করোনায় মৃত্যু ৪১ গণমাধ্যমকর্মীর
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ মহামারি করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বিপর্যস্ত বিশ্বের প্রায় সব জনপদ। সব বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষের জীবন-যাপনেই ছন্দপতন ঘটিয়েছে এই বৈশ্বিক অসুখ। মহামারির এই সঙ্কটকালেও সম্মুখভাগে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সংবাদকর্মীরা। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। আক্রান্ত হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের বড় একটি অংশ।পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও স্থানীয় পর্যায়ের ২০২টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১১১ জন সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ৪১ জন।করোনাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য বিনিময়ের জন্য তৈরি ফেসবুক গ্রুপ ‘আওয়ার মিডিয়া আওয়ার রাইটস’র সমন্বয়ক আহম্মদ ফয়েজ বলেন, সারাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের সমন্বয়ে করোনা আক্রান্ত সাংবাদিকদের হিসাব রাখছে ‘আওয়ার মিডিয়া আওয়ার রাইটস।
চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। লকডাউন শুরু হয় মার্চের ২৬ তারিখ। এসময় অন্যান্য পেশাজীবীদের ছুটি মিললেও নিস্তার ছিল না সংবাদকর্মীদের। হোম অফিসের পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনে ঝুুঁকি নিয়ে মাঠে নামতে হয়েছে সংবাদকর্মীদের।সংবাদকর্মীদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির খোকন। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানী উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তিনি মারা যান।আওয়ার মিডিয়া আওয়ার রাইটসের তথ্য মতে, দেশের ২০২টি মিডিয়া হাউজের মধ্যে ১২৩টি পত্রিকা, ৩২টি টেলিভিশন চ্যানেল, ৪০টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ৫টি রেডিও এবং ২টি নিউজ এজন্সিতে ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮০২ জন ও ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছে ৩০৮ জন। এখন পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২২ জন।
এই গ্রুপের তথ্যমতে, সর্বোচ্চ ৬৬ জন শনাক্ত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলোতে। এরপরই বিটিভি ৬২ জন, দৈনিক সমকাল ৩৮ জন, একাত্তর টিভিতে ৩৪ জন, ৩১ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন ইত্তেফাক ও সময় টেলিভিশনে, এনটিভি ৩০ জন, কালেরকণ্ঠের ২৯ জন, চ্যানেল আই ২৭ জন ও যমুনা টিভিতে শনাক্ত হয়েছে ২৬ জন।টেলিভিশনকর্মীদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ (৩১ মে)।অন্য একটি হিসাব বলছে, সবচেয়ে বেশি আক্রন্ত হয়েছেন টেলিভিশন সংবাদকর্মীরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় ৪৪৫ জন টেলিভিশন সংবাদকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। দৈনিক পত্রিকাগুলোর ঢাকা ও ঢাকার বাইরেসহ আক্রান্ত হয়েছেন ৪০১ জন।এছাড়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল, নিউজ এজন্সি ও রেডিওর বিভিন্ন পর্যায়ের ২৬৪ জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।
মারা গেছেন যে ২৯ গণমাধ্যমকর্মী
প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ, দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির খোকন, সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সম্পাদক খন্দকার মোজাম্মেল হোসেন, বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক হান্নান খান, এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহীদ, দৈনিক যুগান্তরের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল, বিটিভির বার্তা প্রযোজক ফিরোজা মান্না, দৈনিক ইনকিলাবের সাবেক চিফ রিপোর্টার প্রবীণ সাংবাদিক মো. নূর উদ্দিন ভুঁইয়া ও সিনিয়র সাংবাদিক এইউএম ফখরুদ্দিন।
জেলা প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা মারা গেছেন
ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের কক্সবাজার প্রতিনিধি আব্দুল মোনায়েম খান, দৈনিক উত্তরকোণ (বগুড়া) সম্পাদক মোজাম্মেল হক, দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা, যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক নওয়াপাড়া পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বেলাল হোসেন, বগুড়ার আঞ্চলিক সাপ্তাহিক হাতিয়ারের নির্বাহী সম্পাদক সাইদুজ্জামান তারা।মৃতের তালিকায় আরো রয়েছেন, সপ্তাহিক উত্তমাশার সম্পাদক খন্দকার ইকরামুল হক, গোপলগঞ্জের পাক্ষিক মকসুদপুর পত্রিকার সংবাকর্মী এম ওমর আলী, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বার্তা সম্পাদক আব্দুল্লাহ এম হাসান, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক জাহান পত্রিকার সম্পাদক রেবেকা ইয়াসমীন, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের বরগুনা প্রতিনিধি প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল আলীম হিমু, সিলেটের আঞ্চলিক দৈনিক উত্তরপূর্বের প্রধান সম্পাদক আজিজ আহমদ সেলিম, সিনিয়র সাংবাদিক এইউএম ফখরুদ্দিন, আরটিভির সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সুকান্ত সেন, পাক্ষিক আলোর মিছিল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আতাউল হক।
এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের জনসংখ্যা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেলের পরিচালক আমানুল্লাহ মাসুদ হাসান, এটিএন বাংলার অর্থ ও হিসাব বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহসান হাবীব, দৈনিক জবাবদিহির সহকারি সার্কুলেশন ম্যানেজার শেখ বারিউজ্জামান, ডেইলি স্টারের স্টোর বিভাগের কর্মী শ্যামল বিশ্বাস।
অন্যদিকে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বিভিন্ন বিভাগের ১২ গণমাধ্যমকর্মী। এরা হলেন, দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র সাবএডিটর মাহমুদুল হাকিম অপু, দৈনিক ভোরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার আসলাম রহমান, দৈনিক বাংলাদেশের খবরের প্রধান আলোকচিত্রী মিজানুর রহমান খান, দৈনিক নয়া দিগন্তের সাবেক অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী, দৈনিক বগুড়া পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ওয়াসিউর রহমান রতন, আজকের সিলেট ডটকমের (বালাগঞ্জ) প্রতিনিধি লিটন দাস, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সিনিয়র সাংবাদিক সুমন মাহমুদ, দৈনিক সমাচার ও চাঁদপুর জমিন পত্রিকার ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত, রাজশাহীর দৈনিক সোনালী সংবাদের চিফ রিপোর্টার তবিবুর রহমান মাসুম, ফেনীর স্থানীয় সাপ্তাহিক হকার্সের প্রকাশক ও সম্পাদক নূরুল করিম মজুমদার, সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মহসিন হোসেনী ও খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ওয়াদুদুর রহমান পান্না।