স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাহজাহান সিরাজ আর নেই
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর এভার হাসপাতালে (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর খান এ তথ্য জানিয়েছেন। শায়রুল জানান, আগামীকাল বুধবার (১৫ জুলাই) বনানী কবরস্থানে শাহজাহান সিরাজকে সমাহিত করা হবে।তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন ফখরুল।
শাহজাহান সিরাজ ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে আব্দুল গণি মিয়া ও রহিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেই সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র-রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি করটিয়া সা’দাত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’র (যার অন্য নাম নিউক্লিয়াস) সক্রিয় কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।
শাহজাহান সিরাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তিনি সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব প্রভৃতি ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব। সেখান থেকেই পরদিন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পরিকল্পনা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্রসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন শাহজাহান সিরাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর শাহজাহান সিরাজ সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন শাহজাহান সিরাজ। পরে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। জাসদের মনোনয়নে তিনবার তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের শেষ পর্যায়ের দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী, সাবেক ছাত্রনেত্রী রাবেয়া সিরাজের সঙ্গে ১৯৭২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাহজাহান সিরাজ। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ একজন শিক্ষিকা এবং রাজনীতিবিদ।