণমাধ্যমে সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দিরাই উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শতাধিক বাড়িতে হামলা, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সংবাদে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধের আত্মস্বীকৃত বিরোধিতাকারী মৌলবাদী দুর্বৃত্তদের এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের আমরা তীব্র নিন্দা করি। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলামের একটি সমাবেশের পর হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জনৈক ঝুমন দাসের ফেইসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেয়ার কারণে হেফাজতের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে, যদিও পুলিস হামলার আগেই ঝুমন দাসকে গ্রেফতার করেছে। এই হামলা থেকে হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদারের বাড়িও রেহাই পায় নি।
‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে হেফাজত নেতারা বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান মিত্র ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করার পাশাপাশি সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে তারা আবারও প্রমাণ করেছেন তাদের শীর্ষ নেতারা ’৭১-এ যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা করতে গিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ করেছিলেন এবং বিভিন্ন ঘাতক বাহিনী গঠন করে ইসলামের নামে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিলেন, এখনও তারা একই অবস্থানে রয়েছেন। মামুনুল হক ও বাবুনগরী সহ হেফাজতে ইসলামের মৌলবাদী সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে কী ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছিলেন তা আমরা ভুলে যাইনি। এখনও তারা ওয়াজের নামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ভিন্নধর্ম ও ভিন্নমতের অনুসারী সহ নির্মূল কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চরম উষ্কানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করে ধর্মের নামে যেভাবে মানুষকে উত্তেজিত করে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন এর জন্য তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কয়েক ডজন মামলা করা যায়।
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংবিধানবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সন্ত্রাসী বক্তব্যের জন্য হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে হেফাজতের সমালোচনাকারীদের যেভাবে গ্রেফতার করছে তা ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে কখনও মেনে নেয়া যায় না।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সহযোগীদের নিন্দনীয় অবস্থান এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদানের প্রেক্ষিতে এসব দলের সকল সমাবেশ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
স্বাক্ষরদাতা-
বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, কথাশিল্পী ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ডাঃ কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অবঃ) আলমগীর সাত্তার বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন (অবঃ) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডাঃ আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, কথাশিল্পী মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, চলচ্চিত্রনির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাঃ ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, এডভোকেট আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, এডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, অধ্যাপক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, সমাজকর্মী চন্দন শীল, এডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, এডভোকেট দীপক ঘোষ, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, এডভোকেট আবদুল মালেক, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, এডভোকেট মালেক শেখ, সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সমাজকর্মী শরিফুল হাসান সুমন প্রমুখ।