হবিগঞ্জের লাখাইয়ে কাবিখা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত

সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে `পুকুর চুরির’ অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলায় বরাদ্দ এসেছিল ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল। এর ভিত্তিতে ৯টি প্রকল্প নেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বিনিময়ে বরাদ্দ বাবদ প্রায় ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে ৮টি প্রকল্পেই কাজের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
লাখাই থেকে সংবাদদাতা জানান, নীতিমালা অনুযায়ী কাবিখা কর্মসূচি (সাধারণ) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ-সভাপতি এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সদস্য-সচিব। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনও একে অপরের ওপর দায় চাপিয়েছেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি, কোনো অনিয়ম হয়নি কাজে।
কাবিখার টাকা চুরির বিষয়টি যেভাবে সামনে আসেঃ
উপজেলার ২০২২-২৩ অর্থবছরের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির বিশেষ প্রকল্পে (কাবিখা) ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। যার মূল্য ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু নামেমাত্র হাওরের কিছু কিছু জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ করে ইতিমধ্যেই টাকা উত্তোলনও শেষ করেন ৪ ইউপি চেয়ারম্যান। প্রকল্পের উল্লেখিত অধিকাংশ স্থানেই কোনো কাজ হয়নি। তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলী নুরের আমলেই এ প্রকল্পের সব অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর পিআইও আলী নূর মানিকগঞ্জ উপজেলায় বদলী হয়ে যান। এরআগেই এ প্রকল্পের সব নথিপত্র সরিয়ে রেখে টাকা হজম করে নেন আত্মসাতকারীরা। তবে বিপত্তি ঘটে সম্প্রতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রাকিব যোগদানের পর। তিনি এ প্রকল্পের ফাইল দেখতে চাইলে অফিস সহকারীরা প্রথমে ফাইল গায়েব করে ফেলেন। পরে ঊর্ধ্বতন মহলে জানাজানি হলে অনেক নাটকীয়তার পর ফাইলটির হদিস মেলে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসেই এ পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। উপজেলা অফিস থেকে এই কাজের সঠিক তদারকি করা হয়নি। কয়েকদিন হাওরের পাশের জায়গা থেকে নামেমাত্র মাটি ভরাট করে তারা চলে যান।
অর্থ আত্মসাতে বিষয়ে বাস্তবে যা পাওয়া গেলঃ
ইউএনও এবং পিআইও কার্যালয়ে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বামৈ, মুড়িয়াউক, করাব ও বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ কাবিখার এ বিশেষ প্রকল্পের ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পায়। কিন্তু আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বাকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা। তবে চেয়ারম্যানদের দাবি, নামেমাত্র প্রকল্প তাদের নামে হলেও কাজ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বিশেষ প্রকল্পে ৮টি গ্রামীণ সড়ক ও একটি মাঠ তৈরির জন্য ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
একে অন্যকে দোষারোপঃ
বামৈ ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন ফুরুক জানান, কাবিখার বিশেষ প্রকল্পের বরাদ্দ আমার ইউনিয়ন পেলেও সে কাজ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের লোকজন। কী কাজ হয়েছে তা আমি নিজেও জানি না, তবে এরই মধ্যে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। যথাযথভাবে হাওরের রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ করেছি। তবে এই কাজের বিপরীতে কোনো ধরণের নথিপত্র আমার কাছে নেই।
লাখাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রাকিব জানান, প্রকল্পে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হলে আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ জানান, এ কাজের দায়-দায়িত্ব ইউএনও এবং পিআইওর। তাদের তদারকিতেই কাজ হয়েছে। তারা স্বাক্ষর দেয়ার পর আমি শুধু বিলে স্বাক্ষর দিয়েছি। তবে কাজ সঠিকভাবেই হয়েছে বলে আমি মনে করি।
অন্যদিকে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা জানান, পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তারাই উত্তর দেবেন। তবে আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

You might also like