সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের ৩ লাখ কৃষক চরম দুশ্চিন্তায়

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ চাষাবাদে খরচ বাড়ায় ‘চরম দুশ্চিন্তায়’ রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ কৃষক। বিশেষ করে সার, বীজ ও কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ, ডিজেলসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এতে বোরো চাষাবাদের খরচও বেড়েছে কৃষকদের।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, গতবছর প্রতি কেয়ার জমিতে উৎপাদন খরচ ছিলো ৫ হাজার টাকা। এ বছর বেড়ে হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এতে কৃষকের ২/৩ হাজার টাকা করে বেশি খরচ হচ্ছে। খরচ যেভাবে বেড়েছে মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে উৎপাদন খরচ উঠবে না।
জেলা কৃষি অফিসের একটি সুত্র জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কৃষক এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করছেন। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মেট্রিক টন। টাকার অংকে যার মূল্য ৪,১১০ কোটি টাকা।
এদিকে ডিজেল, কেরোসিন ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কৃষি উপকরণ কীটনাশক, বীজ, সার এবং শ্রমিকের মজুরি ও যন্ত্রপাতির দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এদিকে গতবছর হাওরে ব্রি-ধান ২৮, ২৯ রোপন করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাই এবছর অধিকাংশ কৃষক ব্রি-৯২, ৯৬, ৮৯, ৮৮ ইত্যাদি জাতের বীজ রোপন করছেন।
জেলার বিশম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিরখলা গ্রামের জনৈক কৃষক বলেন, গতবছর থেকে এবার বোরো ধান চাষাবাদে খরচ অনেক বেশি পড়ছে। করচার হাওরে ১৬ কেয়ার জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করছি। ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর থেকে পানি সেচ ও জমির হালচাষে খরচ বেড়েছে। গতবছর প্রতি ঘণ্টায় পানি দিতে খরচ পড়তো ১০০/১১০ টাকা। এবছর বেড়ে হয়েছে ১৫০/২০০ টাকা। এছাড়া জমি তৈরিতে ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৩০০ টাকা। সার খরচ গতবছর ৯০০/১,০০০ টাকা থাকলেও এবছর ১,৩০০/১,৪০০ টাকা প্রতি বস্তা কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। কেজি প্রতি গতবছরের তুলনায় বেড়েছে ১২ টাকা। বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ৬০০ থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি গতবছর ৪৫০/৫০০ থাকলেও এবছর ৫৫০/৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে গতবছরের তুলনায় প্রতি কেয়ারে ৩,০০০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে কৃষকদের।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের হাছনবাহার গ্রামের একজন কৃষক জানান, গতবছরের দামে কোন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। জমির বীজ থেকে শুরু করে সারসহ সকল কিছুর দাম বেশি। হালচাষ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগে পর্যন্ত খরচ হবে। তেলের (ডিজেল-কেরোসিন) দাম বাড়ায় হালচাষ ও পানি সেচে গতবছরের তুলনায় এবছর ৪০০/৫০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। জমি হালচাষে কেয়ার প্রতি ১৫০০/১৮০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। গতবছর যে বীজ ৫০০ টাকায় কেনা গেছে, এবছর ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সার, কীটনাশক ও মজুরী তো আছেই। ১১ কেয়ার জমিতে বোরো আবাদ করেছি, যদি ফসল ভালো হয় তাহলে খরচটা ওঠবে। এবার খরচ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকই চিন্তায় পড়েছেন।
স্থানীয় বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, খুচরা বাজারে ডিজেল ১২৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে, যা গতবছরের চেয়ে অনেকটা বেশি। পানি সেচে কৃষকদের খরচ বেশি গুণতে হচ্ছে। তেল সংকট থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি সার বিক্রির দোকানের কর্মচারি জানান, বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে, তাই সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার সারের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও কিছু কিছু সারের দাম বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, হাওরে ৯৯ ভাগ ফসল রোপন করা হয়েছে। গতবছর ফসলের ক্ষতি হওয়ায় এবছর নতুন জাতের বীজ রোপন করার পরামর্শ দিয়েছি কৃষকদের। বিএডিসির মাধ্যমে যারা সেচ সংযোগ নিয়েছেন, তাদেরকে সরকার থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এক লাখ কৃষকের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। খরচ বেশি হওয়াতে ভাল জাতের ফসল চাষাবাদ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। এছাড়াও এবার ৩ হাজার হেক্টর জমিকে আবাদযোগ্য করা হয়েছে। খরচ বেশি হওয়ার ব্রি-ধান ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৬ সহ বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল বীজ রোপন করার পরামর্শ দিয়েছি। এতে কৃষকরা ফসল বেশি পাবে, বাড়তি খরচটাও উঠে আসবে।

You might also like