শিল্পী শাহাবুদ্দিনের মধ্যেই পিকাসোকে দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন: নিউজিল্যান্ড সরকারের বৃত্তি ফিরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছায় প্যারিসকেই বেছে নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা পদক বিজয়ী শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বরেণ্যচিত্র শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তিনি অনেকটাই স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলেন। বিখ্যাত চিত্রকর পিকাসোকে সেই সময় ততটা চিনতেন না শিল্পী শাহাবুদ্দিন, বঙ্গবন্ধু যখন বলেছিলেন, “প্যারিসে গিয়ে পিকাসোকে ছাড়িয়ে যেতে পারবি না?” তখনই লাইব্রেরীতে গিয়ে পিকাসো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন শাহাবুদ্দিন। তবে শাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্ম দ্বারা অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের বাছাই করা চিত্রকর্ম নিয়ে ভার্চুয়াল প্রদর্শণীর ব্যবস্থা ছিলো অনুষ্ঠানে। শিল্পী শাহাবুদ্দিন ছাড়াও ‘চিত্রকলা ও ছবির ভাষায় ৭১’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে শিল্পী মাসুদ মিজান ও এস এম আসাদ, মুক্তিযোদ্ধা ফটোগ্রাফার আবদুল হামিদ রায়হান, বাংলাদেশের প্রথম ডাক টিকেট ডিজাইনার বিমান মল্লিকের ডাক টিকেট ও সাংবাদিক তানভীর আহমেদের সংগৃহিত ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের ৫০টি দূর্লভ ছবি ও চিত্রকর্ম স্থান পায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনির। শহীদ পরিবারের সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের পরিবারের উপর নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের পরিচালনা পরিষদের অন্যতম সদস্য থার্ড সেক্টর কনসালটেন্ট বিধান গোস্বামী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অ্যালামনাইদের নিয়ে গঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে যুক্তরাজ্যের পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগঠন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অর্জনের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে। করোনা মহামারীর কারণে এবারের স্বাধীনতা দিবসের ভার্চুয়াল আলোচনার বাস্তবতার কথাও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার অজয় রায় রতন, ডক্টর মাহফুজুর রহমান, ব্যারিস্টার কাজী আশিকুর রহমান, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, পুস্প দেব, তাসলিমা খান, ঝুমুর দত্ত, ফাতেমা লিলি, পলি জাহান, রেহানা ফেরদৌস মনি, শাহিনা জাবিন ও শায়লা শিমলা।
অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের গণসঙ্গীত শিল্পী ফজলুল বারী বাবুর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত গান ও শর্মিষ্ঠা পন্ডিতের নৃত্য প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়াও বাচিক শিল্পী পপি শাহনাজ ও তানজিনা নূর ই সিদ্দীকীর মুক্তিযুদ্ধের কবিতা উপস্থিত দর্শকদের অশ্রুসিক্ত করে তুলেছিলো।
অ্যালামনাইদের সন্তানদের মধ্যে ইশাল ফাতেহা সরকার ও মেহেদী মর্তুজা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে তাদের অনুভূতির গল্প পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন ও রচনা লিখন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। পুরো আয়োজনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।