আজ রানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস
আকবর হােসেন
১লা সেপ্টেম্বর।আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক একটি দিন।১৯৭১ সালের এদিনে জগন্নাথপুর উপজেলাধীন,ভাটি অঞ্চলের অন্যতম নৌবন্দর রানীগঞ্জ বাজারে সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক নিষ্ঠূরতম গণহত্যা।পাকহানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে শতাধিক নিরপরাধ মানুষ এবং জ্বালিয়ে দেয় বাজারের অনেক দোকানপাট।সেদিনের হত্যাকান্ডের শিকার হন আমার বাবা রানীগঞ্জ বাজার কমিটির তৎকালীন সভাপতি শহীদ আকলু মিয়া ও আমার খালু আব্দুল মজিদ (যার লাশ পাওয়া যায়নি)।আরো যারা শহীদ হন তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও আকিল হোসেন (সহোদর),আলতা মিয়া,তছর উদ্দিন,সোনাহর আলী,মিছির আলী,আব্দাল মিয়া উল্লেখযোগ্য।তাদের সাথে আরো ছিলেন বাজারে আসা খরিদ্দার,শ্রমিক যারা সওদাপাতি বা কাজ করতে প্রতিদিনের মতো এসেছিলেন বাজারে।ঘাতকদের ব্রাশ ফায়ারে তাদের স্বপ্নসাধ ধুলিস্মাত হয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবনযুদ্ধের সংগ্রামী সৈনিক ছোটচাচা আকল মিয়াকেও গাজী হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়। আরেক যোদ্ধাহত মজমিল মিয়াও এখন পরপারে। আরো যারা আহত হন তারা হলেন বিনোদ রায়, ক্বারী এখলাছুর রহমান, তফজ্জুল হোসেন, ওয়াহিদ আলী প্রমূখ। বর্বর এই হত্যাকান্ডের ৪৯ বছর পরও কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি শহীদ গাজীর স্মৃতি বিজড়িত রানীগঞ্জের। আজো পৰ্যন্ত শহীদ-গাজীর কোন তালিকা হয়নি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যারা এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের নিয়মিত রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা শহীদ-গাজীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী জানাচ্ছি এবং একইসাথে রানীগঞ্জ সেতুকেও শহীদ-গাজীর স্মৃতি বিজড়িত নামে নামকরণ করার আহবান জানাচ্ছি।লাখো শহীদের রক্ত,আর অসংখ্য মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা।আমরা স্বজন হারিয়েছি;আমাদের দুঃখ নেই। কারণ এর বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি।পেয়েছি একটি স্বাধীন ভূখন্ড, একটি মানচিত্র এবং লাল সবুজের একটি পতাকা।
দিনটি আঞ্চলিকভাবে শোক দিবস হিসেবে প্রতি বছরই পালিত হয়।এদিনে শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশন সহ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাহিত্য-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, দোআ মাহফিল,শোক র্যালি,শহীদ স্মৃতিস্মম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ সহ ইত্যাদি কর্মসূচী থাকে।এবছর করুনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, স্বল্প পরিসরে, মঙ্গলবার বাদ জোহর রানীগঞ্জ জামে মসজিদে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল এবং বিকাল ৩টায় রানীগঞ্জ শহীদ আকলু মিয়া মার্কেটস্থ শহীদ গাজী পাঠাগারে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য শহীদ গাজী ফাউন্ডেশনের মূখপাত্র আবুল কাশেম আকমল আহবান জানিয়েছেন।এদিকে শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশন, ইউকে‘র উদ্যোগে রানীগঞ্জ গণহত্যায় নিহত সকল শহীদ ও যুদ্ধাহত গাজীদের স্মরণে আগামী ৬ই সেপ্টেম্বর, রোববার বিকাল ২ টা থেকে ৪টা পৰ্যন্ত “আমরা তোমাদের ভুলিনি“ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে।