আফম কামাল খুনের ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ বিএনপি নেতা আফম কামাল হত্যাকা-ের প্রায় ৪৯ ঘণ্টা পর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহতের ভাই মইনুল হক বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, মামলায় আসামি হিসেবে আজিজুর রহমান সম্রাটসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম বলতে চাননি তিনি। মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান আজবাহার।রোববার রাত ৯টার দিকে নগরির আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আফম কামাল। ব্যবসায়িক বিরোধে কামাল খুন হতে পারেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা আফম কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকা থেকে আম্বরখানা বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িকে অনুসরণ করছিল দুটি মোটরসাইকেল। বড়বাজার ১১৮নং বাসার সামনে কামালের গাড়ির গতিরোধ করে মোটরসাইকেল আরোহীরা। পরে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন কামালকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই কামাল মারা যান জানিয়ে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামছুল ইসলাম বলেন, কামালের দেহে ২৫টি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে ২টি, বুকের বামপাশে ১টি ও বাম পায়ে ৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

নগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আফম কামাল খুনের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় ৫ জন। এরমধ্যে আজিজুর রহমান সম্রাট, শাকিল ও রাজু নামের ৩ জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে এই সূত্র। এদের মধ্যে সম্রাট আগে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন তবে বর্তমানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।নগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আফম কামাল রাজনীতির পাশাপাশি পাথর ব্যবসা এবং নগরির জিন্দাবাজার এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আজিজুর রহমান সম্রাটের আত্মীয়কে সৌদিআরবে পাঠানো নিয়ে দ’ুজনের দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সম্রাট গত ২১ অক্টোবর আফম কামালসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। এরই জের ধরে এই হত্যাকা- ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্রাটকে খুঁজছে পুলিশ
জেলা বিএনপি নেতা আফম কামাল খুনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান সম্রাটকে গ্রেফতারের গুঞ্জন উঠেছে। কারণ, একটি পূর্ব বিরোধের সূত্র ধরে সম্রাট এ খুনে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে আফম কামালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলারও বাদী। অবশ্য মঙ্গলবার পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সংস্থা সম্্রাটকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়নি। গ্রেফতারও হয়নি কেউ ।জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে চারদিকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জন পোস্ট দিতে শুরু করেন। তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্রাটের নেতৃত্বে শাকিল, রাজুসহ ৫/৬ জন সন্ত্রাসী এ খুনের মিশনে অংশ নেয়। ঘটনার পরপরই তারা আম্বরখানার বড়বাজার গলির প্রধান সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ এ তথ্য পায়। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় বিএনপি নেতা আফম কামাল ড্রাইভিং সিটে ছিলেন। এই অবস্থায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করা হয়। মাত্র ২/৩ মিনিটে ঘটনা ঘটিয়ে তারা চলে যায়।