মির্জা আব্বাসের ব্যাখ্যার অপেক্ষায় বিএনপি

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাস দলের নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়ে গত ১৭ এপ্রিল যে উত্তাপ সৃষ্টি করেছেন, তা তিনি নিজেই সমাপ্তি টানবেন নাকি পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে, সেটা পরিষ্কার হবে আগামীকাল শনিবার (২৪ এপ্রিল)। এদিন বিকালে অনুষ্ঠেয় ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকের দিকেই এখন দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সরাসরি বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা থাকায় দলের অন্য কোনও নেতাই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। বরং পরিস্থিতি কতখানি সামনে এগোয়, তা নিয়ে অগ্রিম আলোচনা শুরু হয়েছে বিএনপিতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ও দলের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর দেশে-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করায় আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থাও বিষয়টিকে তার সামনে এনেছে। একইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরেও সৃষ্টি হয়েছে ভুল বুঝাবুঝির। ১৭ এপ্রিল ভার্চুয়ালি বক্তব্যের পর ১৮ এপ্রিল সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে মির্জা আব্বাস নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেও বিএনপির হাইকমান্ড তাতে সন্তুষ্ট হননি। বরং বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সেদিনের বক্তব্যের তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে চিঠি পাঠানো হয় মির্জা আব্বাসের কাছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী নিখোঁজের নবম বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যারা আজকে ইলিয়াসকে গুম করেছে, আমি জানি, আওয়ামী লীগ সরকার গুম করে নাই। কিন্তু গুমটা করলো কে? এই সরকারের কাছে আমি জানতে চাই। এই সরকারের কাছে আমি এটা জানতে চাই।’

‘পুরো বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের বিষয়টি ১৭ এপ্রিল রাতেই বিএনপির হাইকমান্ডের নজরে আসে। এরপর দলের কিছু নেতাকর্মী তাকে প্রতিক্রিয়া জানায়। এরপর বিদেশি কিছু সংস্থার পক্ষ থেকেও বিষয়টিতে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। মির্জা আব্বাস দলের প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির নেতা হওয়ার কারণে শীর্ষ নেতৃত্ব পুরো বিষয়টিকে নিজের তত্ত্বাবধানে নেন।স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দলের অনেকেই হয়তো মতামত দিতে পারেন। কিন্তু স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে বলতে পারি—এ বিষয়টি নিয়ে প্রায় সব সদস্যই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যা ভালো মনে করেন, তা-ই করবেন।’

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলছেন, মতামতের ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাইরে অন্য কোনও উপায় অবলম্বন না করাই শ্রেয়তর। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে কমিটির সদস্যদের পারস্পরিক বিরোধের সুযোগ তৈরি হওয়ায় এবং একই সঙ্গে মির্জা আব্বাস দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ভার এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে।বিএনপির একাধিক প্রভাবশালী দায়িত্বশীল জানান, দলের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি থাকাকালেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বর সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। যে কারণে তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে, এমনকি দল থেকেও। সেই ঘটনার ১৯ বছর পর আবারও বিএনপিতে শীর্ষ পর্যায়ের কোনও নেতার সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হবে কিনা, এ বিষয়টি লক্ষণীয়। তবে সূত্রের পর্যবেক্ষণ, সৃষ্ট বিতর্ক থেকে বেরুনো সম্ভব মির্জা আব্বাসের ব্যাখ্যার মধ্য দিয়েই। তিনি পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবেন, এর ওপর নির্ভর করছে ঘটনার পরবর্তী বিচ্ছুরণ ঘটবে কোনদিকে।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক নেতার কাছে প্রশ্ন ছিল, মির্জা আব্বাসের ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি শেষ হবে কীভাবে সেটা বলা যাচ্ছে না। মির্জা আব্বাসকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাও শীর্ষ নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত্বাবধানে করা হয়েছে। দেশের বাইরে মূল যে সমস্যা, সেটাও তিনি ফেস করছেন। ফলে সিদ্ধান্ত নিলে তিনি একাই নেবেন। অন্য সদস্যরা তার ওপরই দায়িত্ব ছেড়েছেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নেতারা সংসদে যোগদান থেকে বিরত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানের নির্দেশে সংসদে যায় বিএনপি। ওই সময়ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে তার ওপর দায়িত্ব ছেড়েছিলেন।দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ‘মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পুরো বিএনপিই বিপদে পড়েছে। দলকে বিপদে ফেলার পরও দলের নেতৃত্ব তাকে অসম্মান করেনি। দলের চিঠি পর্যন্ত বাইরে বের হয়নি এ আন্তরিকতায়। একইসঙ্গে তার বক্তব্যের বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে পরিপ্রেক্ষিত উল্লেখ করে। ফলে, সহনশীলতার মধ্য দিয়েই এ পরিস্থিতি থেকে বেরুনো সম্ভব।’

ব্যাখ্যা দেবেন মির্জা আব্বাস

দলের ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠানো চিঠি গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) পেয়েছেন মির্জা আব্বাস। তার পক্ষ থেকে সরাসরি গণমাধ্যমে প্রাপ্তি স্বীকার করা না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে স্বীকার করেছে। একইসঙ্গে বিএনপির ঢাকা মহানগরের প্রভাবশালী এই নেতা উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেবেন বলেও জানা গেছে। তবে চিঠির বিষয়টি দলীয়ভাবে গোপন থাকায় তিনি জবাবও দেবেন নীরবে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে মির্জা আব্বাস বাংলা ট্রিবিউনের কাছে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের ভাষ্য, মির্জা আব্বাস চিঠির উত্তর দেবেন। যে প্রক্রিয়ায় চিঠিতে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে এবং জবাব দিতে বলা হয়েছে, সে প্রক্রিয়াতেই তিনি দেবেন।সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

You might also like