সচিব পর্যায়ের বৈঠক কাল বাংলাদেশ-ভারতের আলোচনায় কী থাকছে
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ রাজনৈতিক সম্পর্ক ঝালাই,কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সহযোগিতা ও দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয় স্থান পাবে আগামীকাল বুধবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে।পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ তথ্য জানিয়েছেন।মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা একদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হবে শ্রিংলার।মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন,নন-ইস্যুগুলো অতিরঞ্জিত আকারে প্রকাশ হচ্ছে। সেটার কারণে পাবলিক পারসেপশনে একটি প্রভাবও পড়ছে।এগুলো আমরা নিশ্চয় দেখবো।কারণ,এটা ঠিক না।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দেখা করার বিষয় নিয়ে একটি খবর ছাপা হলো,যার আসলে কোনও ভিত্তি নেই।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন,প্রধানমন্ত্রী এই করোনা পরিস্থিতিতে কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। বিদেশিদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। তারপরও সোমবারে একটি নির্দেশনা পেয়েছি সেপ্টেম্বর থেকে বিষয়টি পুনরায় স্বাভাবিক করার জন্য। যত দেশের রাষ্ট্রদূতদের দেখা করার অনুরোধ জমে রয়েছে তাদের সবার সঙ্গে আস্তে আস্তে প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন।এতে সেপ্টেম্বরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের যাওয়ার সময় চলে আসবে জানিয়ে সচিব বলেন,বিদায়ী সাক্ষাৎ তারা চেয়েছেন এবং সেটি হয়ে যাবে।এর সঙ্গে অন্য যাদেরটা জমে আছে তারাও দেখা পাবেন।অর্থাৎ পুরো বিষয়টি সেপ্টেম্বরের পরে স্বাভাবিক হবে।মাসুদ বলেন,রাষ্ট্রদূত দেখা করতে পারছেন না এটি একটি নন-ইস্যু এবং এ বিষয়টি বড় আকারে দেখা দিয়েছে।এগুলো একদম আমলে নেওয়া ঠিক হবে না। প্রেস স্বাধীন এবং তারা তাদের মতো লিখছে।কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু নিউজপোর্টাল, বিশেষ করে ভারতের কিছু পোর্টাল বানোয়াট খবর ছাপাচ্ছে। সেখানে কিছু ছবি ছাপা হয়েছে যেগুলো ফটোশপ করা।এই পোর্টালগুলো কিছু ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট করে সংবাদ ছাপাচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, প্রেস স্বাধীন আছে।কিন্তু আমরা তাদের উৎসাহ দিতে পারি যাতে এ ধরনের অবান্তর বিষয় না লেখে।সেটি আমাদের দেশে হোক বা তাদের দেশে হোক।
এ বিষয়টি দুই সচিবের বৈঠকে উঠবে কিনা জানতে চাইলে মাসুদ বলেন,আমরা যেটি চাচ্ছি তাদের কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি দেখে।আমরা হয়তো আলোচনার মধ্যে রাখতে পারি। কারণ, আমরা চাইবো দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে এ ধরনের ডিসট্র্যাকশন যেন না হয়।ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ এবং এটি যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন,অনেক ভালো কাজ হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট,ট্রেনে কার্গো চলাচল হচ্ছে। প্রচুর বাংলাদেশি আটকে ছিল এবং তাদের ফেরত আনা হয়েছে।এছাড়া দুই দেশের মধ্যে প্রকল্পগুলোও বসে নাই।
বৈশ্বিক অস্থিরতা
উপমহাদেশে একটি অস্থিরতা আছে এবং এটি বৈশ্বিক অস্থিরতার একটি অংশ জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন,যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ বা ভারতের সঙ্গে চীনের সম্প্রতি ঝামেলা হলো- এই বিষয়গুলো কীভাবে আসবে আমি জানি না। তবে আলোচনা হতে পারে। তবে এই বিষয়গুলো আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনও ডিসট্র্যাকশন হিসেবে কাজ করবে না, এটি আমরা চাই।ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, একটার সঙ্গে আরেকটাকে গুলিয়ে ফেলাটা ঠিক হবে না।সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে এবং প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা ভিন্ন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে চীনের সম্পর্ককে তুলনা করলে সেটি ঠিক হবে না।অঙ্কের হিসাবে হয়তো বলবেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বেশি হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে কম হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজভাবে দেখাটা ঠিক হবে না।
হঠাৎ কেন এই সফর
হঠাৎ করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কেন আসছেন জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন,বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বিভিন্নমুখী এবং এখানে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সফর হতে পারে এবং অতীতেও হয়েছে।কোভিড না থাকলে এবং সময়টা স্বাভাবিক হলে আমাদের ভারতে একাধিকবার যাওয়া হতো জানিয়ে মাসুদ বলেন,ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এর আগে প্রায় ছয় মাস আগে এসেছেন এবং এরমধ্যে স্বাভাবিক ক্ষেত্রে তার দ্বিতীয়বার আসার সময় হয়ে গেছে।করোনার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।কিন্তু ইস্যুগুলো থেমে থাকছে না।কোভিড একটি বড় ইস্যু এবং এখানে সহযোগিতার বিষয় আছে।
কী কী বিষয় আলোচনা হবে
চীন,রাশিয়া,আমেরিকা ও অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে গবেষণা করছে এবং এরমধ্যে অক্সফোর্ডের বিষয়টি দেখছে ভারতীয়রা এবং তারা ট্রায়াল করছে।পররাষ্ট্র সচিব বলেন,ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এবং এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।এমনও হতে পারে আমাদের দেশে এই টিকা বানানো যেতে পারে।ভারত থেকে প্রচুর টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন,আমাদের দেশ থেকে অনেক মানুষের ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে চিকিৎসার কারণে অনেক লোক যায় এবং তারা এখন যেতে পারছেন না।’
সরকারের কাছে প্রচুর অনুরোধ আসছে জানিয়ে তিনি বলেন,আমি এই ইস্যুটি অবশ্যই তুলবো।আমরা যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী লোক আসতে দিচ্ছি তারাও যেন আমাদের লোক আস্তে আস্তে যেতে দেয়।বাণিজ্যের বিষয়ে সীমান্ত রাজ্যগুলো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দিয়ে রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন,কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কোনও কিছু নিষেধ করেনি এবং কেন্দ্র থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বিষয়টি সমাধান করার।ভারতের জাতীয় নিবন্ধন বা নাগরিকত্ব আইনের মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না এই সফরে আলোচনা হবে। ওদের পক্ষ থেকে যদি কোনও আপডেট থাকে বা রিঅ্যাসুরেন্স থাকে তবে আমরা সেটি অবশ্যই শুনতে চাইবো, তবে এটি নিয়ে আলোচনা করা বা মীমাংসা হওয়ার মতো বিষয় এখানে থাকবে না।’