সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কারসাজি: সিলেটে সাবেক সচিবের ২ কোটি  টাকার জমি অন্যের নামে!

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেট নগরির শাহজালাল উপশহরে সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও প্রখ্যাত রম্য লেখক আতাউর রহমানের ২ কোটি টাকা মূল্যের জমি নিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা নিজ হাতে রায় পরিবর্তন করে ওই জমি আরেক জনের নামে লিখে দিয়েছেন। খোদ সেটেলমেন্ট বিভাগের তদন্তেই জালিয়াতির এই কারসাজি বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত মহিতোষ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোমধ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
প্লট পেয়েছিলেন ’৯৪ সালে
১৯৯৪ সালের ২১ মার্চ শাহজালাল হাউজিং এস্টেট সিলেটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহজালাল উপশহরের জে ব্লকের ৪নং রোডে ৫ কাটা (সাড়ে ৮ শতক সমপরিমাণ) ২৯ নম্বর প্লটটি ৯৯ বছরের জন্যে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আবুল খায়রাতের পুত্র আতাউর রহমানের অনুকূলে ইজারা দেন। ২০০৭ সালের ১৩ মে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সিলেট উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী-১ মো. মুনছুর আলী প্লটটির দখলপত্র আতাউর রহমানকে সমঝে দেন। ২০০৭ সালের ২৮ জুন প্লটটি আতাউর রহমানের নামে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে কর্তৃপক্ষের চিঠির প্রেক্ষিতে সিলেট সদরের সাব-রেজিস্টারও এ মর্মে একটি দলিল রেজিস্ট্রি করেন (দলিল নং-৯১৩০/২০০৭)। প্লটের মালিক আতাউর রহমান বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হিসেবে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি এক সময় সিলেটের মদনমোহন কলেজ ও এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। একজন রম্য লেখক হিসেবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও তার খ্যাতি ছিল।
অতিরিক্ত সচিবের মামলা এবং …..
মাঠপর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চলাকালে প্লটটি নিজের নামে রেকর্ড করাতে পারেননি আতাউর রহমান। তিনি ওই সময়ে সরকারি চাকরির সুবাদে অন্যত্র কর্মরত ছিলেন। মাঠ জরিপে এসএ ১২৫ ও ১২৬ নং দাগ হতে সৃষ্ট আরএস ৪১২২ নং দাগে ৮ শতক ২৬ পয়েন্ট ভূমি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও জনৈক তারা মিয়া গংদের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে এ ভূমি তার নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্যে ১১ নং আরএস ডিপি খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩৬০ নং আপত্তি এবং ১৭৪৮ নং আরএস খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক তারা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে ৩৫৯ নং আপত্তি মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আপত্তি অফিসার মামলা দুটি খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে ৩১ বিধি অনুযায়ী খারিজ হওয়া দুটি মামলার বিরুদ্ধে আপীল করেন। আপীল মামলা নম্বর-১৩১৬৭/২০১৬। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ও আপীল অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এই আপীল মামলার শুনানি করেন। শুনানী শেষে ওই দিনই রায় ঘোষণা করে আতাউর রহমানের নামে ওই ভূমির রেকর্ড দিয়ে মহিতোষ চন্দ্র দাস নিজে স্বাক্ষর করেন। তাৎক্ষণিকভাবে রায় অনুযায়ী ৪১০৩ নং খতিয়ানে আতাউর রহমানের নামে রেকর্ড করে পর্চা দেন। রেকর্ড সংশোধন হয়ে নিজ নামে আপীল অফিসার স্বাক্ষরিত পর্চা সরবরাহ করায় ‘টেনশন’ মুক্ত হন এক সময়ের ডাকসাইটে আমলা আতাউর রহমান।
আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেভাবে
অনেক দামী সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধন করে বেশ ভালোই ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে পুরো পৃথিবীর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। হঠাৎ করেই মহামারী করোনা ভাইরাস শুরু হয়। মরণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। কোভিড-১৯ এর সাথে যুদ্ধ করে ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী নাছিমা আক্তার চৌধুরী তার ছোট বোনের স্বামী জুনেদ আহমদকে আমমোক্তার নিযুক্ত করেন। তার মৃত্যুর বেশ কিছু দিন পর জুনেদ আহমদ উপশহরস্থ সিলেট সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে সাদিপুর ২য় খন্ড মৌজার আরএস ৪১০৩ নম্বর খতিয়ানের একটি মুদ্রিত কপি সংগ্রহ করেন। মুদ্রিত কপি দেখে যেন তার উপরে আকাশ ভেঙে পড়ে। আতাউর রহমানকে হাতে লিখে মহিতোষ চন্দ্র দাস যে খতিয়ান দিয়েছিলেন মুদ্রিত কপিতে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। খতিয়ানে এই ভূমির মালিক হিসেবে জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলা গ্রামের হাজী আব্দুল বারির পুত্র আব্দুস শহীদ চৌধুরীর নাম মুদ্রিত রয়েছে।
