হঠাৎ করে চুরি বেড়ে গেছে সিলেট নগরীর বাসা-বাড়িতে

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ নগরির বাসা-বাড়িতে হঠাৎ করেই চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি নগরির কয়েকটি বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। বাসা-বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ও দরজার তালা ভেঙে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, ট্যাব ও মোবাইল ফোনসেট লুটে নিচ্ছে চোর দল। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, থানায় অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। তবে, কোতয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ চুরি বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, চুরির ঘটনাগুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন।গত ২৬ অক্টোবর লালাদিঘীরপাড় এলাকার গৃহিনী শাহানা আক্তার ও সাংবাদিক আশরাফুল কবীর দম্পতির বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। চোর দল ভেতরে প্রবেশ করে ২১ লাখ টাকা মূল্যের ২৮ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এর কিছুদির আগে একই এলাকার মছব্বির আলীর বাসায়ও চুরির ঘটনা ঘটে।

এর কয়েকদিন আগে লামাবাজার এলাকার একটি টাওয়ারের বাসিন্দা ডা. প্রসুন কান্তি দেবের বাসায় দুর্বৃত্তরা হানা দেয়। এ ঘটনায় তিনি কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। কিছুদিনের ব্যবধানে একইভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে নিরাময় আবাসিক এলাকায়, ডা. নীলোৎপল লস্কর সানি নামে আরেকজন চিকিৎসকের বাসায়। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লালাদিঘীরপার কলকাকলী আবাসিক এলাকার (৩৬/১) তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বাস করেন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন (ইমজা)-এর সাবেক সভাপতি আশরাফুল কবীর দম্পতি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে তারা বের হন। পরেরদিন আবার বাসায় ফিরে আসেন। বাসায় এসেও চুরির কোনো আলামত বুঝতে পারেননি। এমন কি দিন গিয়ে রাত গড়ালেও চুরির বিষয়টি চোখে পড়েনি। পরের দিন সকালে স্টিলের আলমিরায় প্রয়োজনীয় কিছু খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ে চুরির বিষয়টি। তারা দেখতে পান স্বর্ণ ছাড়া বাসার আর কোন জিনিস খোয়া যায়নি। তাদের ঘরের তালা অক্ষত থাকলেও চোর বাসার বেলকনি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তার বাসা পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় আশরাফুল কবীর কোতয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন।আলাপ করে জানা গেছে, লামাবাজার বিথীকা আবাসিক এলাকার মাধবীলতা টাওয়ারে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ডা. প্রসুন কান্তি দেব। গত ২৯ সেপ্টেম্বর এই চিকিৎসকের বাসাতেও হানা দেয় চোর দল। তিনি জানান, ওইদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখেন, পাশের কক্ষের গ্রিল কাটা। কাপড় এলোমেলো। তবে মূলবান কিছু নিতে না পারলেও চোর দল কিছু যে খোঁজাখুঁজি করেছে, সেটি স্পষ্ট।’ পরে এ ঘটনায় তিনি কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এ সবক’টি চুরির ঘটনা ঘটেছে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক জানান, ‘অভিভাবকদের সচেতন করতে আমরা সবাইকে নিয়ে বসবো। আইনের পাশাপাশি আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে।’ লামাবাজার নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট আইনজীবী ও মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ই ইউ শহিদুল ইসলাম শাহীন জানান, ‘আমার নিজের বাসাসহ আশপাশ এলাকার মধ্যে কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ দিন আগে লামাবাজার মদন মোহন কলেজের তিন মন্দিরের পূজামন্ডপে প্রবেশ করে চোরেরা স্বর্ণলংকার নিয়ে যায়। একই সপ্তাহে নয়াপাড়া এলাকার নাইস গার্ডেন টাওয়ারের বিপরীতে একটি বাসায়ও চুরির খবর আমার কাছে আসে। আমি বিষয়টি পুলিশকে অবগত করতে বলেছি।’ এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের অনেক সময় গ্রেফতারও করে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার তারা জেল থেকে বেরিয়ে আসে। জুলাই মাসে আমার বাসাতেও বড় ধরণের চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখনো অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি। প্রতিটি চুরির ঘটনায় আলাদা আলাদা অভিযোগপত্রের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।’
লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাশেদ জানান, চুরির ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে আমরা কয়েকটি বাসায় ছুটে গিয়েছি। চুরি করা মালপত্র উদ্ধার ও চোর ধরার জন্য অভিযান চলছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, লালাদিঘীরপাড়ে সাংবাদিক আশরাফুল কবীরের বাসায় স্বর্ণলংকার চুরির ঘটনার একদিন পরেই জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে রানা এবং হৃদয়। জড়িত অন্যদের আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একইভাবে নিরাময় এলাকায় ডা. সানির বাসায় চুরির খবর পেয়ে আমরা পরিদর্শন করেছি।কোতয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, ‘চুরি বেড়েছে, একথা সত্য নয়। কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে যে সকল বাসা-বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটছে, অধিকাংশ পরিবারই ঘটনার সময় বাসায় ছিলেন না। এজন্য পরিবারগুলোকে এসব ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’

You might also like