২০২৪ সালে ৭টি কূপ খনন ও ৭টি ওয়ার্ক ওভার করবে এসজিএফএল

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর এমডি মোঃ মিজানুর রহমান। একই বছরের জুনের মধ্যে ৪০-৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের প্রত্যাশা তাঁর।
২৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এসজিএফএল আয়োজিত অংশীজন সভায় তিনি এ তথ্য জানান। সংস্কার ও সুশাসনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতীয় শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনা ২০২৩-২৪ এর আওতায় এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন-পেট্রো বাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আলতাফ হোসেন।
গ্যাস ফিল্ডের এমডি জানান, পেট্রোবাংলা সারাদেশে ৩৬টি কূপ খননের মাধ্যমে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করতে চায়। এরমধ্যে সিলেট অঞ্চলে গ্যাস ৭টি কূপ খনন ও ৭টি ওয়ার্ক ওভারের মাধ্যমে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪ নভেম্বর কৈলাশটিলা-২ ওয়ার্ক ওভারের কাজ উদ্বোধন হয় এবং ওই কূপ থেকে প্রতিদিন ৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ৮৮ ব্যারেল কনডেনশেড উৎপাদন হচ্ছে।
প্রকৌশলী মিজান আরো বলেন, রশিদপুর-২ নম্বর কূপে ওয়ার্ক ওভার কাজ চলছে। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে এই কূপের নতুন একটি লেয়ার থেকে উৎপাদন শুরু করা যাবে।
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে কৈলাশটিলা ৮নং কূপে খনন কাজ শুরু হবে এবং এখান থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, রশীদপুর-৯নং কূপে পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এই কূপ থেকে ৮-১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হতে পারে। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে ৪০-৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হতে পারে।
নতুন গ্যাস কূপের আশা
গ্যাসফিল্ড এমডি আরো বলেন, বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের নতুন কূপ খননের থ্রিডি সার্ভে চলছে। বিয়ানীবাজার ৩ ও ৪ নামে নতুন দু’টি কূপ খনন হবে। গোলাপগঞ্জ ১৩ ও ১৪-এর থ্রিডি সার্ভের রিপোর্ট পেলে আশা করছি, নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হবে। এমডি বলেন, আমরা গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট উৎপাদন করছি। এছাড়া, জৈন্তাপুরের ঢুপিটিলায় নতুন গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ওই কূপে গ্যাসের পাশাপাশি তেলেরও সন্ধান চালানো হবে।
৪/৫ মাসের মধ্যে হরিপুরে তেল উত্তোলনের বিষয়ে মূল্যায়ন
গ্যাসফিল্ড এমডি বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর হরিপুর ১০নং কূপে তেলের সন্ধান মেলে। তেলের মান নির্ণয়ের জন্য ইআরএল (এনার্জি রেটিং লেভেল) এবং বুয়েটে স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। নিজস্ব ল্যাবেও টেস্ট করা হয়েছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তেলের বিষয়টি মূল্যায়ন করতে ৪/৫ মাস সময় লাগবে। তিনি বলেন, গ্যাস উত্তোলনের জন্য মূল্যায়ন ও কম্প্রেসনের কাজ চলছে। কম্প্রেসন শেষ হলে পাইপলাইন বসানো হবে। এটা সম্পন্ন হলে কূপটি উত্তোলনে যাবে। তিনি বলেন, কূপের ১৩৯৭ মিটার গভীরতায় তেলের প্রবাহ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল তেলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ওই কূপে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এমডি বলেন, কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি গ্যাস উত্তোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে এসে এক সাথে তেল ও গ্যাস প্রাপ্তি তার জন্য স্বস্তিকর। এজন্য তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।
গণশুনানীতে অন্যান্যের মধ্যে সিলেট গ্যাসফিল্ডের কোম্পানি সচিব ফারুক হোসেন, জিএম (এলপিএম) প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, জালালাবাদ গ্যাসের ডিজিএম (মার্কেটিং) প্রকৌশলী রেজাউল করিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যুরো প্রধান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, ঢাকা ট্রিবিউন ও দৈনিক সিলেটের ডাক-এর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ভোরের কাগজের ব্যুরো চিফ ফারুক আহমদসহ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও জিটিসিএল-এর প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর আবিষ্কৃত হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় ৫টি গ্যাসক্ষেত্র আছে। সেগুলো হলো হরিপুর গ্যাসফিল্ড, রশিদপুর গ্যাসফিল্ড, ছাতক গ্যাসফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এরমধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বর্তমানে এসজিএফএল থেকে দৈনিক ৯৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও ৭২০ ব্যারেল কনডেনশেড জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হচ্ছে।

You might also like