সেব্রেনিসা গণহত্যার ২৭তম বার্ষিকীতে এলএমসিতে স্মরণসভা “মানুষকে জ্বলন্ত টায়ারে নিক্ষিপ্ত করার সেই নির্মম দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে”

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ বসনিয়ার সেব্রেনিসা গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া নিশাদ জাকুপোভিচ এখনও ঘুমাতে পারেন না । দুঃস্বপ্ন দেখেন ।এখনও বন্দি-শিবিরে নির্যাতিত মানুষের চিৎকার তাঁর কানে ভেসে আসে । চোখ-বুজলেই দেখতে পান, নারি-পুরুষ নির্বিশেষে জ্বলন্ত টায়ারের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত করার ভয়াবহ দৃশ্য। তিনি বলেন, “এই ভয়ংকর দৃশ্য গত ৩০ বছরে একটি বারের জন্য ভুলে থাকতে পারিনি, দুঃস্বপ্ন দেখে বিছানায় ঘামতে থাকি ।”

১৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বন্দী-দিনের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করছিলেন নিশাদ জাকুপোভিচ । তিনি একটি ঘটনা স্মরণ করে বলেন, সেদিন একজন স্থানীয় ইমামকে বন্দী করে নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয় । তাঁকে শুকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হয় । তারপর জনসমক্ষে বলতে বাধ্য করা হয়, এই শুকরের মাংস ছিলো তাঁর সর্বকালের সেরা খাবার।জাকুপোভিচ আরো বর্ণনা করেন কীভাবে তাঁর ভাইয়ের সাথে তিনিসহ অন্যদের মানকা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । সতেরোজন বসনিয়ান মুসলিমকে গাদাগাদি করে বাসে তোলা হয় । এরপর বাসটি সার্ব-অধ্যুষিত গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সার্ব-গ্রামবাসী বন্দুকের কোনো গুলি খরচ করা ছাড়াই ১৭জন বসনিয়ান মুসলিমকে সেদিন নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিলো ।তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সেই ভয়াবহ ঘটনা “সার্বরা এখনও অস্বীকার করছে”। কিছু ভুক্তভোগী আদালতে তাদের নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনার বিচার দাবী করেছিলেন। কিন্তু তাদেরকে এখন কোর্ট-ফি বাবদ ৩ হাজার ইউরো করে পরিশোধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, কারণ আদালত তাদের ওপর চালানো নির্যাতনকে নির্যাতন হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না ।ইস্ট লন্ডন মসজিদের ট্রাস্টি হোসাইন শিপারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ ওবিই।

স্মরণসভায় ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বসনিয়া থেকে বক্তব্য রাখেন ড. মালিকা আরিফহোদজিক, যুক্তরাজ্যের সাবেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্ট, বসনিয়া হারজোগোবিনার গ্রান্ট মুফতি ড. হোসাইন কভাজবিস-এর বক্তব্য পড়ে শোনান ইস্ট লন্ডন মসজিদের তরুণ ভলান্টিয়ার মোনাদিয়া আফতাব, লন্ডনে বসনিয়ান কমিউনিটির ইমাম এবং শিক্ষক সিদিন শাহমান ও টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ারম্যান ফাদার এলান গ্রীন ।স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, আমরা ম্লোগানের মতো বলি ‘গণহত্যার কথা কখনো ভুলবো না’ । আসলে এটা কোনো স্লোগান নয় । আমাদেরকে মনে-প্রাণে এই কথাটি উচ্চারণ করতে হবে। আমরা কখনো ভুলবোনার অর্থ হচ্ছে, এই ধরনের জঘন্য ঘটনা কখনো আমাদের ঘরের সম্মুখে ঘটতে দেবো না। হোক ইউরোপে কিংবা অন্য যেকোনো স্থানে, কখনো হতে দেবো না।

উল্লেখ্য, বসনিয়ার স্রেবরেনিসা গণহত্যার ২৭ বছর পার হয়েছে গত ১১ জুলাই। ১৯৯৫ সালের এই দিনে সার্ববাহিনী একরাতে ১০ হাজারেরও বেশি মুসলমানকে নির্মম কায়দায় হত্যা করেছিলো। এরপর থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ, ইসলামিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিবসটি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আসছে। হত্যাকাণ্ডের পর নিহত মুসলমানদের গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয় । সেই লাশগুলো খুঁজে বের করে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ শেষে প্রতি বছর হত্যাকাণ্ড দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাজা ও দাফন করা হয় ।এবার ১১ জুলাই ২৭তম গণহত্যা দিবসে ৫০ জনের লাশ শনাক্ত করার পর জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

You might also like