২৬ জুন শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মূল কমিটির অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ ২৬ জুন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, বরেণ্য কথাশিল্পী শহীদজননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মূল কমিটি ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’ এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর একজন ব্যক্তি ও একটি সংগঠনকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান করে। এ বছর করোনা মহামারী সংক্রমণজনিত লকডাউনের কারণে জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে এবং স্মারক বক্তৃতা প্রদান উপলক্ষে নির্মূল কমিটি অনলাইনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে।
আজ (২৬ জুন) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এই সম্মেলনে জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেছেন ভারতের বিশিষ্ট মরমী, বাউল ও লোকসঙ্গীত গবেষক অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝা। তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল¾ ‘বাংলার লোকসঙ্গীতে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার ঐতিহ্য’। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের লালন সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন।নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন সম্মেলনে দেশে ও বহির্বিশ্বে নির্মূল কমিটির ৬৫টি শাখা ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছেন।
স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝা বলেছেন,ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা আমাদের সমাজে এক ভয়াবহ অশুভ শক্তি।পশ্চাদপদ কৃষি-অর্থনীতি,সামন্তভূমি সম্পর্ক এবং মানুষের জটিল সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা একটি মতবাদ হিসাবে সমগ্র ভারতবর্ষে বিদ্যমান।ধর্মীয় মৌলবাদ, জনগোষ্ঠীর একাংশকে, ধর্মাচারের ভিত্তিতে অন্য অংশের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক ঐক্যে সংঘবদ্ধ করে, জনগণকে বিভক্ত করে, পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।এই অশুভ মতবাদটির বিরুদ্ধে যুগে যুগে মুক্তবুদ্ধির শিল্পী, সাহিত্যস্রষ্টারা প্রতিবাদ করেছেন।রবীন্দ্রনাথ বহু লেখায় এ সমস্যাটি তুলে ধরেছেন। তবে সমকালীন শিল্পে, সঙ্গীতে এই ঘৃণ্য মতবাদটির বিরুদ্ধে যত বেশি প্রতিবাদ উচ্চারিত হওয়া দরকার,তত বেশি প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়নি।অনেকে দ্বি-জাতিতত্ত্বকে স্বীকার করে নিয়েছেন অজ্ঞাতে; অনেকের জাতীয় আবেগে এ সমস্যাটির গুরুত্ব ধরা পড়েনি। বিশেষত মধ্যবিত্ত শিল্পী-স্রষ্টাদের মধ্যে নজরুলের কয়েকটি গান ও লেখা ছাড়া এর বিরুদ্ধে প্রবল সাংস্কৃতিক সংগ্রমের তথ্য আমরা পাইনি।অথচ মধ্যযুগ থেকে লোকায়ত শিল্পী গায়কদের অজস্র সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গান লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে।মানবধর্মের জাতীয় ঐতিহ্যের পতাকাটি তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বহন করে চলেছেন। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রতিরোধ,প্রতিবাদ তারা করছেন গানে।নিম্নবর্গের
লোকসমাজ সাম্প্রদায়িকতায় সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং এর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ স্বাভাবিক। আর জাতীয় এই বিবেককে এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের মূল্যবোধকে আবহমান কাল ধরে বহন করে চলেছেন আমাদের গ্রামীণ নিম্নবর্গের মানুষ। তারা মানুষ এবং বাঙালিজ্জ ধর্মে কেউ হিন্দু বা মুসলমান অথবা দুয়েরই বাইরে।অত্যন্ত মূল্যবান তাদের সংস্কৃতি।অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝার স্মারক বক্তৃতার পর লালনসঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন লালনের মানবতাবাদী গান গেয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের বিমোহিত করেন।শহীদজননীর ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ (২৬ জুন) সকাল ৮টায় নির্মূল কমিটির মহানগরের নেতৃবৃন্দ মিরপুরে জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন।