বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি নষ্ট হচ্ছে পানিতে নিমজ্জিত বাসার আসবাবপত্র সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ বৃষ্টিপাতের পরিমান উল্লেখযোগ্য না হলেও উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃস্পতিবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হলেও গতকাল শুক্রবার সকালে খুব অল্প বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু উজানের পানি আসা অব্যাহত রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে ৫দিন থেকে নগরীর লক্ষাধিক পানিবন্দী মানুষের। বন্যার পানি না কমায় বাসাবাড়ির আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বন্যা কবলিত মানুষের জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানির অভাব শুরু হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের পয়ঃনিষ্কাশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় পূর্বাভাসে বলেছে, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
নগরীর মাছিমপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘বাসায় পানির উপর ৪দিন রয়েছি। সন্তানদের আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। পানি কমছে না। রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য কষ্টে আছি। ঘরের আসবাবপত্র পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
গত ৫দিন থেকে নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, বরইকান্দি, ভার্থখলা, সাধুরবাজার, মোমিনখলা, লাউয়াই, বারখলা, কায়েস্তরাইল, মুছারগাঁও পিরোজপুর, খোজারখলা, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি জলমগ্ন রয়েছে। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান আবার কোথাও কোমরসমান পানি হয়েছে। পানি না কমায় মানুষের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর শাহজালাল উপশহর মূল সড়কে কোমর সমান পানি। প্রাইভেটকার, অটোরিকশা (সিএনজি) বা রিকশা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ সড়ক। অনেকে মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেও মধ্যরাস্তায় গিয়ে পানিতে আটকে যাচ্ছেন। উপশহরের কয়েকটি ব্লকে কলাগাছের ভেলা ও নৌকা চালাতে দেখা গেছে।নগরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র কালীঘাট, মহাজনপট্টি এলাকায় দেখা গেছে, সুরমা নদী সংলগ্ন কালীঘাটের খেয়াঘাট এলাকার শতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে কোমরসমান পানি। অনেক দোকানের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মেন্দিবাগ আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে পানি উঠেছে। কমপ্লেক্স ভবন, ইনডোর কমপ্লেক্সসহ ৩টি ভবনের নিচতলার অর্ধেকাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশালাকারের মাঠটি পরিণত হয়েছে জলাশয়ে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ভবনের নিচতলায় অবস্থিত বিভিন্ন কক্ষে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।সিলেট মহানগর পুলিশের কোতয়ালি মডেল থানা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও ঢুকেছে পানি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের কর্মীদের একটি অংশ দক্ষিণ সুরমা স্টেশনে, আরেকটি অংশ নগরের রিকাবীবাজারে কাজী নজরুল অডিটরিয়ামে আশ্রয় নিয়েছে। এখান থেকেই আপাতত সব কাজ চালানো হবে।নগর ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, সড়ক ও জনপথের তোপখানা কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে নগরীর চালিবন্দর এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ দাহ করার একমাত্র মহাশশ্মানঘাট।এদিকে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে দেশে ফিরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিসিক কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে সিসিক মেয়র নগরের উপশহর, তেররতন, কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, যতরপুর, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর-ছড়ারপার, তালতলা, কাজিরবাজার, ঘাসিটুলা, কানিশাইলসহ নগরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি এ সময় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা ও প্লাবিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী নাগরিকদের খাবার সংকট, পয়ঃসুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সিসিকের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে বলেও তিনি আশ্রিতদের অবহিত করেন।

You might also like