ছাতকে আ.লীগ নেতা আব্দুল মছব্বিরের বিরদ্ধে দুদকে অভিযোগ

শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী

সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতেক মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও মায়েরকোল গ্রামের মৃত. চান্দ আলীর ছেলে মাজন আলী বাদী হয়ে গত ২১ জুলাই দূর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, সিলেট, বিভাগীয় পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এতে মায়ের কোল গ্রামের মৃত. মছদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল মছবিবরকে অভিযুক্ত করা হয়।

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের মায়েরকুল জামে মসজিদের নামে কীর্তিশাসন মৌজাস্থিত, ৩৭৯ জেএল, ৫২ ও ৭৫ খতিয়ান ১৩৫ নং দাগে, ২.৪০ শতাংশ জমি গত ২৫ জুন ১৯৯০ ইং তারিখে ৫১২৮ নং দলিল মুলে ওকফ করেন ইউনুছ আলী, জয়ধন মালা বিবি, কাঞ্চন মালা বিবি ও মায়ার মা বিবি। দলিল গ্রহীতা মসজিদ কমিটির পক্ষে তৎসময়ের মোতাওয়ালী মো. ইছকন্দর আলী। অভিযোগ উঠেছে দক্ষিন খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়মীলীগ নেতা আব্দুল মছব্বির ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মসজিদের এই জায়গা আতœসাত করেন। গত ২৪ জুন ২০১২ ইং তারিখে সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়, ছাতক অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকতার যোগসাজেসে আব্দুল মছব্বির মসজিদ কমিটির পক্ষে ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে তার স্ত্রী মোছা: বানেছা বেগম ও শালীকা মোছা: সুরেছা বেগমের নামে ২.৪০ শতাংশ জায়গা দলিল নং-২৫৪৪ মুলে হস্তান্তর করেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ সেই সময়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে ও সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছামত উত্তরাধীকারী সনদ ও মসজিদ কমিটির ভূয়া কাগজ সৃজন করে কৌশলে আল্লাহর ঘর মসজিদের জায়গা আতœসাত এবং জবর দখল করেন। এর আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ১১৩৩/২০১০-১১ ইং নং মোকদ্দমার আদেশ বলে মসজিদ কমিটির পক্ষে আব্দুল মছব্বির এর নামে ৩৩০ নং খতিয়ান রেকর্ড ভুক্ত করা হয়। গ্রামবাসী জানান, দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, মোতাওয়াল্লীর তত্বাবধানে রেখে এই জমি ও জমি থেকে আয়কৃত অর্থ মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হবে। মোতাওয়াল্লী তার নিজস্ব কোন কাজে খরছ করিতে পারবেন না। গ্রামের পঞ্চায়েতের অধিকাংশ মতানুযায়ী মোতাওয়াল্লি পরিবর্তন হলে পরবর্তীতে যিনি মোতাওয়াল্লি হবেন তিনি এই জমির তত্বাবধান গ্রহন করবেন।

এছাড়াও একই দাগে মায়ের কোল গ্রামের চান্দ আলীর ছেলে মাজন আলীর বাড়ীসহ ১.২০ শতাংশ জায়গা নামজারী করা হয়। অভিযোগ উঠেছে ওই নামজারীতে আপত্তি করে নামজারী বাতিল করান ভূমি খেকো আব্দুল মছবিবর। ছাতক উপজেলা ভূমি অফিসের ৩১/২০১৯-২০ ইং রিভিউ মোকদ্দমার আদেশ এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা নং-২/২০২০ দায়ের করেন মাজন আলী। সম্প্রতি মাজন আলীর দায়েরী এই মামলার আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ বিজন কুমার সিংহ। আদেশে উল্লেখ করা হয়, মোছা: বানেছা বেগম গং এর নামীয় নামজারী মোকদ্দমা নং-৪৪৮/১৩-১৪ এর আদেশ যথাযথ হওয়ায় ৪৪৮/১৩-১৪ নং নামজারী মোকদ্দমার তফসিলভুক্ত ভূমি ক্ষতিগ্রস্থ না করে প্রার্থী পক্ষ জয়ধন মালা বিবি গং এর ওয়ারিশ সুত্রে প্রাপ্ত ভূমির পরিমান ৩.৬০ একর গণ্য করে নামজারী রিভিউ মোকদ্দমা নং-৩১/১৯-২০ এর ২৩-০৯-২০১৯ তারিখের আদেশ পূর্ণবিবেচনাপূর্বক নালিশা ১৩৫ নং দাগের ভূমিতে সরজমিন দখল অনুযায়ী পরিমিত ভূমি প্রার্থীপক্ষ জয়ধন মালা বিবি গং এর নামে বিধিমোতাবেক নামজারী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নামজারী মোকদ্দমা নং-৭৩৪/১৫-১৬ এবং নামজারী রিভিউ মোকদ্দমা নং-৩১/১৯-২০ এর মূল নথি ও সংশ্লিষ্ট কাগজ পত্র সহকারী কমিশনার (ভূমি), ছাতক এর রিমান্ডে প্রেরণ করা হোক। এ দিকে গত ২৭ জুলাই (বুধবার) উক্ত ভূমি সরজমিন পরিদর্শন করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (বুড়াইগাঁও) কাজী রফিক উজ্জামান। পরিদর্শনের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাতের পর এই ভূমি বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠছেন ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির। মাজন আলীর অভিযোগ আবারো ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ছাতক থানার এসআই আসাদুজ্জামান মাজন আলীর মুঠোফোনে কল করে আব্দুল মছব্বির এর জায়গা বিক্রি করতে প্রতিবন্ধকতা স্মৃষ্টি করছেন মাজন আলী এমন অভিযোগের কথা জানান। তবে ছাতক থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেছেন এটি অভিযোগ না। বিষয়টি একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখার জন্য পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার ফোন এসেছে।
তবে মাজন আলী ও গ্রাম বাসীর অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মসজিদের নামে ওকফকৃত জায়গা তার স্ত্রী মোছা: বানেছা বেগম ও শালীকা মোছা: সুরেছা বেগমের নামে হস্তান্তর করে অত্যন্ত কৌশলে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলেছেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির কখনো মায়েরকোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না মর্মে গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক মুরব্বিয়ান ঘোষনা পূর্বক একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়াও স্মারক নং ৪৬.০০৯০.২৩.০৪২.০৭.০০৮.১৮/১৬১ মুলে খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ও ইউপি সদস্য মো. দবির উদ্দিন স্বাক্ষরিত কপিতে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির মায়েরকুল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী সেজে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড করিয়াছেন। আব্দুল মছবিবর কখনো মায়েরকোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না।
আব্দুল মছব্বির ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মায়েরকুল জামে মসজিদের নামের ওকফকৃত জায়গা আতœসাত করার অভিযোগে গত ১৪ এপ্রিল বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির তার নিজ নামীয় ফেইসবুক আউডিসহ বিভিন্ন নামে বেনামে ভূয়া ফেইসবুক পেইজ থেকে এ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, মনগড়া অপপ্রচারে লিপ্ত হন। গত ২০ এপ্রিল নতুন আলো নিউজ ২৪ নামে একটি ওয়েব পোর্টালে এ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, মনগড়া অপপ্রচার করা হয়। ক্যাপশনে এ প্রতিবেদককে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে এই সংবাদটি ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির নামীয় ফেইসবুক আউডিতে সেয়ার করা হয়। এমনকি এ প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির। এর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ছাতক থানার এসআই মহিন উদ্দিন। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, আব্দুল মছব্বিরের অভিযোগ গত ৫ এপ্রিল তার (আব্দুল মছব্বির) এর বাড়ীতে গিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি করেন এ প্রতিবেদেক। চাঁদা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিন উদ্দিনের নিকট সংবাদ প্রকাশের সোর্স ও বিভিন্ন ডকুমেন্টস দেন এ প্রতিবেদক। সেই সময় ছাতক থানার ওসি মাহবুবর রহমান বলেছিলেন জিডি আকারে একটি লিখিত হাতে পেয়েছি।

এ বিষয়ে মায়েরকুল গ্রামের মাজন আলী দুদকে অভিযোগ দায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জাল-জালিয়াতির স¤্রাট ভূমি খেকো আব্দুল মছব্বির মায়ের কোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না। তিনি ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে মসজিদের জায়গা আত্মসাত করেছেন। আমার বাড়ী ও জমির নামজারী আপত্তি দিয়ে নামজারী বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভূমি, সুনামগঞ্জ নামজারী রিভিশন মোকদ্দমা দায়ের করি। মামলাটি শুনানী শেষে আদেশ দিয়েছেন আদালত। মায়ের কোল গ্রামের মকবুল আলী বলেন, আব্দুল মছব্বির কখনো মায়ের কোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না। তিনি ভূয়া মোতাওয়াল্লী সেজে মসজিদের জায়গা আত্মসাত করেছেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির সব সময় তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বওে আসছেন আমার বোন প্রবাস থেকে টাকা দিয়েছে আমি জায়গা ক্রয় করেছি। দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিন ও ইউপি সদস্য মো. দবির উদ্দিন সব সময় বলে আসছেন, মায়ের কোল গ্রামের মুরব্বিয়ানদের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রত্যয়ন করেছি যে, আব্দুল মছব্বির কখনো মায়ের কোল জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ছিলেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, সিলেট অফিস এর এক কর্মকর্তা অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

You might also like