২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীর সঙ্গে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন মামুনুল
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকাঃ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন দাবি করে পুলিশ বলছে, তাদের একজনের সঙ্গে প্রায় দেড় মাস পাকিস্তানেও ছিলেন তিনি।রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরতে রোববার (২৫ এপ্রিল) বিকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশীদ।তিনি বলেন, মামুনুল হকের জব্দ করা মোবাইল ফোন থেকে বাবরি মসজিদের নামে কাতার, দুবাই ও পাকিস্তান থেকে টাকা আনার তথ্য-প্রমাণও মিলেছে।জিজ্ঞাসাবাদে ‘জঙ্গিবাদের’সঙ্গে মামুনুলের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে উল্লেখ করে উপ-কমিশনার হারুন জানান, তার ভগ্নিপতি মাওলানা মুফতি নেয়ামত উদ্দিন মাওলানা তাজউদ্দীন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। একবার নেয়ামত উদ্দিন গ্রেফতারও হয়েছিল। তাকে পরে ছাড়িয়ে আনে। এই নেয়ামতের সঙ্গে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে গিয়ে ৪৫ দিন ছিলেন মামুনুল। সেখানে বিভিন্ন জঙ্গি-রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানে ৪০ দিন অবস্থান করেন মামুনুল হক। সেখান থেকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শ নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। মামুনুল হক হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা নেয়ার পায়তারা করছিল। রিমান্ডে শাপলা চত্বরে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কথার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।ডিসি হারুন বলেন, মামুনুলের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নেয়ামতউল্লাহ দীর্ঘদিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানে ১৫/২০ বছর সেখানে তিনি একটি মাদ্রাসায় ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ফিরে নেয়ামমউল্লাহ মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে তিনি মামুনুলের বোনকে বিয়ে করেন। ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন নেয়ামতউল্লার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার পর নেয়ামতউল্লাহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। মামুনুলের হকে বাবা আল্লামা আজিজুল হক (নেয়ামতউল্লার শ্বশুর) ছিলেন চারদলীয় নেতা। তার আনুকূল্যে তখন নেয়ামতউল্লাহ ছাড়া পান। তাজউদ্দিনের সঙ্গেও মামুনুলের যোগাযোগ আছে।
পরের বছর নেয়ামউল্লাহর সঙ্গে মামুনুল পাকিস্তানে গিয়ে ৪৫ দিন অবস্থান করে জানিয়ে ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় সংগঠনকে মডেল হিসেবে নিয়ে পাকিস্তানে দীর্ঘদিন তারা অবস্থান করেন। মূলত নেয়ামউল্লাহ দীর্ঘদিন পাকিস্তানে থাকার কারণে সেই সংগঠনের সঙ্গে লিয়াজো ছিল। তিনিই মামুনুলকে ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ওই সংগঠনের মডেলে তিনি বাংলাদেশে মওদুদী, সালাফি, হানাফি, কওমী, দেওবন্দী, জামায়াতসহ সকল মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করার চেষ্টা শুরু করেন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধিতাকারী সংস্থার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে সরকার উৎখাতের ছক এঁকেছিল হেফাজত নেতা মামুনুল হক।এর আগে ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেপ্তারের পরের দিন মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।