আফম কামাল ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপি’র পরিচিত মুখ। তিনি জেলা কমিটি’র সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। গত কাউন্সিলে জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। নগরির আম্বরখানার মান্নান সুপার মার্কেটে তার এক আত্মীয়ের ট্রাভেলস রয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর ওই ট্রাভেলসে হাবিব নামের এক যুবককে সৌদি আরবে পাঠানোর পর কথামতো কাজ দেয়া হয়নি অভিযোগ করে আজিজুর রহমান সম্রাট ট্রাভেলস মালিক লাহিন ও ট্রাভেলস কর্মীদের মারধর করে। খবর পেয়ে আফম কামাল ও তার কয়েক সহযোগী নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে হামলার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ ঝামেলায় জড়ায়। আফম কামাল তখন সম্রাট ও তার সহযোগীদের চড়-থাপ্পড় মেরেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় সম্রাট কোতয়ালি থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন। যার ৪নং আসামি ছিলেন আফম কামাল। ঘটনার পর মামলার আসামি হয়ে যাওয়ায় অপর সহযোগী চমন, উমেদসহ সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর আফম কামাল হত্যাকা-ের শিকার হওয়ার ২ দিন আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন। অন্যদিকে সম্রাট ও তার সহযোগীরা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ছিলো। তাই ৬ নভেম্বর রোববার রাতে আফম কামালকে হত্যায় সম্রাটদের সন্দেহ করা হচ্ছে।
আম্বরখানা এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্রাটের নেতৃত্বে আম্বরখানা পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের টিম লিডার সম্রাট নিজেই। তারা আম্বরখানা এলাকার নানা বিষয়ে সম্প্রতি জড়িত হয়ে পড়ে। কারো সাথে কিছু ঘটলেই তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এসে ব্যবসায়ীদের সাথে বিরোধে জড়াতো সম্রাট। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্রাট রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টার নিয়ে এখন আম্বরখানা এলাকার ত্রাসে পরিণত হয়েছে। শুধু আফম কামাল নয়, আরও অনেকেরই সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। এসব বিরোধের কারণে তাকে নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন সবাই। এখন তার সঙ্গে এলাকার সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা চলাচল করে। সম্রাটের বাড়ি বিশ্বনাথ থানার লামাকাজী আতাপুর গ্রামে। সে বর্তমানে আম্বরখানার শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

কে এই সম্রাট?

আম্বরখানার ‘মূর্তিমান’ আতঙ্কের নাম সম্রাট। সোনালী ব্যাংক থেকে পলাশ হোটেল পর্যন্ত ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের একটি দল। ছাত্রলীগের গ্রুপ পরিচয়ে তারা আম্বরখানায় বেপরোয়া। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি সবই করে নগরির ব্যস্ততম ওই এলাকায়। সম্রাটের দাপটের কাছে পুলিশও অসহায়। সেই সম্রাটের বিতর্কিত কর্মকা-ের প্রতিবাদ করার কারণে প্রাণ দিতে হলো জেলা বিএনপি’র সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আফম কামালকে। এই ঘটনায় নাড়া দিয়েছে আম্বরখানাবাসীকে। ভয়ে কাঁপছে নগরের বড়বাজার।ঘটনার পর গোটা এলাকায় আতঙ্ক নেমে এসেছে। হতবাক সিলেটের রাজনৈতিক মহলও। সম্রাটের পুরো নাম আজিজুর রহমান সম্রাট। তার বাড়ি সিলেটের লামাকাজি এলাকায়। আম্বরখানা মনিপুরী এলাকার ভাড়া বাসায় সে বসবাস করে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আম্বরখানা এলাকায় বসবাস করার সুবাদে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সম্রাট এক সময় আম্বরখানা এলাকায় ‘টোকাই সম্রাট’ নামে পরিচিত ছিল। ওই সময় সে ছাত্রদলের একটি গ্রুপের সঙ্গে ওঠাবসা করতো।
