হঠাৎ করে জাল টাকার কারবারিরা সিলেটে বেপরোয়া!
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে জাল টাকার কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওদের নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হলেও সবাইকে আটক কিংবা বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এই চক্র আগে কেবল নগরকেন্দ্রিক সক্রিয় থাকলেও ইদানিং ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলাপর্যায়েও। গত কয়েকদিনে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌ’বাজার থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে জাল টাকার ৪ কারবারি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়ে বিশেষ তৎপরতা চলছে। জাল টাকার কারবারিদের ঘিরে ওদের অপতৎপরতা নিস্ক্রিয় বা সমুলে উৎপাটনের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই কঠোর অভিযান চালিয়ে এমন কারবারিদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরার্মশ দিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম ও জাল নোটসহ দু’জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকার অবিকল নকল নোট, প্রতি পাতায় ৪টি করে ১২০ পাতায় মোট ৪৮০টি এক হাজার টাকার নোট যার মূল্যমান ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামের মৃত শরিফ উল্লাহর পুত্র আখলিছ মিয়া ও শেরপুর জেলার মৃত তাইকেন মরং এর স্ত্রী শিলা রানী রিচিলকে পুলিশ মালামালসহ গ্রেফতার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান জানান, জাল নোটসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আটককৃতদের আদালতে পাঠিয়েছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার এলাকা থেকে জাল টাকার নোটসহ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বড়কাপন গ্রামের রুজেল মিয়াকে (২৭) আটক করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ১ হাজার করে ৫টি জাল নোট জব্দ করা হয়।
জাল টাকার বিস্তার আগের চেয়ে বেশী বেড়েছে মন্তব্য করে নগরি ও জেলার একাধিক ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে জানান, অনেকেই নতুন টাকা দিচ্ছেন। প্রতিটি নোট সাধারণভাবে দেখে নেয়া হয়। কিন্তু জাল নোটগুলো এতোই নিখুঁত যা শনাক্ত করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া কয়েকটি আসল নোটের সঙ্গে একটি জাল নোট দিলে তাও দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ ওই টাকা ব্যাংকে জমা দিতে গেলেই ধরা পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাল টাকার নোট তৈরি ও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা পেশাদার। তারা জাল টাকার নোট তৈরি করে, অন্যদিকে জাল টাকার ব্যবসাও করে। চক্রের অনেক সদস্য এ ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত। স্বল্প বিনিয়োগে বেশি টাকা আয় করা যায় বলেই তারা অপরাধপ্রবণ এ পেশা ছাড়তে পারছে না।
এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রুস্তমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও ভারতীয় রুপিসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯। গ্রেফতার যুগেন্দ্র মল্লিক (৪১) শ্রীমঙ্গল থানার রুস্তমপুর এলাকার বাসিন্দা। এ সময় উদ্ধার করা হয় ভারতীয় ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ’ রুপি এবং বাংলাদেশি ৬৯ লাখ ৫২ হাজার ৯শ’ টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ সর্বমোট ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ৪শ’ রুপি ও টাকার জাল নোট।
র্যাবের এসএসপি মো. মশিহুর রহমান সোহেল জানান, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরি ও প্রতারণার আশ্রয়ে তা বাজারজাত করে আসছে। এই চক্রের সদস্যরা জাল টাকা তৈরি করে আসল টাকার ভেতর জাল টাকা মিলিয়ে লেনদেনের মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষকে নিঃস্ব করছে। এ অপরাধ ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। সর্বশেষ এরই ধারাবাহিকতায় জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের এক সদস্যকে শ্রীমঙ্গলের রুস্তমপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এসএমপি’র মিডিয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জাল টাকার বিস্তার রোধে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে। যেহেতু সামনে রোজা ও ঈদ তাই আমাদের বাড়তি নজরদারি রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই এই চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। অভিযান অব্যাহত আছে এবং নিয়মিত চলবে।