৫ অক্টোবর চ্যারিটি ডিনার: বাংলাদেশে অক্সফামের ৫০ বছর উদযাপনের উদ্যোগ
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডন, ১৯ আগস্ট: মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে বাংলাদেশে বহুমুখী দাতব্য সেবা প্রদান করে আসছে ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংগঠন অক্সফাম। মাতৃভূমির মানুষের জীবন-মান রক্ষা ও উন্নয়নে সংস্থাটির চমৎকার কাজগুলোর কথা স্মরণ করতে বাংলাদেশে অক্সফামের ৫০ বছর উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফ্রেন্ডস অফ অক্সফাম’। এ উপলক্ষ্যে আগামী ৫ অক্টোবর, ২০২২ পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি হলে একটি চ্যারিটি ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশে মানবসেবায় অক্সফামের অবদান উদযাপনের পাশাপাশি সংস্থাটির মানবিক জরুরি প্রকল্পের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করা হবে।
১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য মিডিয়া’ অনুষ্ঠানে এ আয়োজনের কথা জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি; তখন এই স্বাধীন বাংলাদেশে অক্সফামের মত আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার চমৎকার মানবিক কাজগুলোর দিকে ফিরে তাকানো এবং এর সাফল্য উদযাপনও জরুরি।’
স্থানীয় নিউহাম কাউন্সিলের কাউন্সিলার মমতাজ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য মিডিয়া’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অক্সফামের পেট্রন আজিজ রহমান এবং সাংবাদিক উদয় শঙ্কর দাশ- যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অক্সফামে কর্মরত ছিলেন। এতে বাংলা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাহির আহমদ এবং ইংরেজি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজিয়া লতিফ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে অক্সফামের ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘কী নোট স্পিকার’ হিসেবে থাকবেন জুলিয়ান এইচ ফ্রান্সিস, ওবিই। যিনি ছিলেন ১৯৭১ সালে অক্সফামের শরণার্থী ত্রাণ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী। বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ‘ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননাপ্রাপ্ত মিস্টার ফ্রান্সিস এখন বাংলাদেশের একজন পূর্ণ নাগরিক। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিম। এছাড়া অক্সফামের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
চ্যারিটি ডিনার থেকে সংগৃহিত তহবিল সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা হবে বলে জানানো হয়। স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার সাথে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে অক্সফাম এ অর্থ কাজে লাগাবে।
চ্যারিটি ডিনারে ১০ জন ব্যক্তির একটি টেবিলের টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৫শ পাউন্ড। এই আয়োজনকে সফল ও সার্থ্যক করার জন্য কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের ইতিবাচক সাড়া এবং সমর্থনের প্রত্যাশা করছে ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফ্রেন্ডস অফ অক্সফাম’।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংগঠন অক্সফাম বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনে অবহেলিত, বঞ্চিত ও দুর্যোগপীড়িত মানুষের সঙ্গে যে কাজ করে যাচ্ছে তার সরাসরি উপকারভোগী আমরা বাংলাদেশিরা। ১৯৭০ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে অক্সফামের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ লোকের খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রদানে অক্সফাম অভাবনীয় ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতার পর শরণার্থীদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সদ্য স্বাধীন দেশের দারিদ্র বিমোচনেও অক্সফামের ভূমিকা অনন্য।
অনুষ্ঠানে অক্সফামের কাজের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরা বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন অক্সফামের নানা সেবামূলক কাজের সবচেয়ে চোখে পড়ার মত বিষয় ছিলো ৭২ ঘন্টার মধ্যেই কলেরা ভ্যাকসিনের এক মিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করা। জেট ইনজেক্টর সম্বলিত এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য কোনো সূঁচের প্রয়োজন ছিলো না। শরণার্থী শিবিরে উচ্চ প্রোটিন খাদ্য পাউডার সরবরাহ, টয়লেট সুবিধা এবং গরম কাপড় ও কম্বলের ব্যবস্থা করেছিলো অক্সফাম। ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি অক্সফামের অন্যতম বড় কাজ ছিল “দ্য টেস্টিমনি অফ সিক্সটি অন দ্য ক্রাইসিস ইন বেঙ্গল” ( বাংলার সংকট নিয়ে ষাট জনের সাক্ষ্য) শীর্ষক প্রকাশনা। যাতে বিদেশি ৬০ জন বিশিষ্টজনের দৃষ্টিতে দেখা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার মানুষের পরিস্থিতির কথা স্থান পেয়েছিলো। বাংলার ক্রমবর্ধমান ট্র্যাজেডির প্রতি বিশ্ব নেতাদের চোখ খুলতে এবং জেগে উঠতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। স্বাধীনতার পর শরণার্থী পুনর্বাসনসহ বাংলাদেশে মানবসেবায় অক্সফামের নানা অবদানের বিস্তারিত তুলে ধরেন আয়োজকরা।
আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংগঠন অক্সফামের অন্যতম পেট্রন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আজিজ রহমান। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে অক্সফামের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, ‘অক্সফাম বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে চমৎকার সব কাজ করে চললেও এসব নিয়ে তারা খুব একটা প্রচার কিংবা বড়াই করে না। কিন্তু উপকারভোগী হিসেবে আমরা বাংলাদেশিদের উচিত তাদের অবদানের কথা স্বীকার করা, তাদের ধন্যবাদ দেয়া এবং তাদের চমৎকার কাজের উদযাপন করা। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, বিশ্ব মানবতার জন্য কাজ করতে চাইলে, বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলে অক্সফামের মত সংগঠনের সঙ্গে কাজ করা উচিত।’
অক্সফামের সাবেক কর্মকর্তা উদয় শঙ্কর দাশ মুক্তিযুদ্ধকালীন কাজের নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাঙালি শরর্ণাথীদের জন্য গরম কাপড় ও কম্বলের ব্যবস্থা করতে যুক্তরাজ্যে বিশাল প্রচারাভিযান চালিয়েছিলো অক্সফাম। ওই প্রচারাভিজানের মূল স্লোগান ছিলো- “আপনার বিছানা থেকে একটি কম্বল নিন এবং অক্সফামকে দিন”। মানুষের দেয়া কম্পল সেসময় অক্সফামের কাছে দিতে যুক্তরাজ্যের পোস্ট অফিস কোনো চার্জ নেয়নি। ওই ক্যাম্পেইনে মানুষ এতটাই সাড়া দিয়েছিলো যে, রয়্যাল এয়ারফোর্সের একটি বিশেষ বিমানে করে সেগুলো কলকাতায় নেয়া হয়েছিলো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বন্ধুদের যে মুক্তিযুদ্ধ সম্মননা দিয়েছে, সেই সম্মাননাপ্রাপ্ত ৫টি বিদেশি সংগঠনের একটি হলো অক্সফাম।