কবে চালু হবে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রানীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু?
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ কুশিয়ারা নদীর উপর বহুল প্রতীক্ষিত সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন জগন্নাথপুরবাসীসহ সুনামগঞ্জের মানুষ। আগামী ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারাদেশের ১শ’ সেতুর সঙ্গে এ সেতুটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও স্থানীয় এমপি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান দেশের বাইরে থাকায় ওইদিন সেতুটি উদ্বোধন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কারণে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কবে চালু হবে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রানীগঞ্জ কুশিয়ারা সেতু?জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের জেলা সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকায় সড়ক পথে যাতায়াতে বিভাগীয় শহর সিলেট ঘুরে যেতে হয়। সুনামগঞ্জের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৮ সালে সুনামগঞ্জের পাগলা- জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের প্রচেষ্টায় কাজ শুরু হলেও ২০০১ সালে ৪ দলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে সড়কের কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আ’লীগ আবার ক্ষমতায় এলে স্থানীয় এমপি বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় সড়কের কাজ পুনরায় শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে সড়কের ৫২ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করা হয়। ২০১৪ সালে সড়কের রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ওপর ১টি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.২৫ মিটার বক্স গার্ডার সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি চালু হলে সুনামগঞ্জবাসীকে আর সিলেট হয়ে ঘুরে ঢাকা যেতে হবে না। মানুষ তখন পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে ৫২ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে এবং সময় বাঁচবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ হলে ছাতকের মতো প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায়ও ছোট বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করেন তারা।ইতোমধ্যে রানীগঞ্জ সেতুর পূর্বপাড়ে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অনুমোদন লাভ করেছে। সেতুর পশ্চিমপাড়ে একটি ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে বলে জানান তারা।
জগন্নাথপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব জানান, রানীগঞ্জ সেতু সুনামগঞ্জের উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেবে। সুনামগঞ্জবাসীর কাছে এটা পদ্মা সেতুর মতো আবেগ-অনুভূতির ব্যাপার। স্বপ্নের দৃশ্যমান এ সেতু এখন যান চলাচলের অপেক্ষায়।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করেছে এমএম বিল্ডার্স এন্ড কোম্পানি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হারুণ রশীদ জানান, চায়না কোম্পানি করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় সময়মতো সেতুর কাজ শেষ করা যায়নি। পরে নিজেরা সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করেন। তিনি বলেন, বক্স গার্ডার এই সেতুতে ১৫টি স্পেন ও ১২টি পিলার রয়েছে।সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এ সেতুটি জেলাবাসীর এক অন্যরকম আবেগ অনুভূতির বিষয়। ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ১শ’ সেতুর উদ্বোধন করার কথা। পরিকল্পনামন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় ধার্য্য দিনক্ষণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যেতে পারে।