২ ধর্মের লাখো মানুষের সম্প্রীতির মিলনমেলায় মূখর তাহিরপুর
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)’র ওরশ মোবারক ও পণাতীর্থ গঙ্গাস্নান ধামে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ২ ধর্মের লাখো মানুষের মিলনমেলা জমে উঠেছে। ১৯ মার্চ রোববার সকাল থেকে ২১ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতির মিলনমেলা শুরু হয়েছে।তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা জানন, রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওরশ ও বারুণী মেলা প্রাঙ্গনে পাগল, ফকির, ঠাকুর, আশেকান, ভক্তবৃন্দরা দলে দলে আসছেন। এবার ভিনদেশী দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। ধারণা করা হচ্ছে, এবার শাহ আরেফিন (রহ.) পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত প্রাঙ্গন এবং পণাতীর্থ গঙ্গাস্নান ধামে প্রায় ৫ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় সাহিদাবাদে হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)’র আস্তানা ও রাজারগাঁও শ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মধাম সংলগ্ন (পণতীর্থ ধাম) যাদুকাটা নদীর তীরে এই মিলনমেলা বসেছে। সারা দেশ থেকে লাখ লাখ ভক্ত ওরশ ও স্নানযাত্রা উৎসবে যোগ দিতে ওরশ প্রাঙ্গণ, অদ্বৈত প্রভুর আখড়া বাড়ি, গড়কাটি ইসকন মন্দির, হাট-বাজার, স্থানীয় গ্রামগুলোতে বৃষ্টির মধ্যেও উপচেপড়া ভিড় করছেন।
হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানার সহ-সভাপতি, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাড়ে ৭’শ বছরেরও অধিক সময় ধরে এখানে এই ওরশ উৎসব চলে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হযরত শাহজালাল (রহ.) সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানায় বার্ষিক ওরশ উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ১৯ মার্চ রোববার সকালে মাহফিলের মাধ্যমে শুরু হয়ে ২১ মার্চ মঙ্গলবার বাদ ফজর আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে এ ওরশ শেষ হবে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকে ওরশে যোগ দিতে হাজারো কাফেলাধারী ভক্তবৃন্দ সমবেত হয়েছেন আস্তানা প্রাঙ্গনে। এ উপলক্ষে আস্তানার আশ-পাশে বসেছে নানা বাহারী পণ্যের দোকান।এদিকে, বাদাঘাট ইউনিয়নের রাজাগাঁও শ্রীশ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মধাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, প্রাচীন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সাড়ে ৭’শ বছরেরও অধিক সময় ধরে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা রাজারগাঁও শ্রী অদ্বৈত জন্মধাম সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর পণাতীর্থ ধামে মঙ্গল আরতির মাধ্যমে স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও রোববার রাত ৯টার দিকে স্নানযাত্রা মহোৎসব শুরু হবে এবং ভোরে পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক স্নানযাত্রা উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ বছর স্নানযাত্রার মুখ্য সময় নির্ধারিত হয়েছে ১৯ মার্চ রোববার মহাগঙ্গা স্নান: রাত ০৯/৪৫/১৫ গতে রাত ৪/০৬/৫০ পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট সপ্তগঙ্গার মিলনকেন্দ্র খ্যাত পণাতীর্থে স্নানযাত্রা উৎসবকে ঘিরে রাজারগাঁও আখড়াবাড়ি ও যাদুকাটা নদীর চরে শনিবার থেকেই বসেছে হরেক রকম খেলনা দোকান, খাদ্য সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্থায়ী হাজারো দোকানপাট।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, ওরশ ও স্নানযাত্রা উৎসবকে ঘিরে ওরশস্থল, অদ্বৈত প্রভুর আখড়াবাড়ি, যাদুকাটা নদীর বারুণী মেলা স্থল ও গড়কাটি ইসকন মন্দিরে দেশী বিদেশী ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থী এবং পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় শনিবার সকাল থেকেই থানার পুলিশ ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কে ৪ স্তরের কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।তাহিরপুরের ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। যেকোন ধরণের অপতৎপরতা প্রতিরোধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।