আন্দোলনের মাধ্যমেই আ.লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর হুঁশিয়ারি বিএনপির
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কোনো ধরণের আপস করার সুযোগ নেই জানিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেই সঙ্গে তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয় সে বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন- নির্বাচনে অংশ নিলে ভোট চুরির পার্টনার হবেন।বুধবার (১২ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত এক দফার সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা এমন কথা বলেন।ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের এখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে এই সরকার কবে যাবে। বাইতুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কি হচ্ছে, শান্তির মিটিং করতেছে। সারাদেশে ঘরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করে, গুম-খুন করে অত্যাচার করে আপনারা শান্তির মিছিল করেন। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করে। যারা অশান্তি করবে, তাদের শায়েস্তা করবে। কিন্তু তাদের ওখানে তো লোক নেই। আমি খবর পেলাম আমাদের মিছিলের লেজটা আওয়ামী লীগের মিছিল ধর ধর করছে।বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বিএনপির সাধারণ কর্মীর নিঃশ্বাসের বাতাসে তারা ভেসে যাবে। তারা বুঝে গেছে লগি-বৈঠার দিন শেষ। দেশের মানুষ শিখেছে কীভাবে বাঁচতে হয়। মানুষ শিখেছে কীভাবে আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করতে হয়। প্রচণ্ড গরম, বৃষ্টির মধ্যেও ভাইদের উপস্থিতি প্রমাণ করে সরকারের সময় নেই। তাই সরকারকে বলবো- আজকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমি বলবো- ঘোষণার পরপরই মানেমানে কেটে পড়ুন। না হলে কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হয়, তা দেশের জনগণ জানে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সবার কথা বলছি না। একটা বিশেষ শ্রেণির পুলিশ কাগজকলম নিয়ে বসছেন। যাদের নামে মামলা নেই, তাদের মামলা দিতে হবে। যাদের মামলা আছে তাদের সাজা দ্রুত দেওয়ার জন্য তালিকা করছেন। আপনারা সাজা দেবেন? কিসের সাজা? জনগণ আপনাদের সাজা দেবে।পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি ১৫ বছরেও পিছু হটেনি। এখনো তাদের কিছু করা যাবে না। কারণ আমরা জিয়াউর রহমানের সৈনিক। যেখানে সেখানে লাঠি চালাবেন না। পুলিশের যারা, তারা কিন্তু এই দেশের লোক। যারা ভালো আছেন, তারা ভালো থাকবেন।এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার ভাইয়ের প্রাণ, বোনের ইজ্জত যারা কেড়ে নেয়, তাদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। আর যারা এই নির্বাচনে যেতে চাইবে, ভোট চোরদের সমর্থন করবে, সেও ভোট চোরের পার্টনার। সেটা প্রশাসনের, রাস্তার মানুষ হতে পারে। সেটা আমাদের দেখার দরকার নেই। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের তাকেই আঘাত দিয়ে সরিয়ে দিতে হবে। জিয়াউর রহমানের আন্দোলন সফল হয়েছে। তারেক রহমানের আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না।’
এ সময় আইনজীবীদের কোর্টে যাওয়া বন্ধ করা হলে আমরা মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় কোর্টে যাওয়া বন্ধ করে দেব বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. মঈন খান বলেন, সরকার আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলন-কর্মসূচিতে ১৭ জন হত্যা করেছে। এই সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছে। দেশের সুশাসনকে হত্যা করে কুশাসন জারি করেছে। সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে জঙ্গলের শাসন জারি করেছে। এই জন্য তো দেশ স্বাধীন হয় নাই। তারা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। দেশে মানুষের অর্থনীতির অধিকার কেড়ে নিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। সরকার দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে সততাকে হরণ করেছে। কাজেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাদের বিদায় নিতে হবে। এটাই আমাদের একদফা দাবি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেব। এটাই আমরা চাই।এছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কেউ কেউ বলেন- যারা পাবলিক সেন্টিমেন্ট বোঝে না, তাদের না কি রাজনীতি করা উচিত না। আসলে সেটা না। শেখ হাসিনা পাবলিক সেন্টিমেন্ট বোঝে বলেই ভোট চুরির প্রকল্প শুরু করেছে। এই ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ হিসেবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে।বিএনপির শীর্ষ এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ভোটের আগে পছন্দমতো প্রশাসনে লোক নিয়োগ দিচ্ছে। ডিসি নিয়োগ দিচ্ছে। সুবিধা হচ্ছে এদের নামগুলো পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন যখন হবে, তখন এরা এই পদে থাকতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকেও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতির আওতায় আনছে। যেসব দলীয় বিচারক মিথ্যা মামলা নিচ্ছে, জামিন দিচ্ছে না তারাও সাবধান হয়ে যান। সবাইকে সাবধান করছি। যত পন্থাই করা হোক, ভোট চুরির প্রকল্পের সঙ্গে কেউ থাকবেন না।খসরু বলেন, সরকারের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এর কোনো বিকল্প নেই।এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে তখনই, যখন নির্দলীয় সরকার হবে, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।