লন্ডনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্রিটিশ মন্ত্রী ও এমপিদের শ্রদ্ধা নিবেদন

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ বাংলাদেশের ৫১তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের দেয়া এক কূটনৈতিক সংবর্ধনায় ব্রিটিশ মন্ত্রী ও সিনিয়র সংসদ সদস্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে, জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায়, গণতন্ত্র ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য নেতৃত্বের অকুন্ঠ প্রশংসা করেন।

ওয়েস্টমিনস্টারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পাশে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী মেথডিস্ট চার্চ কনভেনশন সেন্টারের গ্রেট হলে সোমবার আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান ও কেবিনেট মন্ত্রী অলিভার ডাউডেন এমপি প্রধান অতিথি এবং ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)-এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, জাতিসংঘ এবং কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমাদ সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেরেমি কুইন এমপি এবং লন্ডন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা, ভোক্তা ও শ্রম বাজার বিষয়ক মন্ত্রী পল স্কালি এমপি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন শ্যাডো ফরেন সেক্রেটারি ডেভিড ল্যামি এমপি, লেবার পার্টির নেতা স্যাম টেরি এমপি এবং স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ফয়সল চৌধুরী এমএসপি।এছাড়া কমনওয়েলথ সেক্রেটারি-জেনারেল প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি-জেনারেল কিট্যাক লিম, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিভিন্ন দলের সাংসদ, যুক্তরাজ্যে ভারতের হাইকমিশনার গায়ত্রী ইসার কুমারসহ ৫০ টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সদস্যরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অলিভার ডাউডেন এমপি তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রথম লন্ডন সফর এবং কনজার্ভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথের সাথে বৈঠকের কথা স্মরণ করে বলেন, “দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ঐতিহাসিক বৈঠকটি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি শক্তিশালী প্রতীকই ছিল না, এটি ছিলো যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে গভীর এবং স্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি। সময়ের সাথে সাথে আমরা বাংলাদেশের সাথে আরো শক্তিশালী বন্ধন স্থাপন করেছি যা পারস্পরিক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং মূল্যবোধের দ্বারা আবদ্ধ।অলিভার ডাউডেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধভিত্তিক একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশের বাস্তবায়ন দেখছে। এই উজ্জ্বল এবং আরও সমৃদ্ধ ভবিষত্যের পথে অগ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যের এফসিডিও মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমাদ বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে একটি স্বনির্ভর, ধর্মনিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে এবং যারা কমিউনিটির মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি একজন আদর্শবান রাজনীতিক যিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে চান, যা আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে।”

স্যার এডওয়ার্ড হিথের সাথে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে লর্ড আহমাদ বলেন, “বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক তখন থেকেই দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে যা ভবিষ্যতে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষে আরও গভীর হবে।জাতির পিতা ও একাত্তরের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “একান্ন বছর আগে বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার জন্য তাঁকে স্যার এডওয়ার্ড হিথ ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নজীরবিহীন অর্ভ্যথনা জানান। এরপর যুক্তরাজ্যই প্রথম ইউরোপীয় দেশ যা বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুসরণ করে ৫১ বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এশিয়ার দ্রুততম প্রবৃদ্ধির অর্থনীতিতে উন্নীত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভিত্তিক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্য সবসময় পাশে থাকবে বলেই আমরা আশা করি।”

২০২১ সালের নবেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচনের লক্ষ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ, জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার বিষয়ে অভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।” হাইকমিশনার একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্য সরকার, জনগণ, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এবং আইরিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেরেমি কুইন এমপি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিব একজন অসাধারণ নেতা ছিলেন। তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ স্বাধীন বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করছেন।মন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাজ্য বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত সামুদ্রিক সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নে সহযোগিতা জোড়দার করবে।পল স্কালি এমপি তাঁর বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অবদানের, বিশেষ করে কোভিড মহামারীর সময়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অসাধারণ জনহিতকর কাজের প্রশংসা করেন।শ্যাডো পররাষ্ট্র সেক্রেটারি ডেভিড ল্যামি এমপি বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে জলবায়ূ সমস্যা মোকাবিলায় সফল নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের প্রতি লেবার পার্টির সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন: “একজন শ্যাডো পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে আমি বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের সাথে কাজ করে যাবো।”

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো যুক্তরাজ্যের সাথে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ সম্পর্কের প্রতি নিবেদিত ‘বঙ্গবন্ধু এবং ব্রিটেন’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়নের ওপর তথ্যচিত্র এবং সংস্কৃতি সচিব মোঃ আবুল মনসুরের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আগত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

You might also like