একমাত্র বাদী থাকার পরেও
সাবেক অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমানের করা ১৩১৬৭ নম্বর আপীল মামলায় তিনিই একমাত্র বাদী। ২য় পক্ষ হিসেবে ১ নম্বরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, ২ নম্বরে তারা মিয়া, ৩ নম্বরে জমিলা খাতুন ও ৪ নম্বরে রেবু মিয়াকে বিবাদি করা হয়েছিল। শেষের ৩ জনই নগরির ছৈদানীবাগের মোদাছির আলীর সন্তান। বাদি-বিবাদির নামসহ নোটিশও জারি করেন আপীল অফিসার। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর আপীল শুনানি হয়। একমাত্র বাদি আপীল করার পরেও এতে বাদির কলামে আব্দুস শহীদ চৌধুরী নামের আরেকজনের নাম লেখা হয়। সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে ২য় বাদির নাম লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৩০ ধারার আপত্তি মামলায় আব্দুস শহীদ চৌধুরী পক্ষভুক্ত না হয়ে তিনি কোন আইনে ৩১ ধারার আপীলে পক্ষভুক্ত হলেন এ নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। বিষয়টি সেটেলমেন্ট ও ফৌজদারি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
রায় পরিবর্তনের কারসাজি যেভাবে
সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মহিতোষ চন্দ্র দাস ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর সাবেক অতিরিক্ত সচিবের করা আপীল মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রেকর্ড সংশোধন করে আতাউর রহমানকে পর্চা সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে রায়টি পরিবর্তন করা হয়। মামলার নথিপত্রে রায় পরিবর্তন করার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে। রায়ের মধ্যে একাধিকবার বাদি আতাউর রহমানকে ৯১৩০/২০০৭ নং রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে মালিক বলা হলেও আদেশের মধ্যে কোথাও আব্দুস শহীদ চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। অথচ রায়ের এক জায়গায় আপীলকারী শব্দের পূর্বে ক্রস(দ্ধ) চিহ্ন দ্বারা লাইনের উপরে অপেক্ষাকৃত ছোট ফন্টের অক্ষর দ্বারা ‘২নং’ লেখা হয়। বাক্য সমাপ্ত করে দাড়ি (।) চিহ্ন দেয়ার পর লেখা হয় ‘এবং ১ নং আপীলকারী ২ নং আপীলকারীর নিকট বিরোধীয় ভূমি হস্তান্তর করেন’। কিন্তু এতো দামী সম্পত্তি দলিলমূলে না মৌখিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে আপীল অফিসার রায়ের কোথাও এটি উল্লেখ করেননি।
অধিদপ্তরে অভিযোগ
রায় পরিবর্তন করে অন্যের নামে ভূমি লিখে দেয়ার ঘটনায় আতাউর রহমানের ভায়রা ভাই জুনেদ আহমদ চলতি বছরের ১৬ জুন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর ২৫ জুলাই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মুর্শিদুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্যে সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারকে পত্র দেন।
তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ
অধিদপ্তরের নির্দেশে বিষয়টির তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে সিলেট সদর উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. বদরুল আলম চৌধুরী ১৭ আগস্ট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারকে পত্র দিয়ে বলেন, প্রতিবাদীপক্ষ তার পরিচিত। বিষয়টি দ্রুত প্রতিবেদনের স্বার্থে তার পরিবর্তে অন্য একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার আবেদন করেন। পরে সিলেট সদরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. রহিম উল্লাহকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তার দীর্ঘ তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। বেরিয়ে আসে জাল-জালিয়াতির লোমহর্ষক কাহিনীও। তদন্ত শেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর ৭ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালকের নিজ নামীয় ভূমি কোনো আপত্তি বা মামলা ছাড়াই রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনাও দেয়া হয়। প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়, ‘নালিশী ভূমি সংক্রান্ত ১৩১৬৭/২০১৬ নং আপীল মামলার রায় প্রদান করেছেন আপীল অফিসার ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস। আদেশ পত্রের রায় তিনি নিজ হাতে পরিবর্তন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়’।
