লন্ডন হাইকমিশনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ৫০ তম বার্ষিকী পালিত
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বাংলাদেশ হাইকমিশন,লন্ডন আজ যথাযথ মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ৫০তম বার্ষিকী পালন করেছে।এ উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট গবেষক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুিজবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দীনআহমদ, ক্যাপ্টনে এম মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম, এ, জিওসমানী এবং মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশলাখ শহীদ ও দুইলাখ বীরাঙ্গনা সহ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধানিবেদন করেন ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব নগর সরকারের অবদান বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরব গাথা হয়ে থাকবে।”তিনি মুজিবনগরে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার মত একটি‘ লিবার্টি বেল’ (স্বাধীনতার ঘন্টা) স্থাপন ও সেখানে প্রতি বছর এপ্রিল মাসে মন্ত্রিসভার একটি প্রতীকী বৈঠক অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব করেন।এছাড়া তিনি মুজিব নগরে অবস্থিত বর্তমান যাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ করাসহ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার ওপর এবং মুজিবনগরে মুজিব নগর সরকারের ওপর দুটি আলাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব করেন।যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে মুজিববর্ষের মুজিব নগর দিবস উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব নগর সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকারকারী সামরিক, আধা-সামরিক, কূটনৈতিক ও জনপ্রশাসনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারি সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের অবদানের কথা উল্লেখ করে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
মুজিব নগর সরকার গঠনের পটভূমি ও ভূকৌশলগত তাৎপর্য তুলে ধরে হাই কমিশনার বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জন প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত মুজিব নগর সরকার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন আদায়, শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা ও মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।হাই কমিশনার তাসনীম ভারত, ভূটান, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য সহ মুজিব নগর সরকারের ও মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু প্রতিম বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর অসামান্য সহযোগিতার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাথা উঁচুকরে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়েচলা একটি অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীলও সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশকে‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের কর্মযজ্ঞে অংশ নেয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের প্রতি আহবান জানান।বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মুজিব নগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির সফরের কথা স্মরণ করে বলেন,“এডওয়ার্ড কেনেডি মুজিব নগরকে ফিলাডেলফিয়ার সাথে তুলনা করেছিলেন যেখানে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠকরা হয়েছিল।”এ প্রসঙ্গে তিনি মুজিব নগরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে ফিলাডেলফিয়ার মতো কিছু সরকারি দপ্তর সেখানে স্থাপন করার আহবান জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃকর্ণেল (অবঃ) কাজী সাজ্জাদ আলীজহির, বীরপ্রতিক, তাঁর বক্তব্যে কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিব নগর সরকার প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক পটভূমির বর্ণনা করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় মুজিব নগর সরকারের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার মুজিব নগরকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন এবং স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রকে মুক্তিযুদ্ধের ১২তম সেক্টর হিসেবে উল্লেখ করে ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীদের অসামান্য ভূমিকারকথা স্মরণ করেন।
এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, লন্ডন ভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টাডি সার্কেলের সভাপতি ও যুক্তরাজ্যে ৭১-এর স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্য সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রগতিশীল নেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসীবীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন। অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবসের ও পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং এই ঐতিহাসিক দিবসের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্ যচিত্র প্রর্দশন করা হয়। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এতে অংশ গ্রহণ করেন।