ছাতকে চাঁদাবাজ রকিব’র নিকট জিম্মি সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধ
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে এক ভূমিখেকো সিন্ডিকেট চক্রের চাঁদাবাজিতে অতিষ্টি হয়ে উঠেছেন সাধারন মানুষ। জাল দলিলে জমি বিক্রয়, অবৈধভাবে জমি জবরদখল করে চাঁদাদাবিসহ এ চক্রের বিভিন্ন হয়রানিমুলক কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন স্থানীয় নিরীহ সাধারন মানুষ।এ ঘটনায় গত বুধবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের কুম্বায়ন গ্রামের মৃত. আব্দুল করিমের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুল হামিদ।এতে এই ভূমিখেকো চক্রের মুলহোতা একই ইউনিয়নের দড়ারপাড় গ্রামের মৃত, আব্দুল খালিকের ছেলে রকিব আহমদ গংদের অভিযোক্ত করা হয়।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ভূমিখেকো রকিব আহমদ নিরীহ মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে নেওয়া তার পেশায় পরিনত হয়েছে। দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের মৌজা-কুম্বায়ন, জে এল নং ২৪৫, দাগ নং ৫৯৪, পরিমান ৩০ শতক ভূমি আব্দুল হামিদ এর মৌরসী স্বত্ব। আব্দুল হামিদ এই ভূমিতে চাষাবাদ ও ভোগ দখল করে আসছেন। আব্দুল হামিদের ঐ জমিতে হালচাষ করতে যান সেনপুর গ্রামের জুন্নুর আলী ও মারুফ। এসময় রকিব আহমদ বাঁধা প্রদান করেন এবং ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে এই জমিতে হালচাষ করতে দিবেনা বলে হুমকি ও একপর্যায়ে রকিব আহমদ অশালীন ভাষায় গালি গালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জুন্নুর আলী ও মারুফকে জমি থেকে তুলে দেন।অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, আব্দুল হামিদের ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামিল আহমদ, দলিল নং ৬১৭/২০২১ ইং তারিখ মুলে কুম্বায়ন মৌজাস্থি জে এল, ২৪৫, খতিয়ান-৮৮, দাগ নম্বর ৮২৭ ইহাতে .০১৬০ একর ও খতিয়ান- ১৪৯ দাগ নং-৮২৭ ইহাতে .০১৬০ একর এই দুই দাগে মোট .০৩২০ একর আমন জমি ক্রয় করেন ভূমিকেকো রকিব আহমদের আপন দুই ভাই রশিদ আহমদ ও তেরাই মিয়ার নিকট থেকে। কামিল আহমদ প্রবাসে থাকায় এই জমি দেখাশুনা করেন আব্দুল হামিদ। এই জমিতেও হালচাষ করতে গেলে ভূমিখেকো রকিব আহমদ বাঁধা প্রদান করে করেন।
আব্দুল হামিদের চাচা আব্দুল মছব্বির ও তার অপর চাচা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুর রউফ মারা যাওয়ার পর তাদের সন্তানেরা আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসে থাকায় তাদের সব জমি জামা দেখা শুনা করেন আব্দুল হামিদ। একই প্লটে ৫৯৬ দাগে প্রায় ১৮ শতক ভূমি ও ৫৯৫ দাগে প্রায় ১৮ শতক ভূমি আব্দুল হামিদের দুই চাচার মৌরসী স্বত্ব। এই জমিতে কুম্বায়ন গ্রামের আব্দুস ছুফান ও আব্দুল হামিদ হালচাষ করতে গেলে ভূমিখেকো রকিব আহমদ বাঁধা প্রদান ও চাঁদাদাবী করেন। দাবীকৃত চাঁদা না দিলে জমিতে চাষাবাদ করতে দিবেননা বলে হুমকি প্রদান করেন।ভূমিখেকো রকিব আহমদ নিরীহ মানুষের জমি জবরদখল করে চাঁদাবাজি এমনকি মসজিদের জায়গা জবরদখল করেছেন অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। দড়া নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে হাওরের পানি নিস্কাসনে বাঁধা ও কৃষকদের যাতায়াতে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃৃষ্টি করে আসছিলেন। ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট বরাবর আব্দুল হামিদের চাচাত ভাই আব্দুল মুকিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর পর সার্ভেয়ার কতৃক সার্ভে করা হয়। পরবর্তীতে ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট এর আদেশে ও উপস্থিতিতে দড়া নদীর উপর বাঁধ ভেঙ্গে ফেলা হয়। এতে স্থানীয় কৃষকদের মনে শান্তি বিরাজ করছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।এ ছাড়াও আব্দুল হামিদের অপর চাচাত ভাই ছুরত মিয়ার নিকট ভূমিখেকো রকিব আহমদ কতৃক চাঁদা দাবীর ঘটনায়ও ছাতক থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্ত আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পৃথক ভাবে উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রিট এবং ছাতক থানায় গিয়ে ভূমিখেকো রকিব আহমদ তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ভূমিখেকো রকিব আহমদ সকল অভিযোগ কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানীকরাসহ চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছেন। ভূমিখেকো রকিব আহমদের বিরুদ্ধে গরু চুরি ও গাড়ী চুরি, ভাংচুর, পুলিশ এসল্ট মামলাসহ ছাতক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রকিব আহমদ এক ভয়ায়নক অপরাধীর নাম বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।এ বিষয়ে জানতে অভিযোক্ত রকিব আহমদ মুঠোফোনে বলেন, এগুলো পুরাতন বিষয়। চাঁদাবাজি জমিতে হয়না, চাঁদাবাজি হয় শহরে। তিনি এ প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে আরো বলেন, সংবাদ প্রকাশ করা হলে বুঝে শুনে করবেন। তিনি আরো বলেন, আমার বাড়িতে এক বড় সাংবাদিক এসেছিলেন। সংবাদ প্রকাশ করা হলে এ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও হুমকি দেন রকিব আহমদ।এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যাচাই বাচাই ক্রমে প্রয়োজনী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।