চার বাংলাদেশিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো জাতিসংঘ
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
বাংলাদেশঃ মানবিক কাজের জন্য তিন বাংলাদেশি তরুণ এবং এক তরুণীকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত,ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান,অনুবাদক সিফাত নুর ও আঁখি।
বুধবার বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে তাদের এ স্বীকৃতি দেয়া হয়।মানবিক কাজে অনুপ্রেরণা জোগাতে জাতিসংঘ ওই চারজনকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তথ্য প্রকাশ করে।এদের প্রত্যেকেই মানবিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করে জাতিসংঘ।জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে,করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তানভীর হাসান সৈকত মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় সৈকত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ব্যাগ এবং ব্যাগেজ নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন নি।বরং তিনি প্রান্তিক মানুষদের সাহায্য করার কথা ভেবেছিল এবং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিলেন।
এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত বলেন,জাতিসংঘের মতো একটি জায়গা থেকে রিয়েল লাইফ হিরো হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া গর্বের ব্যাপার।জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে গণমানুষের জন্য কাজ করতে আমাকে উৎসাহ যোগাবে,আমার কাজের গতি বাড়িয়ে দিবে৷ ভবিষ্যতে দেশের মানুষের জন্য পূর্বের মতোই আমি সবসময় কাজ করে যেতে চাই।
বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি আঁখি।এক সময়ে বাংলাদেশের আরো বহু শিশুর মতো শিশুশ্রমে নিয়োজিত আঁখিকে পুনর্বাসনে সহায়তা দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন।বয়সের কারণে তাকে স্কুলে ফেরানো না গেলেও তাকে দর্জি কাজের প্রশিক্ষণ দেয় ওয়ার্ল্ড ভিশন।পরে তাকে দেয়া হয় একটি সেলাই মেশিন আর কিছু কাপড়।সেখান থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন নিজেই গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলার।বর্তমানে আঁখি তার মা এবং বড় বোনের সহায়তায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করেন।বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে দেখা দেয় মাস্ক সংকট।আর তখনই মাস্ক তৈরি শুরু করেন।কম দামে আশেপাশের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে এসব মাস্ক বিক্রি শুরু করেন তিনি।
জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি রিজভী হাসানের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। স্থাপত্য বিদ্যার পাঠ চুকিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের কাজ পান। তখনই তিনি দেখতে পান বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য স্বল্প খরচে আবাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে তিনি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় আক্রান্ত নারীদের সেবা প্রদানের জন্য স্বল্প খরচে নিরাপদ স্থান গড়ে তোলা শুরু করেন। এসব স্থানে রোহিঙ্গা শিবিরের নারীদের কাউন্সেলিংসহ নানা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্যতিক্রমী এসব স্থাপনার মাধ্যমে বহু নারীকে নিরাপদে সেবা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে পারছে ব্র্যাক ও ইউনিসেফ।অনুবাদের কাজ করে বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ সিফাত নুর।জাতিসংঘ মনে করে যেকোনো সংকটের সময়ে খাবার,পানি ও আশ্রয়ের মতোই মানুষের দরকার পড়ে তথ্য ও যোগাযোগের।এসব তথ্য ও যোগাযোগ হতে হয় তাদের নিজস্ব ভাষায়।আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে একজন অনুবাদকের কাজ। জাতিসংঘ বলছে, সিফাত মানবিকতার নায়ক কারণ তিনি জটিল, জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন।