৫৩ তম বার্ষিকীতে নির্মূল কমিটির দাবি: স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ আজ ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে স্বাধীনতার ঘোষাণাপত্রের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র: স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের সৃষ্টিতত্ত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্ব সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি।

আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সাব-সেক্টর কমান্ডার ও মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের গার্ড অব অনার প্রদানকারী সাবেক এসপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।সভা সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি বলেন, ‘’৭১-এর ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ১৭ এপ্রিল। সেই অনাড়ম্বর আন্তরিক ভালোবাসাপূর্ণ শান্ত সুনিবিড় পরিবেশে উপস্থিত ছিলেন দেশী বিদেশী বহু নামি সাংবাদিক। সাক্ষী হিসেবে ছিলেন হাজারো স্থানীয় মানুষ। সনাতন ধর্মালম্বী একজনের বাড়ি থেকে আনা হারমোনিয়ামে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন ভবেরপাড়ার ছেলেরাই। গার্ড অব অনার প্রদান করেন স্থানীয় আনসার ও পুলিশের সদস্যবৃন্দ। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমেদ। এভাবেই সকল ধর্মের মানুষের একত্রিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে বঙ্গন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে করা হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি। তিনি তখনও পাকিস্তানীদের হাতে বন্দি। তাই উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন তাজউদ্দীন আহমদ। একই সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো মন্ত্রী পরিষদ সদস্যদের। ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন, অধ্যাপক ইউসুফ আলী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং হাজারো জনতার সামনে বক্তব্য রাখলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করলেন ‘মুজিবনগর’।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের অনেকে কিছুই জানে না। তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালের এই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস জানাতে হবে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত না করা হলে আগামী প্রজন্মকে সচেতন করা যাবে না।

‘দেশপ্রেম কোন বিমূর্ত বিষয় নয়। প্রতিদিনের কাজ ও দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করার নাম হচ্ছে দেশপ্রেম। আমরা কোথা থেকে শুরু করেছি এবং দেশকে কোথায় রেখে যাচ্ছি এই উত্তরণই হচ্ছে দেশপ্রেম।’

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭১-এর ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করা হয়, যার খসড়া রচনা করেছিলেন ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় সংসদের সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মূল সংবিধান কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ই ছিল কার্যত বাংলাদেশের সংবিধান। যে কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এই ঘোষণাপত্রকে বলা হয়েছে সংবিধানের ‘জেনেসিস’ বা সৃষ্টিতত্ত্ব।’

তিনি বলেন, ‘নির্মূল কমিটি গত কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ’৭১-এর গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত ইতিহাস অস্বীকারকারীদের শাস্তির জন্য ইউরোপের ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল এ্যাক্ট’-এর মতো কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে। আমরা আশা করব ’৭১-এর গণহত্যার সরকারি স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দ্রুত এই আইন পাশ করবে।’ তিনি ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান।

You might also like