২ বছরেও অসম্পূর্ণ: কবে হবে জেলা ছাত্রলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ প্রায় ৪ বছর কমিটিহীন থাকার পর নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। ৭ দিনের মধ্যে আংশিক কমিটি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে ২ বছর চলে গেলেও আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এভাবেই ৪ নেতার নেতৃত্বে চলছে জেলা ও নগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম।
২০২১ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত প্যাডে সিলেট নগর ছাত্রলীগে সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক মো.নাঈম আহমদ এবং জেলা ছাত্রলীগে সভাপতি নাজমুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাহেল সিরাজের নাম ঘোষণা করেন।
কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল- পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে জেলা ও নগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া ঘোষিত কমিটি আগামী ১ বছর দায়িত্ব পালন করবে। মেয়াদ শেষ হয়ে ২ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ১২ অক্টোবর। কিন্তু, কমিটির আর কোনো খোঁজ নেই। শুধু আশ্বাস দেয়া আর যাচাই-বাছাই হচ্ছে-চলছে, এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ।
এদিকে, গত ১২ অক্টোবর ছাত্রলীগের কমিটির ২ বছর পূর্ণ হয়। ওইদিন রাতে একটি পোস্ট দেন নগর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ। তিনি পোস্টে লিখেন, আজ নগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের ২ বছর। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে অনুরোধ, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলে সম্মেলন চাই…….। তার এমন স্ট্যাটাসে বলে দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কমিটির জন্য কতটা আগ্রহী।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর কমিটি দেয়া হয়েছিল। এতে সবাই খুবই খুশি হয়েছিল কমিটি পেয়ে যাবে বলে। কিন্তু, দু’বছরেও জেলা-নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ফলে অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দীর্ঘদিন রাজনীতি করে পদ-পদবী ছাড়াই ছাত্ররাজনীতি শেষ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার দেশে ছাত্ররাজনীতি করে পদপদবী না পেয়ে পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। সামনে জাতীয় নির্বাচন-তাই আ’লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনটির এবার দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
আর জেলা ও নগর ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, যেকোনো সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবে।
দলীয় সূত্র জানা যায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ হত্যার জেরে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর বিলুপ্ত করা হয় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। আর ২০১৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ২১ অক্টোবর বিলুপ্ত করা হয় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। এরপর একাধিকবার জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১৩ মার্চ সিলেটে কর্মীসভা করে ছাত্রলীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য। কর্মীসভায় শিগগিরই সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার ঘোষণা দেন শীর্ষ দু’নেতা। কর্মীসভার প্রায় ৭ মাস পর গত বছরের ১২ অক্টোবর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জেলা ছাত্রলীগে নাজমুল ইসলামকে সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর ছাত্রলীগে কিশওয়ার জাহান সৌরভকে সভাপতি ও নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেয়া হয়। এই কমিটি ঘোষণার পর সিলেট ছাত্রলীগে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ঝাড়ু মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কোটি টাকার বিনিময়ে এই কমিটি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
ওই সময়ে ছাত্রলীগের অফিসিয়াল প্যাডের মাধ্যমে লিখিতভাবে এই কমিটি ঘোষণা করেন সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। প্যাডের মধ্যে ‘এই কমিটির মেয়াদ হবে এক বছর’ উল্লেখ ছিল।
এছাড়াও কমিটি ঘোষণার দিন (১২ অক্টোবর) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে কমিটি অনুমোদনের সেই অফিসিয়াল প্যাডের ছবি সংযুক্ত করে ক্যাপশনে লিখেন ‘বি.দ্র: আগামী ৭ দিনের মধ্যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
কিন্তু, ৭ দিন পেরিয়ে গিয়ে নির্ধারিত কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। আংশিক কমিটিও হয়নি, পূর্ণাঙ্গ কমিটিরও দেখা মেলেনি। আর মাস দু’য়েক পর জাতীয় নির্বাচন কিন্তু তার আগেই সিলেটে আ’লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনটি রয়ে যাচ্ছে অগোছালো।
জেলা ও নগর ছাত্রলীগের সূত্রে জানায়, জেলা ছাত্রলীগের অধীনে ৩৬টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলা কমিটি দেয়া হয়েছে। ৪টি উপজেলার কমিটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পৌরসভার মধ্যে ৩টিতে কমিটি দেয়া হয়েছে। আর কলেজ কমিটি দেয়া হয়েছে ৮টি। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আর মহানগর ছাত্রলীগের অধীনস্থ ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে পূর্বের ২৭টি ওয়ার্ড ইউনিটের প্রায় ১৭টি কমিটি করা হয়েছে। নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে কমিটি দেয়া হয়নি। কারণ আ’লীগের কমিটি না হলে দেয়া যাবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নাই। ২ বছর ধরে ২ সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে। তারাও তাদের মতো আছে। কমিটি হবে কি না কেউই জানে না। শুধু আশ্বাস পেয়ে যাচ্ছি। আগামী বছরে জাতীয় নির্বাচন তার আগে এমন অবস্থা ছাত্রলীগের জন্য দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সব কিছু জমা দেয়া হয়েছে। আশা করছি অতি তাড়াতাড়ি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
নগর সাধারণ সম্পাদকের মতো একই কথা বললেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়া হয়েছে। একটা সুন্দর ও বিতর্কমুক্ত কমিটি দিতে তাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন। আমরাও কমিটির অপেক্ষায় আছি।
কমিটির বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি। ফলে তাদের কোনো মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।