লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের এসজিএম: মেম্বারশীপ পলিসিসহ সাংবিধানিক নানা পরিবর্তন

প্রেস রিলিজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডন: ইউকে বাংলা গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাংবিধানিক নানা বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। সম্প্রতি লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি হলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সাংবিধানিক এসব পরিবর্তন সাধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১২৭ জনের বেশি সদস্য এ বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টারসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সদস্যরা এতে যোগদান করেন।বিকাল ৫টায় শুরু হয়ে সভা চলে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়ের। বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন ট্রেজারার আ স ম মাসুম।প্রাণবন্ত বিতর্ক আর নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক আর যুক্তি-পাল্টা যুক্তির পরই বেশকিছু সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হা- না বা হাত তুলে ভোটাভুটির মাধ্যমে হয় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

সুনির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়াসহ

মেম্বারশীপ পলিসি:সদস্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিকতার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সুনির্দিষ্ট ক্রাইটেরয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য মেম্বার পদে আবেদনের বেলায় ইউকেতে নূন্যতম দুই বছর বসবাস এবং সর্বশেষ দু বছর ধারাবাহিকভাবে মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার যে সাংবিধানিক পুরোনো পলিসি রয়েছে সেটি এখোনো অব্যাহত আছে। যোগ হয়েছে কিছু প্রমাণাদির বিষয়। যেমন: টিভি ও অনলাইন এবং পত্রপত্রিকার রিপোর্টারকে সর্বশেষ বছরে অন্তত ৫টি রিপোর্ট প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। ফ্রি ল্যান্স হলে যথার্থ প্রমাণ থাকতে হবে এবং আবেদনের সাথে দিতে হবে অন্তত ৫টি প্রতিবেদন/ লেখা। আর যারা প্রত্যক্ষ সাংবাদিকতায় নন তারা নিউজ এবং কারেন্ট এফেয়ার্সে কীভাবে যুক্ত তার তিনটি বা চারটি সঠিক উদাহরণ দেবেন। উল্লেখ্য নতুন নিয়মে মেম্বারশীপ আবেদনের শেষ দিন ৩১ অক্টোবর।

নতুন পদ পদবি: এছাড়া ইসি মেম্বারের মোট ১৫ জনের সংখ্যা ঠিক রেখেই কিছু নতুন পদ এবং নতুন কিছু নামকরণ হয়েছে। এগুলো হলো- (নতুন পদ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এসিসট্যান্ট ট্রেজারার। এছাড়া নতুন নামকরণ হয়েছে অর্গনাইজিং এন্ড ট্রেনিং সেক্রেটারী, মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারী এবং ইভেন্ট এন্ড ফেসেলিটি সেক্রেটারী পদের।

ফাউন্ডিং ও মুক্তিযোদ্ধা মেম্বাররা বিশেষ মর্যাদা পাবেন: ইউকে জুড়ে ৩১৮ জন মেম্বারের ২৮ বছরের প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবের ফাউন্ডিং মেম্বাররা আজীবন কোনো সক্রিয়তার ডকুম্যান্ট ছাড়াই বিশেষ মর্যাদায় মেম্বার থাকবেন– ইসির প্রস্তাবিত এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়েছে। আর সদস্যের সম্পূরক প্রস্তাবে পাশ হয়েছে— ক্লাবের মুক্তিযোদ্ধা মেম্বাররাও আজীবন সমান মর্যাদা পাবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ক্লাবের সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের জন্য সদস্যপদ নবায়নের এই বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাঁরা শুধুমাত্র ফি জমা দিয়ে সদস্য হবেন।

শীর্ষ পদের রাজনীতিকরা মেম্বার পদে আবেদন করতে পারবেন না:
সাধারণ সদস্যদের সম্পূরক প্রস্তাবে পাশ হয়- ব্রিটেনে বাংলাদেশী রাজনৈতিক দল তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৬টি নির্ধারিত ও শীর্ষ পদে থাকা নেতারা ক্লাব মেম্বার পদে আবেদন করতে পারবেন না। যদিও ইসির পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিলো-যারা রাজনৈতিক নেতা কিন্তু একই সাথে সক্রিয় সাংবাদিক এবং তাদের সামাজিকভাবে তারা রাজনীতি থেকে সাংবাদিকতায় বেশী পরিচিত তারা মেম্বার থাকতে পারবেন। বিশেষ করে যারা বর্তমানে প্রেসক্লাবে আছেন তাদেরকে ছাড় দেয়ার প্রস্তাবও করা হয় ইসির পক্ষ থেকে। কিন্তু উপস্থিত সদস্যদের মতামতে চুড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত হয় যে, নেতৃত্ব পর্যায়ের পদে থাকলে মেম্বার হওয়া যাবে না। তবে রাজনৈতিক দলের অন্যান্য পদ বা সাধারণ সদস্য হলে কোনো সমস্যা নেই।

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
এই সাধারণ সভায় বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সাধারণ সদস্যের প্রাণবন্ত বিতর্কের পর বেশকিছু প্রস্তাব পাশ হয়েছে। আবার বাতিল হয়েছে কিছু প্রস্তাব। পাশ হওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, মহামারীসহ বিশেষ সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা না গেলে নির্বাহী কমিটি করণীয় ঠিক করতে পারবে। মেম্বারশীপ নবায়ন বা নির্বাচনের ব্যাপারে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।নতুন মেম্বারশীপ আবেদনে ডকুমেন্ট ও কতৃর্পক্ষের রেফারেন্স ছাড়াও দিতে হবে প্রস্তাবকারী এবং সমর্থনকারীর স্বাক্ষর।
এছাড়া, ন্যূনতম ২০ জন সদস্য রয়েছে এমন অঞ্চলে (যেমন মিডল্যান্ডস এবং নর্থ ইংল্যাণ্ড) তিন সদস্য বিশিষ্ট কোার্ডিনেশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। স্থানীয় সদস্যদের ভোটে ওই তিনজন নির্বাচিত হবেন। লন্ডনের বাইরের কোনো মেম্বার এ ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবেন না। ক্লাবের তহবিল সংগ্রহে পেট্রন নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিলো। সভায় পেট্রনের বদলে অন্য কোনো সম্মানসূচক পদবী (যেমন অ্যাম্বেসেডর) নির্ধারণ করে পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেম্বারশীপ স্ক্রুটিনি কমিটির সদস্য সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রস্তাবের বদলে সাধারণ সদস্যরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বর্তমান নিয়মে ইসি কমিটিই এর দায়িত্বে থাকবে।

উল্লেখ্য, ক্লাবের নির্বাহী কমিটি বিভিন্ন সময়ে সাধারণ সদস্যদের দাবী বিবেচনা করে সাংবিধানিক বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে। গত ১ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভায় এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা ছিলো। কিন্তু সেই সভায় প্রস্তাবগুলো আলোচনা হবে— কি হবে না, এমন বিতর্কে রাত গভীর হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সাংবিধানিক পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাব এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সদস্যদের দেয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ১৪ দিনের সময় দিয়ে নতুন করে বিশেষ সাধারণ সভার ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই সভা শেষ হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২ সেপ্টেম্বরের বিশেষ সাধারণ সভা।

You might also like