জিয়া,এরশাদ,খালেদা প্রত্যেকেরই একই চরিত্র: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ দীর্ঘ ২১ বছর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছিল,সে বিষয়ে আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,জিয়ার পরে এরশাদ এসেছে,এরশাদের পরে খালেদা জিয়া এসেছে, প্রত্যেকেরই একই চরিত্র।শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।একসঙ্গে সর্বমোট ৬৯ হাজার ৯০৪ জন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম। যার মাধ্যমে মুজিববর্ষে পিতার স্বপ্ন পূরণের সারথী হিসেবে আরেকটি মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনে ঘোষণা শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ৪৯২ টি উপজেলা প্রান্ত ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মুজিববর্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পাশাপামি মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।তিনি চার জেলার চারটি গ্রামে যুক্ত হন।

এর মধ্যে খুলনার ডুমুরিয়া,নীলফামারী,সৈয়দপুর,হবিগঞ্জের চুনারুঘাট,চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সে করা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ কী পেয়েছিল তখন? অনেকে গালভরে কথা বলেন গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে। গণতন্ত্রের অধিকারটা কী? একটা মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে একদিন ঘোষণা দিল যে ‘আজকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম’ আর তারপরই সেটা গণতন্ত্র হয়ে গেল। হ্যাঁ, অনেকগুলি রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিল, কিন্তু মানুষকে দুর্নীতি করা, মানি লন্ডারিং করা, ব্যাংকে ঋণ খেলাপী করা, টাকা ছাপিয়ে নিয়ে এসে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ সেই কথা শোনানো, এবং ‘আই ইউল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ান’ এই কথাও জিয়াউর রহমান বলে গেছে। কাজেই জিয়াউর রহমানের কাজই ছিল এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা।’

বিএনপির গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন,এদেশের মানুষকে দরিদ্র থেকে দরিদ্র রাখা আর মুষ্টিমেয় লোকদের টাকা-পয়সা দিয়ে একটু অর্থশালী-সম্পদশালী করে দিয়ে তাদেরকে দিয়ে তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে পারে তার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। আমাদের মেধাবী ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদেরকে বিপথে ঠেলে দেওয়া। নির্বাচনের নামে প্রহসন সৃষ্টি করা।‘হ্যাঁ-না ভোট করল। না ভোট নেই। এরপরে সেনাপ্রধান হয়েও নিজেকে সে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে, রাষ্ট্রপতি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তারপরে দিল সংসদ নির্বাচন, সেটিও আরেক প্রহসন। আগে থেকেই ঠিক করা, আওয়ামী লীগকে ৪০টার বেশি সিট দেবে না, ৩৯টা সিট দিয়েছিল।’

‘সেগুলি কি গণতন্ত্র? যারা গণতন্ত্রের জন্য এখন এতো কথা বলেন, তাদেরকে আমার এটিই প্রশ্ন এটি কী করে গণতন্ত্র? একটা দল হলো, হাঁটতে-চলতেও শিখল না। ক্ষমতায় বসে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলের সৃষ্টি, সেই ক্ষমতায় আসে আর মানুষ পায় না এটা হয় কখনও?’

বাংলাদেশে এই ধরনের একটা সম্পূর্ণ মানুষকে কিভাবে শোষণ করা যায়, মানুষকে কীভাবে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায়, কিভাবে এদেশের মানুষের মানে সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া যায়, সেই কাজগুলোই কিন্তু ২১ বছর চলেছে বলে আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কারণ জিয়ার পরে এরশাদ এসেছে, এরশাদের পরে খালেদা জিয়া এসেছে, প্রত্যেকেরই একই চরিত্র।দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন বলেই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলাম। নৌকার জয় হয়েছিল জনগণের আন্দোলনের ফসল হিসেবে।২০০৮ আমাদের জন্য সত্যি আরেকটা অন্ধকার যুগ। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সেই সময় সৃষ্টি হল। যার জন্য ইমার্জেন্সি সৃষ্টি হল। বন্দি হয়ে গেলাম আমি। তারপরও আমি আশা ছাড়ি নাই। আল্লাহ একদিন সময় দেবে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারব’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দিতে না পারার আক্ষেপ করে বলেন,করোনাভাইরাস নামে এমন একটা ভাইরাস আসল,সারাবিশ্ব স্থবির। আজকে আমি এখানে বসে আমাকে ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে।আর এই ঘরগুলো দিতে হচ্ছে। আমার খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল।নিজের দাঁড়িয়ে আপনাদের হাতে জমির দলিল তুলে দেই।কিন্তু সেটি পারলাম না।এই করোনা ভাইরাসের কারণে।যারা নতুন বাড়ি পেয়েছেন তাদের বাড়ির পাশে গাছ লাগানোর অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য তিনি দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৪৯২ উপজেলায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারের প্রত্যেকের মাঝে বাড়ির জমির মালিকানার দলিল হস্তান্তর করেন।এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন উপকারভোগীর সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

You might also like