সুনামগঞ্জে আবারো ব্যতিক্রমী রায় দিলেন আদালত, ভাঙন থেকে বাঁচলো ৪৫ টি দম্পতি
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ ভালোবাসা যেন মানে না কোন বাধা। কেউ একে অপরকে ভালোবেসে, কেউ আবার পারিবারিক সিদ্ধান্তে একসঙ্গে জীবন শুরু করেছিলেন। দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসাও ছিল। কিন্তু পারিবারিক কলহ, ভুল বোঝাবুঝি, যৌতুক, নির্যাতন ইত্যাদি কারণে উড়ে যায় সুখপাখি। সালিশে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় দাম্পত্যের ছন্দপতন ঘটে। এক পর্যায়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায় তাদের কলহ।অবশেষে সেই দ্বন্ধ মিটিয়ে আবারও এমন ৪৫ টি দম্পতিকে সংসারের বন্ধনে ফিরিয়ে দিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.জাকির হোসেন।আজ বুধবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত প্রাঙ্গণ ছিল আনন্দ ও উল্লাসে ভরপুর। কারণ আজ যে সকল ভুল বুঝাবুঝি অবসান ঘটিয়ে আবারও ভালোবাসার মানুষগুলো একত্রিত হয়ে ফিরেছেন আপন ঘরে। শুধু তাই নয় আদালতের এমন যুগান্তকারী এই রায় দুটো মানুষকে আবারও একসঙ্গে জীবন কাটানোর সুযোগ করে দেওয়ায় হাসি ফোটালো তাদের সন্তানদের মুখেও।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নিজেদের স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলাগুলো করেছিলেন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৪৫ নারী। কিন্তু বিচ্ছেদ এর কোন প্রকৃত সমাধান নয় সেই জন্য এই ৪৫ দম্পতিকে সুখী জীবনে ফেরানোর প্রয়াস নেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। কোনো আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংসার জীবন চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বাদীদের সঙ্গে আপোস করিয়ে দেন।বুধবার (৮ জুন) দুপুরে আদালত এই রায় দেন। এসময় সকল মামলার বাদী-বিবাদী, তাদের আইনজীবী ও পরিবারের লোকজন উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। আবেগে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানিও ঝরান।আদালতের আপোস নামায় ৪৫ দম্পতি অঙ্গীকার করেন, সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করবেন তারা। সংসারে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেবেন। স্বামী তার স্ত্রী বা তার মা-বাবা ও অভিভাবকের কাছে যৌতুক দাবি করবেন না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ও বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করবেন। স্বামী কখনো স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না, স্ত্রীকে নির্যাতন করলে বা যৌতুক দাবি করলে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।৪৫ দম্পতি আবারও সংসারে ফিরতে পেরে তারাও খুশি। এবং ঝগড়া না করে এখন থেকে সুখে শান্তিতে সংসার করবেন বলে জানান তারা।সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, আদালত পৃথক ৪৫ টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালতে যে শুধু শাস্তি হয় না পরিবারে শান্তিও ফেরানো হয়।এর আগেও ২ শতাধিক পরিবারকে এমন রায়ের সংসারে ফিরিয়ে দেয়া দিয়ে ব্যাতিক্রমী রায় ব্যপক আলোচনায় এসেছিলেন এই বিচারক ।