২০ দিন থেকে পানিবন্দী দক্ষিণ সুরমার বিপুল এলাকাঃ প্রচন্ড দুর্ভোগে বাসিন্দারা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ গত ২০ দিন। প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপর পানি থাকায় সড়কটির ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন পথচারীরা। যারা সে পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করে, তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা। নিজ নিজ বাসাবাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েই ওই পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে।এমন ভোগান্তিতে আছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। এরসঙ্গে প্রায় হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুরবস্থায় আছেন ব্যবসায়ীরাও।সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, লাউয়াই, খোজারখলা, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চ-িপুল পর্যন্ত জলাবদ্ধ রয়েছে। বঙ্গবীর সড়কে কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এ সড়কের দু’পাশের প্রায় কয়েক শ’ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ ছাড়া ধরাধরপুর, মোমিনখলা, রায়েরগাঁও, লাউয়াই, কামুশানা, আলমপুর ও তেতলী এলাকার ঘরবাড়ি এবং সড়কে হাঁটুসমান পানি রয়েছে। চ-িপুল এলাকার দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণেও পানি দেখা গেছে। বঙ্গবীর রোড ও চ-িপুলের ফিলিং স্টেশনগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তাছাড়া সিলেট রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কোন কোন এলাকায় এখনও হাঁটুসমান পানি রয়েছে। এতে রেলস্টেশনে নামার পর গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক যাত্রীকে মালপত্র নিয়ে ময়লা পানি মাড়িয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
বঙ্গবীর রোডের ব্যবসায়ী অটোমোবাইল সরঞ্জাম বিক্রেতা সামসুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কিন্তু এমন অবস্থা কখনোই হয়নি। গত মাসের ১৫ তারিখে সন্ধ্যায় হঠাৎই সড়কে পানি উঠে দোকানে প্রবেশ করে। সে সময় মেঝেতে থাকা মালামাল তুলে কিছুটা ওপরে রাখা হয়েছিল। পরদিন পানি বেড়ে হাঁটুসমান হয়ে যায়। সে সময় তেমন পাত্তা দিইনি। কিন্তু পরদিনই পানি বেড়ে বুকসমান হয়ে যায়। এতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে থাকা প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পথে বসার উপক্রম।
ধরাধরপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ বলেন, এলাকায় অনেকেই অপরিকল্পিতভাবে বাসাবাড়ি বানিয়েছেন। এতে পানি নামার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না। এরআগে বৃষ্টির সময় কিছুটা পানি জমলেও দ্রুতই সেগুলো নেমে যেত। তবে এবার ১৫ দিন হয়ে গেলেও পানি নামছে না। গতকাল বৃষ্টি হওয়ায় পানি আরও কিছুটা বেড়েছে।মোমিনখলার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকাগুলোতে সুরমা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করেছিল। পানিগুলো সাধারণত জৈন্তারখাল হয়ে কুশিয়ারা নদীতে নামে। কুশিয়ারা নদীর পানি না কমায় এলাকার পানি নামছে না। অন্যদিকে গতকালের বৃষ্টিতে পানি আরও বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকার জৈন্তার খাল, ছড়া ও বক্স কালভার্টে ময়লা-আবর্জনা জমে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনা স্থানীয় ব্যক্তিরাই বিভিন্নভাবে খালে ফেলেছিলেন। এতে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি কর্তৃপক্ষের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। দক্ষিণ সুরমার ওই এলাকাগুলোতেও পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ছড়া-খালের বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমার কিছু এলাকা সিটি কর্পোরেশনে নতুন করে অধিভুক্ত হয়েছে। সেসব এলাকার ঘরবাড়িগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে কি না, তদারকি করা হবে।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদ-নদীর পানি সুনামগঞ্জ দিয়ে নামে। সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় পানি নামতে সময় লাগছে।