পশ্চিমবঙ্গের চিঠিঃ ভোট এল বঙ্গে
দিলীপ মজুমদার
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে।বিধানসভা নির্বাচন ২৭ মার্চ থেকে শুরু। তারপরে আরও সাত দফা। গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে চলবে দফায় দফায়। জনগণেশের দফারফা হবে কি না বলতে পারি না। ২ মে হবে ফলাফল ঘোষণা।
বরাবর এ রাজ্যের নির্বাচন মানেই এক উত্তেজনা। সেই উত্তেজনা শুরু হয়েছিল গত শতকের ষাটের দশক থেকে, লড়াই লড়াই লড়াই চাই বলে। কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বামেরা। গৌরবে বহুবচনের মতো বাম হলেও আসলে সিপিআইএম ছিল তার প্রাণকেন্দ্র। তারপরে চলল চৌত্রিশ বছরের একছত্র আধিপত্য। শেষের দিকে সকলে ভাবতে শুরু করেছিলেন যে সিপিএমের রাজত্বের সূর্যাস্ত হবে না। কিন্তু হল। ২০১১ সালে হল পরিবর্তন। মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল দল ক্ষমতায় এল। ২০১৬ তে পেল আরও বেশি ভোট। এর মধ্যে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি ২০১৪ তে। তারপরে ২০১৯ য়ে আরও বেশি ভোট পেয়ে বিজেপি জাঁকিয়ে বসল। এর মধ্যে কংগ্রেস দলটি ক্রমাগতভাবে ভেঙে চুরমার হচ্ছিল। বামেরাও দীর্ণ-জীর্ণ। একেবারে ফাঁকা মাঠ, কোন প্রতিপক্ষ নেই। বিজেপি গোলের পর গোল দিয়ে চলল, ক্ষমতা দখল করতে লাগল একের পর এক রাজ্যে।
এবারের পশ্চিমবঙ্গের ভোটটায় বিজেপির পাখির চোখ। এ রাজ্যে জিততে পারলে দেশের পূর্বাঞ্চল গেরুয়া রঙিন হবে। তৃণমূল সরকারের বেশ কিছু ত্রুটিবিচ্যুতিকে হাতিয়ার করে অগ্রসর হচ্ছে বিজেপি। সেই সঙ্গে আছে কাঞ্চনরঙ্গ। আইটি সেলের প্রচার তরঙ্গ। মোদি-সাহ ঘন ঘন উড়ে আসছেন রাজ্যে। বাঙালির মন জয় করার জন্য বাঙালি মনীষীদের উক্তি আওড়াচ্ছেন, দাড়ি রাখছেন রবীন্দ্রনাথের মতো, বাঙালি মহাগুরু অভিনেতাকে টেনে আনছেন মঞ্চে। তিনি ফিল্মি কায়দায় তাতিয়ে দিচ্ছেন জনগণকে। বলছেন, ‘মারব লাশ এখানে, পড়বে গিয়ে শ্মশানে’। বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি জাত কেউটে, যার এক ছোবলে ছবি হয়ে যাবে প্রতিপক্ষ।
জমে উঠেছে নির্বাচনী রঙ্গ। এ দল থেকে সে দলে। সেই ছিল রুমাল হয়ে গেল বিড়াল। বিজেপির দিকে ঢলটা বেশি। তৃণমূলের এমএলএ, এম পি রা ছুটে যাচ্ছেন, যাচ্ছেন তারকারা। বেশ অবাক লাগে বুড়োদের এই খোকামি। গতকাল যিনি ‘দিদি দিদি’ বলতে অজ্ঞান ছিলেন, আজ তিনি ‘দাদা দাদা’ বলে ডুকরে উঠছেন। গতকাল যিনি ধ্রুবতারা, আজ তিনি সর্বনাশের দূত।
দলবদলের সঙ্গে আছে কুকথার বন্যা। সৌজন্যের সীমা পেরিয়ে এসেছেন আনেক আগে। এখন ‘তুই-তোকারি’ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে আর একটা কথা ঘুরছে চারদিকে: ‘খেলা হবে’। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যে এক ভয়ংকরতার গন্ধ পাচ্ছেন। কোন কোন আনপড় লোক বলছে এর মধ্যে বারুদের গন্ধ আছে। এ রাজ্যের নির্বাচনে মানি পাওয়ারের সঙ্গে মাসল পাওয়ারের মণি কাঞ্চন যোগ ঘটে থাকে।
সব দেখেশুনে আমরা কবিগুরুর গান ধরেছি: ‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে/ তখন কে তুমি তা কে জানত?’
লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।