নগরীর কিনব্রিজ এলাকায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং ভোগান্তিতে জনসাধারণ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেট নগরীর কিনব্রিজ এলাকা বিনোদন প্রেমীদের কাছে এক পরিচিত নাম। আলী আমজাদের ঘড়ি তার পাশেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল।ওপাশে সিলেট সার্কিট হাউজ। সামনে দিয়ে প্রবাহমান শান্ত-¯িœগ্ধ সূষমা নিয়ে সুরমা নদী। আর নদী ঘেঁষা পাড়ে গড়ে উঠেছে বিনোদন প্রেমীদের আড্ডারস্থল। সন্ধ্যা নামতেই এই এলাকায় ঘুরতে যান বিনোদনপ্রেমী মানুষেরা। বাইরের জেলা থেকে আগত প্রকৃতিপ্রেমীরাও সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান ওখানে। কেউ তার প্রিয়জনকে নিয়ে আবার কেউ তার পরিবার পরিজনসহ বন্ধু-বান্ধব সহকারে। সকল শ্রেণি পেশার বিনোদনপ্রেমী মানুষ আসেন এই ঐতিহ্যবাহী এলাকাটিতে। অথচ ওখানকার সড়কটির দু’পাশ দখল করে রেখেছে সারি সারি ট্রাক। দেখে মনে হয় যেন একটি নির্ধারিত ট্রাকস্ট্যান্ড।
সিলেট নগরীর প্রধান পাইকারি বাণিজ্যকেন্দ্র কালীঘাট, মহাজনপট্টি, লালদীঘিরপাড় ও হকার্স মার্কেটে যাতায়াতের অন্যতম সড়কটির দুই পাশ দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তোলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘুরতে আসা মানুষজন। সেই সঙ্গে পাইকারি বাজারে মালামাল নিয়ে যাওয়া-আসায় সৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড যানজট।কিনব্রিজ এলাকায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়ি, শতবর্ষের স¥ৃতিধারণ করা শারদা স্মৃতি মিলনায়তন ও সার্কিট হাউজের অবস্থান। এছাড়া ব্রিজের প্রায় দেড় শ’ গজের মধ্যে রয়েছে কোতোয়ালি থানা, বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়।

গত শনিবার রাত ও রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ত ও জরুরি সেবা দেয়ার এ এলাকাটিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড। এ ছাড়া কিনব্রিজের অন্য পাশে রাখা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন যানবাহন এবং সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত টাউন বাস সার্ভিসের গাড়িগুলো। এতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটিতে যানজট যেন নিত্যসময়ের ঘটনা।শনিবার রাতে কিনব্রিজ এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে প্রকৃতি উপভোগ করতে গিয়েছিলেন তানিম হোসেন। সদ্যপ্রবাস থেকে আসা তানিম বলেন, ‘নগরের অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁ ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জায়গা নেই। এজন্য সুরমা নদীর পাড়ে সুরম্য পরিবেশে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে প্রাইভেট গাড়িটি পার্কিংয়ের জায়গা পাই নি। ট্রাকের যন্ত্রণায় সুরমাপাড়ে যাওয়ার পথও রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।একই বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে তানিমের বন্ধু রুবেল ইসলামেরও। তিনি বলেন, ‘ক’দিন আগে কিনব্রিজ এলাকায় এসে ট্রাকচালকদের সঙ্গে বাগ-বিত-ায় জড়াতে হয়েছিল। এরপর থেকে ওই এলাকায় আসা ছেড়ে দিয়েছি। আজ আবার বন্ধুদের সঙ্গে এসে দেখি পরিবেশ বদলায়নি।

কিনব্রিজ এলাকায় সারি বেঁধে ট্রাক রাখা হলেও রোববার সকালে কোনো চালককে পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতে সেখানে সাব্বির হোসেন নামের এক চালককে ট্রাক রাখতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হলেও সেটি শহরের বাইরে। সেখানে ট্রাক রাখা হলে ট্রিপ পাওয়া যায় না। কিনব্রিজ এলাকার পাশেই পাইকারি ও খুচরা বাজার বেশি থাকায় গ্রাহক বেশি পাওয়া যায়। যানজট সৃষ্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহরের অভ্যন্তরে তাঁদের জন্য স্ট্যান্ড দেয়া হোক।মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার ফয়সল মাহমুদ বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ড থাকলেও কিনব্রিজ এলাকাটিতে অবৈধভাবে যত্রতত্র ট্রাক রাখা হচ্ছে। এতে যানজটের পাশাপাশি মানুষ সুরমা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে ট্রাকমালিক-শ্রমিকদের একাধিকার বলা হলেও কাজে আসছে না।তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ, খোদ সিটি করপোরেশন ওই এলাকায় নিজেদের বিভিন্ন যানবাহন সড়কের ওপরই রেখে দেন। তবে শিগগিরই ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, কিনব্রিজ এলাকায় ট্রাক না রাখতে আগেও মালিক ও শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে লিখিতভাবে জানানো হবে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কিছু যানবাহন কিনব্রিজ এলাকায় রাখা হয়। সিটি কর্পোরেশনের গ্যারেজ না থাকায় এমনটি করতে হচ্ছে। তবে দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকায় কিছু জায়গা সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রাখার জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেটির নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে। আপাতত ট্রাক টার্মিনালের একটি অংশে সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।

You might also like