সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও অদৃশ্য শক্তিতে বদলি আদেশ ঠেকালেন

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলা ও একটি থানার ২৫ লাখ মানুষের একমাত্র উন্নত চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল। সেখানে প্রতিদিন গ্রাম অঞ্ছল ও দুর দুরান্ত চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন শত শত অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা।কিন্ত সদর হাসপাতালের নানান অনিয়ম ও হয়রানির চিত্র ফুটে উঠে চোখের সামনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পত্রিকার পাতায়। কর্তৃপক্ষের অনেকের নাম উঠে আসে অনিয়মের অভিযোগে তবে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা আরএমও ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাদ পড়ে বরাবরই এ অভিযোগ উঠেছে। কোন অভিযোগ নেই তার উপর, অদৃশ্য ছায়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি। যেন কিছুই জানেননা? আইন অনুযায়ী তিনি হাসপাতালের প্রধান অন্ধর মহলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা । হাসপাতালের চার দেয়ালের ভিতরে কোন অনিয়ম ও রোগীদের ভোগান্তি ডাক্তার নার্সদের অবেহেলা ও দূর্নীতিসহ সব কিছু তদারকির দায়িত্বসহ দায়বদ্ধতা তারই থাকার কথা। কিন্তু কেন নেই ? কি কারনে অনিয়ম দূর্নীতির ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকেন তিনি? এমন প্রশ্ন এখন রীতিমত জনমনে দেখা দিয়েছে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছরের বেশি একই জায়গা কেউ চাকরী করার বিধান না থাকলেও তার বেলায় সেটি উল্টো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খোজঁনিয়ে জানা যায়, গত ২১শে জুন ২০২০ইং তারিখে পরিচালক প্রশাসন মহা পরিচালক এর পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী,ঢাকা থেকে (ডা: মো: বেলাল হোসেন)এর পাঠানো(৪৫.০১.০০০০.০০৪.০৩.০০১.১৯.১৬৬-৩৯৭)নং স্বারকে তার বদলির আদেশ থাকলেও রাতারাতি সপ্তাহের মধ্যে কোন এক অদৃশ্য ছায়ায় সেটি আবার বহাল হয়ে যায়? যার জন্য জনমনে রিতিমত নানান সন্দেহের দানা বিধেছে। পাশাপাশি অনিয়মের অনুসন্ধান বিষয়ে অনেকের মনে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।কয়েক মাসের অনুসন্ধানে ও সরেজমিনে ঘুরে এবং হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী এবং চিকিৎসা নিতে আসা ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে অনিয়ম দূর্নীতির একটি সিন্ডিকেট বাহিনীর প্রধান সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘ বছর সাধনা করে তৈরি করে রেখেছেন এক বিশাল সিন্ডিকেট বাহিনী। এবং এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সার্টিফিকেট বানিজ্য থেকে শুরু করে সিজার বানিজ্য, বদলি বানিজ্য, ডিউটি না করে সরকারী কোয়াটারে ঘুমিয়ে অনেকের হাজিরা দেখিয়ে বেতন তুলছেন। হাসপাতালে কমিশন বানিজ্য করে তারই চোখের সামনে। সবকিছু দেখেও না দেখার এবং না জানার ভান করেন তিনি? জানাযায়, তার সাথে রয়েছেন হাসপাতালের ও কিছু চিহ্নিত বহিরাগত সহযোগী, দুটি ডায়গনষ্টিক সেন্টারের মালিক, তার আপন দুই ভাইসহ হাসপাতালে মাষ্টারোলে চাকরীর পরিচয় দানকারী কয়েকজন দালালসহ একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ডাক্তার এবং দুইজন নার্সসহ তার বিশাল সিন্ডিকেট বাহিনী। এদের দিয়ে তিনি কোটা বানিজ্য, খাবার বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য করেন এমন অভিযোগ উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে। কিন্ত তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি নয় হাসপাতালের কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে একটি বিশাল দালাল চক্র প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের হাসপাতালে আসা মাত্রই এই চক্রটি রোগীদের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে তদের মনোনীত ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় এবং সেখানে কয়েক হাজার টাকার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সর্বশান্ত করে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা এমন অভিযোগ এখন নৃত্য দিনের রোল মডেল হয়ে দাড়িয়েছে। এবং এদের হাসপাতালের ভিতরে তাহার স্বাক্ষরিত পরিচয় পত্র বহন করতে দেখা যায় অনেককে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন দালালের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমাদের কি দোষ? ডাক্তাররা রোগীদের প্রাইভেটে চিকিৎসা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য লিখে দেন এবং আমাদের প্রতি রোগী বাবদ ৩/৪শত টাকা দেওয়া হয়। আমাদের দালাল বানিয়েছেন হাসপাতালের ডাক্তাররা। এবং এদের সৃষ্টিকারী আরএমও ডাক্তার রফিকুল ইসলাম এমন অভিযোগ জানান দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা আরো বলেন আমরা এসবের কিছুই জানতাম না। তিনি আমাদের দালালি ব্যাবসার সন্ধান দিয়েছেন। তার দালাল বাহিনী সদর হাসপাতালে রয়েছে নিজের চোখে দেখে যান। তবে আমাদের নাম বলবেননা সে আমাদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবে নিজে বাচাঁর জন্য। এমনি ভাবে সাংবাদিকের ক্যামেরায় ভিডিও বক্তব্য দেয় দালালদের কয়েকজন গোপন রাখার শর্তে। এছাড়াও গত ১৭ই জুন তাহিরপুরের একজন মারামারির রোগী সদর হাসপাতালে রক্তাক্ত অবস্থা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গুরুতর কাটা জখম নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তার মাথায় ৭টি সেলাই হাতের তিন আঙ্গুল কাটা হাতে ডেগারের ঘা এক পাশ থেকে অন্য পাশে ছিদ্র, পায়ে গুরুতর কাটা যা চারটি সেলাই সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম থাকা সত্ত্বেও তার এমসি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেমপুল। যেখানে ডাক্তার বিশ্বজিৎ গোলদার আরএমওসহ ডাক্তার মারুফা আক্তারের স্বাক্ষর রয়েছে। ভোক্তভোগীরা জানান, ঘটনার সাথে সাথে তাহিরপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় রোগীর চিকিৎসা করানো হয় এবং মামলা রেকর্ড করা হয়েছে কিন্তু ডাক্তারের এমন মনগড়া রিপোর্টের কারনে আদালতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এছাড়াও আরও জান যায়, করোনা কালিন সময়ে সরকার নার্স ও ডাক্তারদের জন্য আলাদা ভাবে খাবারের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেখানে নীতিমালা অনুযায়ী খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত করার বিধান থাকলেও অথবা টেন্ডারের মাধ্যমে টিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার নীতিমালা অমান্য করে অদৃশ্য ক্ষমতার বলে সিন্ডিকেট দিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে রান্না করিয়ে নিন্ম মানের নাম মাত্র খাবার পরিবেশন করিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা এমন অভিযোগও রয়েছে তার সিন্ডিকেটের উপর। এছাড়াও ইতি মধ্যে আরএমও এর দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি অল্প সময়ের মধ্যে পৌর শহরে কোটি টাকার বিশাল বহুল বাড়ি তৈরি করেছেন যা মানুষের চোখে ভাবনার সৃষ্টি করেছে? সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিরব অনুসন্ধানের বেরিয়ে আসবে এমনটি দাবী জানান একাধিক সূত্র। এছাড়াও জানা যায়, হাসপাতালের অনিয়ম দূর্নীতি গোপন রাখার প্রধান কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কোন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগের কথা বললে তারা লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন ভোক্তভোগীদের। এবং নিজেদের অভিযোগ নিজেরাই তদন্ত করেন?

