৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনঃ দক্ষিণ সুরমায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম ধাপের নির্বাচন বুধবার। মধ্যে মাত্র একদিন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। এতোদিন প্রার্থীরা বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে কিছুটা ক্লান্ত।
প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকেই তাঁদের প্রচারণা ছিল নানামূখী। গণসংযোগ, মতবিনিময়, উঠানবৈঠক, পথসভা, জনসভা ইত্যাদির মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। করেছেন ভোট প্রার্থনা। উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার, রাস্তার মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় প্রার্থীদের ব্যানার ও পোস্টার সয়লাব হয়ে গেছে। প্রার্থীরা নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে জনপদকে করে তুলেছিলেন উৎসবমূখর পরিবেশের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চন্ডিপুলে চেয়ারম্যান প্রার্থী বদরুল ইসলাম ও মঈনুল ইসলামের নির্বাচনী প্রধান অফিস করা হয়েছে। পাশাপাশি দু’টি অফিস থাকায় উভয় প্রার্থীর কর্মী, সমর্থকরা গোটা চন্ডিপুল এলাকাকে উৎসবমুখর করে রেখেছেন। একেই চিত্র দেখা যায়, উপজেলার জালালপুর, লালাবাজার, মোগলাবাজারসহ ৮টি ইউনিয়নে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার মোল্লারগাঁও, তেতলি, সিলাম, লালাবাজার, জালালপুর, মোগলাবাজার, দাউদপুর ও কামালবাজার এই ৮টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৭ হাজার ৯শ’ ১৭ জন এবং মহিলা ভোটার ৮৩ হাজার ৬শ’ ৭২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন মাত্র ১ জন। মোট কেন্দ্র রয়েছে ৬৩ টি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৫জন। তাঁরা হলেন, জাতীয় শ্রমিকলীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তিত্ব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাব, সিলেট’র আজীবন সদস্য, ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জুয়েল আহমদ,আনারস প্রতীকের প্রার্থী, উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সদস্য, তেতলি ইউনিয়নের সাবেক কয়েকবারের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মোঃ মঈনুল ইসলাম,উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট শামীম আহমদ, টেলিফোন প্রতীক নিয়ে রয়েছেন উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম এবং কাপ-পিরিছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতায় আছেন সিলেটি আঞ্চলিক নাটকের অভিনেতা শাহেদ মোশারফ। যাকে সবাই কটাই মিয়া নামে চিনেন।
ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিল ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, তাঁর প্রতীক মাইক, টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা নন্দন চন্দ্র পাল, উড়োজাহাজ প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুর রহমান, সাংস্কৃতিক কর্মী আলী আজগর খান শামীমের প্রতীক চশমা ও তালা প্রতীকের প্রার্থী ফয়েজ আহমদ। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ্মফুল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন আইরিন রহমান কলি, হালিমা বেগম রয়েছেন কলস প্রতীক নিয়ে এবং ফুটবল প্রতীকে রয়েছেন ফাহিমা বেগম।
এবারের নির্বাচনে প্রবীণ ও নবীনদের মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভোটার সুত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে মোঃ জুয়েল আহমদ, আলহাজ্ব মোঃ মঈনুল ইসলাম এবং মোঃ বদরুল ইসলামের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে জানিয়েছেন সচেতন ভোটাররা। অন্য দুই প্রার্থীও কোন অংশে কম যান না বলে কোন কোন ভোটার এ প্রতিবেদককে জানান।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও ফয়েজ আহমদ। তবে নন্দন পাল, আলী আজগর খান শামীম ও আব্দুর রহমানকেও অনেকে হিসেবের মধ্যে রাখছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আইরিন রহমান কলি ও হালিমা বেগমের মধ্যে জোর প্রতিদ্বন্ধিতা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসনাত জানান, ইতিমধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, সেলক্ষ্যে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা।
তিনি বলেন, ভোটের দিন নিরাপদ, সুশৃংখল ও নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ান আনসারের সদস্যরা থাকবে। টহলে থাকবে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা। অনিয়ম ও বিশৃংখলা রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামসহ কর্মকর্তারা পৌঁছে যাবেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্রে শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় সকল প্রার্থী, প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক এবং সর্বোপরী ভোটারদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।