২৮ বছর পর মন্ত্রিসভায় সিলেটের তৃণমূল পর্যায়ের এক রাজনীতিবিদ
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের এমপি ও জেলা আ’লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২৮ বছর পর আবারও সিলেটের তৃণমূলের কোনো রাজনীতিবিদ মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ায় আ’লীগের নেতাকর্মীসহ তাঁর নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
সর্বশেষ সিলেট বিভাগের পদধারী নেতা হিসেবে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন প্রয়াত জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ ও দেওয়ান ফরিদ গাজী। এর পরবর্তী মন্ত্রিসভায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী থাকলেও তারা কেউই আওয়ামী তৃণমূল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। প্রায় সকলের পিছনেই আমলার তকমা ছিল। ২৮ বছর পর সিলেটের স্থানীয় আ’লীগের দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতা হিসেবে সরকারের মন্ত্রীসভায় জায়গা করে নিলেন জেলা আ’লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
এই প্রাপ্তির আগে গত ৭ জানুয়ারি রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে ১০ বছর পর ডুবন্ত নৌকা ভাসিয়েছেন শফিক চৌধুরী। গত ১০ জানুয়ারি বুধবার শপথ গ্রহণ করেন তিনি। শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মন্ত্রিসভায় পদ পাওয়ার সুখবর পান।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘৭৫ পরবর্তী মন্ত্রিসভায় সিলেট বিভাগের কোনো পদধারী নেতা মন্ত্রিসভায় যেতে পারেননি। এর পরবর্তীতে যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের কেউই স্থানীয় আ’লীগের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। অনেকেই এমপি- মন্ত্রী হওয়ার পর যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় আ’লীগে। তাই শফিকুর রহমান চৌধুরী মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ায় জেলা আ’লীগের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত।
এরআগে গত দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের সমঝোতার বলি হয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে কখনোই তিনি আওয়ামী বিদ্রোহী হননি। দলীয় প্রধানের নির্দেশ মেনে গত ১০ বছর যাবৎ তিনি এমপি না হয়েও আ’লীগের কর্মী হয়েছিলেন তৃণমূলের জনগণের পাশে। যার ফলাফল হিসেবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই পেলেন প্রতিমন্ত্রীর পদ।
সিলেট নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘শফিক ভাই ‘৭৫ পরবর্তী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন। উনার নেতৃত্বে আমরা ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে গিয়েছি। উনার একটি জিপ ছিল। এই জিপ নিয়ে আমরা এমসি কলেজ, সরকারি মদন মোহন কলেজ, মেডিকেল কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজে গিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। তার মতো ত্যাগী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করেছেন, তাই আমরা আওয়ামী পরিবারের সবাই খুশি।
সিলেটে তৃণমূল ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা শফিকুর রহমান চৌধুরী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। যুক্তরাজ্য আ’লীগে কাজ করার পর শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রবাসের মায়া ত্যাগ করে ২০০৮ সালে সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরের বছরেই ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র সে সময়ের প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেশ সরব ছিলেন। জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতির পর বর্তমানে তিনি জেলা আ’লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে বিচরণ ছিল তার। তাই ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।
সিলেট আসছেন সোমবার
এদিকে, আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার সিলেট সফরের আসছেন ১৫ জানুয়ারি সোমবার। ওইদিন ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে বিকেল ৪টায় তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন।
সিলেট জেলা আ’লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ও সকল উপজেলা আ’লীগ নেতা-কর্মীদের সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যথাসময়ে উপস্থিত থেকে জেলা আ’লীগ সভাপতি ও নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান।