শহীদ বুদ্ধিজীবী ও গৌরবের বিজয় দিবস শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় লন্ডনে পালিত

হামিদ মোহাম্মদ
অতিথি করেসপন্ডেন্ট

লন্ডন : শহীদ বুদ্ধিজীবী ও  গৌরবের বিজয় দিবস লন্ডনে শ্রদ্ধা ও ভালেবাসায় পালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর  প্রথম প্রাতে রাত বারোটা ১ মিনিটে শহীদ আলতাব আলী পার্কের শহীদবেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনীতিক সংগঠনের  পক্ষে বিপুল সংখ্যক বাঙালি। একাত্তরের মহান বীর সেনানী বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগকে স্মরণ ও শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করা হয়। ৩০ লক্ষ শহীদ সন্তান ও মাবোনের বীরত্বগাঁথাকে অমর করে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রবাসীরা। লন্ডনের বিখ্যাত লন্ডন আইকে লন্ডন সিটি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পতাকার রঙে প্রজ্জ্বলিত করে উদযাপন ও সম্মান প্রদর্শন ছিল লন্ডনে মহান বিজয় দিবসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনএর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে ডায়াসপারা ৭১-এর আয়োজনে ব্রাডি আর্টস সেন্টারের আপাসেন কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, সঙ্গীত পরিবেশন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও মুক্তিযুদ্ধে পোস্টারপ্রদর্শনীর একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। একই দিন ব্রাডিআর্টস সেন্টারে হল রুমে সন্ধ্যায় টাওয়ার হ্যামলেটেসর সহযোগিতায় ইস্টহ্যান্ডস ও সত্যেন  সেন পারফর্মিং আটর্স আয়োজন করে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের। এছাড়া চ্যানেল এস  টেলিভিশন বিজয় মঞ্চ১৬  ডিসেম্বর  দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।  এতে বাঙালি কমিউনিটির গুণীজনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, নানা পেশার সৃজনশীল মানুষ, লেখক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী মানবাধিকার কর্মী এবং শিশুকিশোররা অংশগ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৭১ হার্টসংগঠন আলতাব আলী পার্ক শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বিজয় সমাবেশর আয়োজন করে। এতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পুষ্পস্তবক অর্পনসহ স্বাধীনতা রক্ষার শপথ অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ লন্ডনে  আবৃত্তি সংগঠন বর্ণন’  কবিতাপাঠ ও আবৃত্তির মাধ্যমে বিজয়ে বর্ণননামে পালন করে এদিন। এতে স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন কবি শামীম আজাদ, কবি দিলু নাসের। আবৃত্তিতে অংশ নেন উদয় শঙ্কর দাশ. সমর দাশ, পপি শাহনাজসহ আরো অনেকে। সাহিত্য সংগঠন  কবিতাস্বজন১৬ ডিসেম্বর পূর্ব লন্ডনের প্রিন্সলেট স্ট্রিটে আয়োজন করে স্বরচিত কবিতা পাঠ। এতে বিলাতের কবিরা অংশ নেন। ডার্টফোর্ডের সপ্তসুরবাংলা স্কুল শিশুকিশোরদের অংশ গ্রহণে ১৪ ডিসেম্বর কবিতাপাঠ, গান, নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করে শহীদ বৃদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস। ১৫ ডিসেম্বর ব্যান্ড সংগঠন ব্রিটেন বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যন্ড এসোসিয়েশনআয়োজন করে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে দিনব্যাপী কনসার্ট, নৃত্য, পিঠামেলা ও পোশাকশিল্প বিপনন। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাদিয়া তানি, মিলন বিশ্বাস, তুষার, নাফিজ জয়, তাজিব আজমী, তাজিব রহমান, আরোয়া রশিদসহ ব্যÐ প্যানথনিক। এ আয়োজনে ছিল উপচেপড়া ভীড়। এছাড়া লন্ডনসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ মাসব্যাপী বিজয় উতসবের কর্মসূচী পালন করছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনসমাবেশ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনসমাবেশ ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কের শহীদমিনার পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয়। শহীদবুদ্ধিজীবীদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ আনাস পাশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মুনিরা পারভীনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সুধীজন। একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয়ের উষালগ্নে ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধন ছিল পাক হানাদার বাহিনির জাতিকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা বাস্তবায়ন। পাক হানাদার বাহিনির দোসর আলবদর, আল শামস ও রাজাকারেরা এদিন শিক্ষক, চিকিতসক, লেখক, সাংবাদিক ও গুণী চিন্তকদের ধরে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। বক্তারা এ দিনের স্মৃতিচারণ করা ছাড়াও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ঘাতকদের বিচার হলেও তাদের নির্মূল করা যায়নি, তারা আবার মাথচাড়া দিয়ে ফণা তুলেছে। নতুন করে দেশ মেঘের অন্ধকার ছায়ায় পতিত হয়েছে। তারা বলেন, মুক্তির লড়াই শেষ হয়নি। জাতিকে অন্ধকারে  আলোর দিশা দিতে হবে।

প্রচন্ড ঠান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক বাঙালি সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সমাজকর্মী, রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাব আলী, কবি শামীম আজাদ, রাজনীতিক সৈয়দ সাজিদুর রহমান  ফারুক, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী সৈয়দ এনামুল ইসলাম, শহীদ মিনার  কমিটির সদস্য মারুফ চৌধুরী, মানবাধিকার নেতা আহাদ চৌধুরী, কমিউনিটি নেতা আহমদ ফখর কামাল, কবি হামিদ মোহাম্মদ, সংস্কৃতিকর্মী উর্মি মাজহার, মানবাধিকার নেত্রী ও কাউন্সিলার অজন্তা দেব রায় ও পুষ্পিতা গুপ্ত। আরো বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিকর্মী ফেরদৌসী লিপি, এডভোকেট রুমানা মির্জা, জামাল আহমেদ খান, কবি মুজিবুল হক মনি, স্মৃতি আজাদ, জুয়েল রাজ, শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, বাতিরুল হক সর্দার, এনামুল হক এনাম, এনামুল হক জুবের, শাহাব আহমদ বাচ্চু, এফটি জিনিয়া, শফিকুর রহমান, এডভোকেট ড. আনিছুর রহমান আনিছ, সুয়েজ মিয়া, হেলাল আহমেদ,  গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।  

ডায়াসপারা ৭১এর একাত্তর দেখেছিশীর্ষক অনুষ্ঠানমালা

১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আটর্স সেন্টারে অবস্থিত আপাসেন কনফারেন্স হলে ডায়াসপারা ৭১আয়োজন করে একাত্তর দেখেছিআলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার প্রদর্শনী ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের। শুরুতেই মুক্তির গানচলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।  এতে বিলাতের কবি, লেখক, চিন্তক এবং সংস্কৃতিজন অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি। শৃঙ্খলমুক্তির এ লড়াই ছিল বাঙালি জাতিরাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনিকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে আনে বীর বাঙালি। এতে আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ বদরুল আহসান ও ড. নওরীন তামান্না। আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তিকার মুনিরা পারভীন, ইয়াসমীন মাহমুদ পলিন। গানে অংশ নেন কণ্ঠ শিল্পী অমিত দে, শালীন রশিদ এশা, লাবনী বড়য়া। লালনগীতি পরিবেশন করেন হুমায়ূন কবির ও জান্নাত মাহী। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের উপস্থাপনায় ছিলেন সৈয়দ এনামুল ইসলাম ও জেসমীন চৌধুরী।

You might also like