উৎসবের আমেজ ফের ব্যস্ত হচ্ছে সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলো
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ প্রায় ১৮ দিন খেয়ে না খেয়ে কঠিন আন্দোলন। তারপর সাফল্য এবং উদযাপনের আনন্দ নাচ গান-রীতিমতো আনন্দ উৎসবের পর সোমবার থেকে আবার ব্যস্ত হয়েছে সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলো। কঠিন ব্যস্ততায় আবার তারা কাজে ডুব দিয়েছেন। তবে এখন সেই কাজটি করতে পারবেন তারা উৎসবের আমেজে।মাত্র ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি হলেও এতেই সন্তুষ্ট বিভিন্ন বাগানের প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিক। অন্তত রোববার সারাদিন নাচে গানে তাদের উদযাপন যারা দেখেছেন, নিশ্চয় তৃপ্তি ও সন্তুষ্টির ঝিলিকও তাদের চোখে মুখে দেখেছেন তারা।দৈনিক ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা ১৮দিন আন্দোলনের পর হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার ১৩জন বাগান মালিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সেই বৈঠক শেষে জানিয়ে দেয়া হয়, এখন থেকে ১২০ টাকার বদলে চা শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে ১৭০ টাকা। মানে শ্রমিকদের দাবি ১৮০ টাকা হলেও বাড়ানোর ঘোষণা এলো ৫০ টাকা। কিন্তু তবুও কি অপার আনন্দ! এমন আনন্দ-উৎসবে মত্ত ছিলেন হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা।
তবে গোটা বিষয়ে কিছু শ্রমিক হতাশা প্রকাশ করলেও অধিকাংশই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার প্রকাশ দেখা গেছে রোববার। সিলেট বিভাগের প্রায় প্রতিটি চা বাগানে উৎসবে মেতেছিলেন আজন্ম দারিদ্র-পীড়িত চা শ্রমিকরা। তারা নাচে গানে আনন্দে মত্ত হয়েছিলেন। এমনকি ‘নৌকা’ ‘নৌকা’ বলে গলা ফাটানোর পাশাপাশি ফাটিয়েছেন ‘হাসিনা’ ‘হাসিনা’ বলেও।হবিগঞ্জের দারাগাঁও পঞ্চায়েত সভাপতি প্রেমলাল আহির জানান, প্রধানমন্ত্রী মজুরি সমস্যার সমাধান করে দেয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে মিছিল করেছি। শ্রমিকরা খুশি। তারা নেচে গেয়ে আনন্দ উদযাপন করেছে। রোববার সপ্তাহিক বন্ধ ছিল। তাই আনন্দের মাত্রাও ছিল বেশী। তবে আজ সোমবার থেকে সব শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজারের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১৭০ টাকা মজুরি মেনে নিয়েছি। রোববার বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে বাগান বন্ধ রয়েছে এবং শ্রমিকরা আনন্দ মিছিল করেছে। সোমবার থেকে আবারও বাগানগুলো কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সব শ্রমিক কাজে ফিরতে উন্মুখ।সরেজমিনে দেখা গেছে, মজুরি বাড়ায় শ্রমিকদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। বাগানে উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন তারা। সকাল থেকে দারাগাঁও, রশিদপুর, চান্দপুর, ফয়জাবাদসহ জেলার সবগুলো বাগানে কাজ শুরু করেন তারা। এরআগে এতোদিন কাজ ছাড়া থাকেননি শ্রমিকরা। আন্দোলন চলাকালে কাজে না থাকলেও মন পড়েছিল বাগানে।
চা শ্রমিক দাসিয়া দাস বলেন, এখন পাতা তুলতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে। এতদিন ঘরে থেকে আমাদের ভালো লাগেনি। অনেক কষ্ট হয়েছে।বিজয়া কর্মকার নামের আরেক শ্রমিক বলেন, কাজ বন্ধ থাকলে কী ভালো লাগে? আজ আমরা কাজে আছি, আমাদের ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মজুরি বাড়িয়ে দেয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ।ফয়জাবাদ চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি দুলাল সাঁওতাল বলেন, টানা ১৯ দিন আন্দোলন করে আজ কাজে যোগ দিয়েছি। আনন্দের সঙ্গে কর্মস্থলে ফিরেছেন শ্রমিকরা।ওই বাগানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ গোলাম সাকলাইন বলেন, ইতোমধ্যে বাগানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করবো যেন একটু বেশি কাজ করায়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি।এরআগে দৈনিক মজুরি ৩ শ’ টাকার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ২ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করেন শ্রমিকরা। এরপর তারা ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী তাদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিলে সোমবার থেকে তারা পুরোদমে কাজে ফিরে যান।