ছাতকে অবৈধ ডেন্টাল কেয়ারের ছড়াছড়ি
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠেছে অবৈধ ডেন্টাল কেয়ার। আর এসব অবৈধ ডেন্টাল কেয়ারে কোন বৈধ চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান নেই। গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চলছে এসব ডেন্টাল কেয়ার। এতে করে রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন ও চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।অভিযোগ উঠেছে, ছাতক পৌর শহরে আশা ডেন্টাল কেয়ার নামে প্রতিষ্টান পরিচালনা করে আসছেন ভূয়া সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়। কোন লাইসেন্সধারী বা রেজিস্ট্রার ডাক্তার না। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদ না থাকার পরও তিনি সহকারী ডেন্টাল সার্জন। সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ না নিয়েই নিজের ইচ্ছে মতো নামের আগে ডাক্তার ও নামের পরে সহকারী ডেন্টাল সার্জন ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক পেশার মতো একটি সুরক্ষিত পেশায় জড়িয়ে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন ভূয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়। আশা ডেন্টাল কেয়ারে রয়েছে তার চকচকে চেম্বার। আছে সাইনবোর্ড। সুধীর রায় নামের ঐ ব্যাক্তি নিজের নামের আগে ডাক্তার ও নামের পরে সহকারী ডেন্টাল সার্জন লিখে রঙিন প্রেসক্রিপশনে প্রতিদিন রোগী দেখছেন। শুধু ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে ১৫০-২০০ টাকা ফি নিচ্ছেন। ডিপ্লোমা পাস করে সরাসরি ডাক্তার ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদবি ব্যবহার করে দীর্ঘ দিন ধরে আশা ডেন্টাল কেয়ার” নামে ভুয়া দাঁতের ডাক্তার ও সার্জন সেজে সুধীর চন্দ্র রায় শতশতরোগীদের সাথে প্রতারনা করছেন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ১১ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আইনুর আক্তার পান্না এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: রাজীব চক্রবর্তী ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় আশা ডেন্টাল কেয়ারের এই ভূয়া সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়কে আটক করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বৈধ কাগজ পত্র ও ডাক্তারী কোন সনদ না থাকায় ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়কে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এর পর জেল থেকে বের হয়ে সিলেট মদিনা মার্কেটের কালিবাড়ি পয়েন্ট এলাকায় আরেক আশা ডেল্টাল কেয়ার নামে চেম্বার খোলে প্রতারনা শুরু করেন ভূয়া সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়। চলতি বছরের ৯ জুন কালিবাড়ি পয়েন্ট এলাকার আশা ডেল্টার কেয়ারের ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় এর চেম্বারে যান দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের ওয়াহিদ নুরের ছেলে মোস্তাক মিয়া। মোস্তাক মিয়ার বাম দাঁতের মাড়িতে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করাতে গেলেও ডান পাশে মাড়ির উপর অংশে মেশিন দিয়ে একটি ভালো দাঁতে ছিদ্র করে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি প্রতিবাদ করলে কমপাউন্ডার দ্বারা ব্যবস্থাপত্র লিখিয়ে দিয়ে মোস্তাক মিয়াকে ভয় দেখিয়ে চেম্বার থেকে তাড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় প্রতরানার শিকার মোস্তাক মিয়া বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম শ্রেনী আদালতে জালালাবাদ সি আর মামলা (নং-১৪৪/২০২২) দায়ের করা হয়। এতে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউপির কলকতা গ্রামের মনরঞ্জন রায়ের পুত্র ও আশা ডেন্টাল কেয়ার নামে প্রতিষ্টানের ঐ ভূয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়কে প্রধান আসামী করা হয়।
এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাম দাঁতের মাড়িতে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে ছাতক পৌর শহরের আশা ডেন্টাল কেয়ারে যান হাজেরা নামে একজন মহিলা রোগী। কিন্ত ভূয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় ঔই রোগীর ডান মাড়িতে ভালো দাঁত মেশিন দিয়ে পরিস্কার করতে গিয়ে ছিদ্র করে ফেলেন। এ নিয়ে রোগী ও ভূয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় এর মধ্যে চেম্বারে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নয়ন দাশ অপু ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হাসান আহমদ ঘটনাস্থলে যান। ঔ মহিলা রোগীর বক্তব্য শুনে ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদ করেন নয়ন দাশ অপু ও হাসান আহমদ। অভিযোগ উঠেছে, ভূয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় আত্মরক্ষার্থে প্রতিবাদকারীদেরকে চাঁদাবাজ বানিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। ভূয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়ের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন, ছাতক পৌর শহরের চরের বন্দ গ্রামের হাজেরা বেগম, চমক আলী, রহিম আলী, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মোস্তাক মিয়া, সেবুব মিয়াসহ শতাধিক রোগীরা। দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে গিয়ে আক্রান্ত দাঁত ভালো হয়নি বরং ভালো দাঁতও হারিয়েছেন ভুক্তভোগি রোগীরা। ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ। নানা অপরাধ, প্রতারনামূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে ভূয়া নাটক সাজিয়ে ভালো মানুষকে হয়রানি করছেন। আরো জানা যায়, এই আশা ডেন্টাল কেয়ারে সিলেট থেকে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ওর্যাল এন্ড ডেন্টার সার্জন ( বিডিএস সিওমের) সৈয়দ নাঈম আহমদ একদিন দাঁতের রোগী দেখছেন। কিন্ত সপ্তাহে ৬ দিন তার প্রতিষ্টান খোলা আছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার প্রতিষ্টানে নানা রঙ্গের বোরকা পড়া মহিলাদের বেশি আনা গোনারও গুঞ্জন রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই। এতে করে ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়ের খুঁটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন উঠেছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সকল ভুয়া চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মনিটরিং না থাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠেছে। আর প্রতারনার শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় কারাগার থেকে বের হয়ে নাম বদলে তার নাম রাখেন সুধীর রায়। প্রায় এক যুগের বেশী দিন ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নাম বদল করেই আশা ডেন্টাল কেয়ার নামে সাইন বোর্ডের আড়ালে ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়ের রহস্যজনক আরো কোন অবৈধ ব্যবসা রয়েছে কিনা সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল দাবি ভুক্তভোগীদের। পাশাপাশি এ ভূয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীরা।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নয়ন দাশ অপু ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হাসান আহমদ জানান, হাজেরা নামে এক রোগী চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছেন। ঔ মহিলার পক্ষে কথা বলায় একটি চক্রের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তারা।এ বিষয়ে আদালত কতৃক এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা স্বীকার করে সুধীর চন্দ্র রায় বলেন, আমার এখানে একজন ডাক্তার নিয়মিত আসেন। আমি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছি। তবে তিনি তার নামের আগে ডাক্তার ও নামের পরে ডেন্টাল সার্জন কিভাবে লিখেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।এ বিষয়ে ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়কে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার সত্যতা নিশ্চিত করে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: রাজীব চক্রবর্তী বলেন, উর্ধবতন কতৃপক্ষের অনুমতি স্বাপেক্ষে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করা হবে।