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনে জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত সচিবের জমির মামলার রায় পরিবর্তন করে অন্যের নামে দেয়ার বর্ণনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘আবেদনকারী পক্ষের অনুকূলে এ মৌজার এসএ ১২৫ ও ১২৬ নং দাগ হতে সৃষ্ট আরএস ৪১২২ নং দাগে ০.০৮২৬ শতাংশ জমি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ হতে ৯৯ বছরের স্থায়ী লিজ সূত্রে মালিকানা প্রাপ্ত হন। মাঠ ও আপত্তি স্তরে নালিশী আবেদনকারী রেকর্ড করতে না পারায় ১৩১৬৭/২০১৬ নং আপীল করেন। যে ৩৫৯ নং আপত্তি মামলার বিপরীতে ১৩১৬৭/২০১৬ নং আপীল মামলা দায়ের হয়, ওই আপত্তি মামলায় প্রতিপক্ষ বলে কোন পক্ষ ছিলেন না। তথাপি আপীল স্তরে আপীল মামলায় প্রতিপক্ষকে ২নং বাদী হিসেবেভুক্ত করতঃ আপীলের রায়ের বিভিন্ন অংশে ‘অবৈধ শব্দ ও লাইন’ সংযোজন করে রায় পরিবর্তন করা হয়েছে। আপীল স্তরে ২নং বাদী হিসেবে প্রতিপক্ষকে ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোন আবেদন, আদেশনামা বা আপীলকারীর সম্মতি নেই। বর্তমানে সৃজিত ডিপি ৪১০৩ নং খতিয়ান পরীক্ষান্তে খতিয়ানটিও পরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করতঃ আপীল মামলার রায় ও রেকর্ড প্রণয়ন তঞ্চকতার সামিল’। প্রতিবেদনে মতামত দিয়ে বলা হয়, ‘আপীল অফিসার জনাব মহিতোষ চন্দ্র দাস (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) দায়ী কর্মকর্তা হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে’।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাতিমনগর উত্তর মৌজার প্রায় ২৭ একর সরকারি খাস জমি ভূয়া কবুলিয়াতের মাধ্যমে মালিকানায় রেকর্ড করে দেন আপীল অফিসার মহিতোষ দাস। গোলাপগঞ্জের এ্যসি ল্যান্ড ইতোমধ্যে এ ভূমি উদ্ধারে সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট আবেদন করেছেন।
শহীদ চৌধুরীর পুত্র যা বলেন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস শহীদ চৌধুরীর পুত্র আলবাব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্টে একমাস আগে আমরা রিট করেছি। হাইকোর্ট এ বিষয়ে শুনানির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। কপিটা তার (সেটেলমেন্ট অফিসারের) কাছে দিয়েছি। জমিটা কিভাবে পেলেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটাতো আপনাকে বলে লাভ নেই। এটি অনেক লম্বা ঘটনা। ফোনে বলা যাবে না। আগেরও মামলা আছে। বলতে হলে ২ ঘন্টা লাগবে।’
মহিতোষ চন্দ্র দাসের মোবাইল বন্ধ
এ সকল বিষয়ে জানতে চেয়ে মহিতোষ চন্দ্র দাসের ৩টি মোবাইলে কল দেয়া হলে সব ক’টি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জমি চাই, বিচারও চাই ৃ.
সাবেক অতিরিক্ত সচিবের ভায়রা জুনেদ আহমদ এ বিষয়ে বলেন, একজন অতিরিক্ত সচিবের ভূমি এভাবে কোনো মামলা ছাড়াই আরেকজনের নামে দেয়ার ঘটনা আর ঘটেছে বলে শুনিনি। বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু বাস্তবে তাই হয়েছে। রায় পরিবর্তন করে এই জমি আরেকজনকে দেয়া হয়েছে। তদন্তে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা আতাউর রহমান সাহেবের জমি চাই,পাশাপাশি দায়ী কর্মকর্তার বিচারও চাই। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্লট রেজিস্ট্রির পর আতাউর রহমান বাউন্ডারি নির্মাণ করেন। প্লট আমাদের দখলে আছে।
জবাবদিহিতা না থাকায় বেপরোয়া
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। আতাউর রহমান একজন নামকরা লেখক ও দাপুটে আমলা ছিলেন। তার জমি যদি এভাবে জালিয়াতি করে অন্যজনকে দেয়া হয়, এতে অনুধাবন করা যায় আর কতো মানুষ এদের নিকট এভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। সঠিক তদন্ত হলে এরকম অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ভবিষ্যতে জালিয়াতি বন্ধ করতে হলে এ ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার যা বলেন,
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপ-সচিব) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, শাহজালাল উপশহরের একটি প্লটের রায় টেম্পারিং বা পরিবর্তন করে কোনো আপত্তি মামলা ছাড়াই আরেকজনের নামে রেকর্ড করে দেয়া হয়েছে। এই জমির প্রকৃত মালিক হলেন আতাউর রহমান। আপীল অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস জালিয়াতির মাধ্যমে এটি করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন অধিদপ্তর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গোলাপগঞ্জের হাতিমনগর উত্তর মৌজার সরকারি খাস জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করে দেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ার পরপরই আমি এই জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণ করি। গোলাপগঞ্জের এ্যসি ল্যান্ডকে দিয়ে আবেদনও করিয়েছি। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।
অপরাধ করলে কোনো ছাড় নেই

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এ টি এম নাসির মিয়া (যুগ্ম-সচিব) এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো কর্মকর্তা যদি জালিয়াতি করে থাকে এবং তদন্তে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সে কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না। অবসরে গেলেও ছাড় নেই। আমরা মামলা করার জন্যে দুদকে পাঠাব। এমন জালিয়াতি-অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করতে দুদকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

You might also like