এছাড়াও নানা অভিযোগের যেন শেষ নেই হাসপাতালে পুলিশের ডিএসবি শাখায় খোজঁ নিলে পাওয়া যাবে এমন দাবীও জানান অনেকে। এসমস্ত অনিয়ম দূর্নীতির হাত থেকে সদর হাসপাতালকে রক্ষা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে গোপনে তদন্ত করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে কাজ করবেন এমনটাই দাবী ভোক্তভোগী সাধারণ মানুষের। এব্যপারে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য চাইলে তালবাহানা শুরু করেন এবং আজ কাল করে সময় কালক্ষেপন করার কারনে সিন্ডিকেটে জড়িত অনেকের বক্তব্য নেওয়া সম্বব হয়নি। এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের আর এমও ডা: রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে জানান হাসপাতলের সকল কিছু তদারকি করেন সিভিল সার্জন। কোন তথ্য জানার থাকলে সিভিল সার্জনের কাছে জানার জন্য বলেন।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন মো: শামসউদ্দিন এর কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনিও সাংবাদিকদের কাছে পুরানো দিনের মতো একই বক্তব্য দেন তিনি বলেন আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করব। সদর হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার রফিকুল ইসলামের বদলি বহালের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান যেখান থেকে বদলির আদেশ এসেছিল সেখান থেকেই আবার বদলি বহাল রাখার আদেশ এসেছে এটা উধর্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন বলে প্রতিবেদক কে জানান। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমার কাছে জানতে চাইলে তিনি মাননীয় জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছ থেকে জানার পরামর্শ দেন।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের বদলির ব্যাপারে¡ সিভিল সার্জন রয়েছেন উনি ভাল বলতে পারবেন।এ ব্যপারে সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এড. পীর ফজলুর রহমান মিছবার কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসভি না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

You might also like