৫০ বছরে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের।১৯৭২ সালের এই দিনে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ধীরে ধীরে বেড়েছে।
রাজনৈতিক, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতাও বেড়েছে দুটি দেশের মধ্যে।

রাজনৈতিক সম্পর্ক
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার সময় লন্ডনে অবস্থান করেন।

ওই সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু। সেই বৈঠক থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের শুভ সূচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকবার লন্ডন সফর করেছেন। সবশেষ ২০২১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ শুভেচ্ছা বাণী দেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, প্রিন্স চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ ২০২১ সালে ঢাকা সফর করেছেন। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে আগামী দিনে সম্পর্ক আরও বাড়ানোর প্রত্যাশা করেন তিনি। দুই দেশের নেতাদের প্রায় প্রতি বছরই উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

বাণিজ্য সহযোগিতা
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা হ্রাস পাবে না বলে জানিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধাও ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য।

ইউরোপের মধ্যে জার্মানির পরই যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের বড় ক্রেতা। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যের বাজারে পোশাক রপ্তানি করে আসছে। ২০২১ সালের শেষ ৬ মাসে যুক্তরাজ্যে ২.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক শিল্প পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আসছে। সম্প্রতি বিমান বাহিনীর জন্য সি-১৩০ উড়োজাহাজ ক্রয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ জাহাজও কিনেছে।

২০২১ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি যুদ্ধ জাহাজ কিনতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়াতে প্রতিরক্ষা সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় পক্ষ।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে দেশটি। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় অন্যতম প্রধান দাতাদেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ২০১৭ সাল থেকে ৩২০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি আর্থিক সাহায্য দিয়েছে।

অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা
যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, মানবাধিকার, সুশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য।

সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি স্যার অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়। সেই বন্ধুত্ব পরবর্তী ৫০ বছরে আরও বেড়েছে।

 

You might also like