৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনঃ সুনামগঞ্জে আ’লীগের প্রতিদ্বন্ধী বিএনপি’র বহিস্কৃতরা
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
দ্বিতীয় ধাপে সুনামগঞ্জের ৪টি উপজেলায় ২১মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সব ক’টিতেই চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের একাধিক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ৩টিতে আ’লীগ নেতাদের সঙ্গে ভোটের লড়াই হবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের। এই ৩ উপজেলা হচ্ছে জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর।
স্থানীয় ভোটারদের কথা বলে সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান,৩টি উপজেলাতেই আ’লীগে বিভক্তি আছে। দলের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বিএনপিপন্থী নেতারা। ফলে এসব উপজেলায় নির্বাচনী লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের দু’টি উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগ আছে। ভোটার কম-বেশি হলে কার লাভ, কার ক্ষতি সেই আলোচনাও চলছে ভোটারদের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, ভোটে যাওয়া যাবে না। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে এসব উপজেলায় দলের কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। অন্যদিকে আ’লীগের কিছু নেতা-কর্মী কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে শুক্রবার বিকেলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় প্রচারপত্র বিলি করেছেন।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩জন। তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা ইকবাল আল আজাদ, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি’র পদ থেকে বহিষ্কৃত নুরুল হক আফিন্দী।
এ উপজেলার একাধিকবার চেয়ারম্যান ছিলেন আ’লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদ। তাঁর ছেলে ইকবাল আল আজাদ। ইউসুফ আল আজাদের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ইকবাল আল আজাদ নির্বাচিত হন। এবার দলীয় নৌকা প্রতীক না থাকায় তিনি কিছুটা বেকায়দায় আছেন। তবে তাঁর সঙ্গে দলের একটা বড় অংশ আছে।
রেজাউল করিম শামীম দলের প্রবীণ নেতা। দু’বার উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। একাধিকবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেছেন। এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি ভোটারদের ভোট টানার চেষ্টা করছেন। জেলা আ’লীগ সভাপতি নূরুল হুদা তাঁর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
নুরুল হক আফিন্দীও সাচনাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একাধিকবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু জয়ী হতে পারেননি। নুরুল আফিন্দী গণমাধ্যমকে বলেন, আ’লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমি-ই জয়ী হব।
জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের জনৈক বাসিন্দা বলেন, ‘একেক প্রার্থীর একেক এলাকায় ভালো অবস্থা। ভোটের প্রচারণাও চলছে ব্যাপক। ৩ জনেই সমানে সমান। কে জিতবেন বলা কঠিন। লড়াই হবে ত্রিমুখী।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন ৫জন। বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি করুণা সিন্ধু চৌধুরী মনোনয়ন জমা দিয়ে পরে প্রত্যাহার করে নেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকাদের মধ্যে আ’লীগের আছেন ৩ জন। বাকি দু’জনের একজন বিএনপিপন্থী, অন্যজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খান, সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা, উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত আবুল কাশেম, বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা আফতাব উদ্দিন, তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা বোরহান উদ্দিন এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী মিটু রঞ্জন পাল আছেন।
ভোটাররা বলছেন, এ উপজেলায় ভোটে স্থানীয়, অস্থানীয়সহ নানা বিষয় প্রভাব ফেলে। তবে এবার এখনো এসব সামনে আসেনি। আ’লীগ নেতারা ৩ প্রার্থীর পক্ষেই ভাগ হয়ে কাজ করছেন। তবে দলের প্রথম সারির নেতারা আছেন আবুল হোসেন খানের সঙ্গে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন বলেন, ‘দলের সবাই আমার পক্ষে কাজ করছেন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
আবুল কাশেম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো আছে। ভোট গ্রহণ পর্যন্ত এমনটি থাকবে, এটাই প্রত্যাশা করি।
উপজেলার ভাটি তাহিরপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ভোটে মানুষের আগ্রহ কম। প্রার্থীরা আসছেন, ভোট চাইছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫জন। এরমধ্যে দু’জন বিএনপিপন্থী, ৩ জন আ’লীগের। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন এবার প্রার্থী হননি। এবার চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার বর্মণ, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ নেতা রঞ্জিত চৌধুরী এবং বিএনপি নেতা মোহন মিয়া।
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি দল-মত নির্বিশেষে সবার ভোট পাব। গত ৫ বছর যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তাঁর কাজও মানুষ দেখেছেন, আর আমার দায়িত্ব পালনকালে আমার কাজও মানুষ দেখেছেন।
দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, আ’লীগ সরকারে আছে। গত ১০ বছরে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ উন্নয়নের স্বার্থেই আমাকে ভোট দেবেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের জনৈক বাসিন্দা বলেন, ‘শুধু দল না, আমরা প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখে-শুনে ভোট দেব। এবার দলের চেয়ে ব্যক্তির যোগ্যতাই প্রাধান্য পাবে বেশি।