৭ জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত গ্রামের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও পাহাড়ী ঢলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ  গত দু’দিন থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতক ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা। দূর্গত উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষ তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সিলেটের সাথে কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে, জকিগঞ্জে নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়। সে অর্থে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও সুরমা ডাইকের গৌরিপুর-কুওরঘড়ি এলাকায় ৬টি ভাঙ্গন কবলিত পয়েন্ট দিয়ে তীব্র গতিতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাট পৌরশহর ১৫৫ সেন্টিমিটার পানির নীচে রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখনও উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় পাঠদান ব্যাহৃত হচ্ছে। মাঠ ও গো-চারণ ভূমিতে পানির নীচে থাকায় গো-খাদ্য সংকটসহ মৎস্য খামারিরাও রয়েছেন চরম শঙ্কায়।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার সুরমার পানি সিলেটের কানাইঘাটে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, একই সময়ে কুশিয়ারার পানি আমলশীদে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সারী-গোয়াইন নদীর পানি সারীঘাটে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এরফলে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে বৃষ্টিপাত অনেকটা কমে এসেছে। ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২০ ও ২১ মে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রোববার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনার্বসন কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর জেলা প্রশাসনের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ১০৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা জানান, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পৌর শহরসহ আশপাশ এলাকায় কিছুটা পানি কমলেও হাওর ও সমতল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৫৬ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও সুরমা ডাইকের গৌরিপুর-কুওরঘড়ি এলাকায় ৬টি ভাঙ্গন কবলিত পয়েন্ট দিয়ে তীব্র গতিতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও ইউএনও সুমন্ত ব্যানার্জি রোববার বন্যা কবলিত দক্ষিণ বাণীগ্রাম, ঝিঙ্গাবাড়ী ও রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন বাণীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার লোকমান উদ্দিন, রাজাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সামছুল ইসলাম, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন। এ সময় লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের চাল বিতরণ করেন তারা। ইতোমধ্যে বন্যা দুর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৯ মেট্রিকটন চাল প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে দেয়া হয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে ইউএনও সুমন্ত ব্যানার্জি জানিয়েছেন। আরো ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবার সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি বন্যা দুর্গত এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বিত্তশালী ও দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, জৈন্তাপুরে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। সারী ও বড় নয়াগাং নদীর পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা ও দরবস্ত ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় আটকে পড়া লোকজন গৃহপালিত পশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি ও পানিতে আটকা পড়াদের খোঁজ-খবর নিতে এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, ইউএনও আল বশিরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী, ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, ইন্তাজ আলী, সুলতান করিম ও বাহারুল আলম বাহার বন্যা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। সরকারিভাবে বন্যা কবলিতদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ১২ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনেক এলাকার জনসাধারণকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন দেখা দিলে আরও আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হবে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা জানান, শনিবার রাত থেকে সারি ও ডাউকি নদী দিয়ে নেমে আসা পানিতে গোয়াইনঘাট উপজেলা সর্বত্র তলিয়ে গেছে। বিপদসীমার উপরে সারি ও ডাউকি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। সিলেট শহরের সাথে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া, উপজেলা সদরের সাথে ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লাখ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। হাজার হাজার ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অনেক হাট-বাজারে পানি উঠায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বোরো ও আউশের বীজতলা এবং বোনা আমনের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। কৃষকরা গবাদিপশু নিয়ে রয়েছেন বিপাকে। গো-খাদ্যের চরম অভাব দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, বন্যার কারণে শ্রমিকরা কোন কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কোম্পানীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, কোম্পানীগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ অনেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আউশধানের বীজতলা ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসল। অনেক পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তবে, হাওরাঞ্চলের বোরো ধান প্রায় শতভাগ কাটা হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতি থেকে মোটামুটি রক্ষা পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন, হাওরাঞ্চলের শতভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। কিছু এলাকার আউশধানের বীজতলা ডুবেছে। তবে দ্রুত পানি কমে গেলে ক্ষতি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওই ইউনিয়নের হাওর ও নন-হাওর এলাকার শতভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন ১২ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দিয়েছে। উপজেলার আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ছাতক থেকে সংবাবদাদা জানান, টানা ১ সপ্তাহের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকের সবত্রই বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উঁচু জমিতে ক্ষেত করা কয়েক শত একর বোরো ফসল। এসব জমিতে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে।

সোমবার বিকেল পর্যন্ত ছাতকে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি এখানে ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন। ইতোমধ্যেই বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বীজতলা ও শত শত একর উঁচু জমির বোরো ফসল।শিল্পসমৃদ্ধ পৌরশহরসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। শহরের নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার। উজানে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ছাতকে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি পেয়েছে।ছাতক শহরের সকল ক্রাশার মিল বন্ধ রয়েছে। নদীতে কার্গো লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে পড়েছে। এরফলে শত শত শ্রমিক এক সপ্তাহ ধরে বেকার দিনযাপন করছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিসহ আশপাশ এলাকার ৫৪০ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে সোমবার বিকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ২২সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে সিলেট-গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের কয়েকটি স্থান তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে ছাতকের সাথে সিলেটসহ দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে উপজেলা সদরের সাথে ইসলামপুর, চরমহল্লা, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়সহ ৭টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছাতকের ইউএনও মো. মামুনুর রহমান জানান, ছাতকে বন্যার শুরুতে পূর্বাভাস জনসাধারণকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বাজারের লামাবাজারস্থ শিংরাউলি রোডের দুই পাশের বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেকের বাড়িঘরের লোকজন এখন বানে ভাসা পানিতে দিনযাপন করছেন। এই অবস্থায় রয়েছে এলাকার প্রায় ২৫/৩০টি পরিবার। এছাড়া নোংরা পানির মধ্যে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে এলাকার লোকজনের।সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভাবশালীরা বাসা-বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে ড্রেন দখল করে ভরাট করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার অনেক জায়গা জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগের শেষ নেই বাসিন্দাদের। দেখা গেছে, শমশেরনগর বাজারের লামাবাজারস্থ শিংরাউলি রোডের মখলিছ মিয়ার ভাড়াটিয়া ১৩ পরিবার, সুলতান মিয়ার বাসার ৫ পরিবার, খোকন মিয়া ও সাংবাদিক শাহ আলম চৌধুরীর পরিবারসহ ২৫/৩০টি পরিবার ৫ দিন ধরে পানিবন্দী। জলাবদ্ধতার কারণে অনেকের বাড়ির উঠোনে এমনকি ঘরের ভেতরেও জমে রয়েছে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোও ডুবে রয়েছে।আলাপকালে খোকন মিয়া বলেন, ‘বাড়িতে যাওয়া-আসার রাস্তায় কোমর সমান পানি। আবার ঘরের ভেতরেও হাঁটুপানি। এই অবস্থায় বাড়িতে বাস করার মতো উপায় নাই। অতি কষ্টে ভোগান্তি সহ্য করে বসবাস করছি। বছরের পর বছর সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মিথ্যা আশ্বাসে দিন পার করছি। বাসা বাড়ির উঠোনে কিংবা রাস্তায় পানি জমে আছে। জমে থাকা পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবারগুলোর লোকজন কর্দমাক্ত নোংরা পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করছেন। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে অনেকের বসতঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ছোট শিশুদের নিয়ে আতংকে দিন কাটছে।

এ ব্যাপারে শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমেদ জানান, বার বার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। কেউই জায়গা ছাড়তে রাজি হননি। বাসা-বাড়ি নির্মাণে ড্রেন বন্ধ হওয়াতে স্থানীয়রা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।কমলগঞ্জের ইউএনও সিফাত উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

You might also like