২০০৯ সালে আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পর সে খোলস পাল্টে হয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মী। সে ছাত্রলীগের স্থানীয় দর্শনদেউড়ী গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে কয়েকদিন ওঠাবসা করলেও তার ঠাঁই হয়নি ওখানে। ছাত্রলীগের ওই গ্রুপের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন সম্রাটের সঙ্গে সব টোকাই ও উচ্ছৃঙ্খল তরুণরা থাকতো। নানা বিতর্কিত ঘটনার মূলহোতা ছিল তারা। মাদক সেবনসহ নানা ঘটনায় জড়িত তারা। এ কারণে সম্রাট ও তার সহযোগীদের গ্রুপে জায়গা দেয়া হয়নি। এরপর সম্রাট অবস্থান নেয় আম্বরখানা এলাকার মারজান গলিতে। এখন ওই গলিই তার আস্তানা। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে সম্রাট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা পোস্টার, ছবি পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয়।আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আম্বরখানার প্রতিটি দোকান থেকেই চাঁদাবাজি করতো সম্রাট। প্রতিদিন বিকেল হলেই উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের নিয়ে সে আড্ডায় বসতো। সোনালী ব্যাংকের নিচে মানি এক্সচেঞ্জ এলাকার খাবার হোটেল, ফলের হকার, কাঁচাবাজারসহ সব এলাকার ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন তার চাঁদার উৎস। অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে চাঁদা দিতো ব্যবসায়ীরা। টি ল্যান্ড হোটেলে রাতে জুয়ার বোর্ড বসায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ওই জুয়ার আস্তানায় খেলে।

তারা জানান, পুলিশের কেউ কেউ গিয়েও মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে আড্ডা দিতেন। এ কারণে সম্রাট আরও আস্কারা পেয়ে যায়। এ নিয়ে আম্বরখানার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার কয়েক দফা উত্তেজনা হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি ব্যবসায়ীরা। ফলে সম্রাটের অত্যাচার নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা।সম্রাটের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের গ্রুপের কর্মীরা শুধু মারজান গলিতেই নয়, আম্বরখানা এলাকার হোটেল পলাশের সামনে, সাপ্লাই এলাকা, কামাল গলি, লেইস মার্কেটের ভেতরে বসে আড্ডা দিতো। এ কারণে তাদের অত্যাচারে ওইসব এলাকার মানুষও অতিষ্ঠ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আম্বরখানা, বড়বাজার, বিমান অফিসের সামনে খাসদবির এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উঠে আসে সম্রাটের ছিনতাই গ্রুপের নাম।পুলিশের কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি। বরং দিনে দিনে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলো সম্রাট ও তার সহযোগীরা। সম্রাটের প্রধান সহযোগী শাকিল ও মিশু। শাকিল ও মিশু বসবাস করে খাসদবির এলাকায়। শাকিলের মূল বাড়ি বরিশালে। তবে তার বেড়ে ওঠা খাসদবির এলাকায়। এখন সে এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিত। তার সমন্ধি সম্পর্কে মিশু। সম্রাটের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অপরাধচক্রের সব নিয়ন্ত্রণ করে তারা দু’জন। একজন ছিনতাইকারীদের সর্দার ও অপরজন মাদক চক্রের হোতা। নিহত আফম কামালের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, কামালের বাসা ছিল বালুচরে। আম্বরখানা এলাকা দিয়ে যাতায়াত করলেও তিনি সেখানে নিয়মিত বসতেন না। বিএনপি নেতা চমন, জেহিনের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে ওই এলাকায় যাতায়াত করতেন।
আম্বরখানার মারজান মার্কেটে রয়েছে নিহত আফম কামালের ভগ্নিপতি জৈনউদ্দিনের ট্রাভেলস ব্যবসা। মাঝে-মধ্যে ওখানে এসে বসতেন আফম কামাল। তবে নিয়মিত না। অক্টোবরের শেষদিকের ঘটনা। একদিন খবর আসে জৈনউদ্দিন ও তার ছেলেকে ট্রাভেলসের ভেতরে আটকে রেখেছে সম্রাট ও তার সহযোগীরা। এ খবর পেয়ে বন্ধু চমনকে নিয়ে সেখানে যান আফম কামাল। তারা ওখানে গিয়ে দেখেন জৈনউদ্দিন ও তার ছেলেকে দোকানের ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের ঘেরাও করে রেখেছে। এ সময় কামাল ও চমন গিয়ে দোকানের ভেতর থেকে জৈনউদ্দিন ও তার ছেলেকে উদ্ধার করেন। চাঁদা না দেয়ার কারণে সম্রাট ও তার লোকজন দোকানের ভেতরেই তাদের আটকে রাখে। এতে ক্ষুব্ধ হন ব্যবসায়ীরা। উদ্ধারের পর কামালসহ ব্যবসায়ীরা সম্রাট ও তার লোকজনকে মারধর করেন। পরে তারা চলে যায়। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাদের সহযোগিতায় সিলেটের কোতয়ালি থানায় সম্রাটের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
এ মামলায় আসামি করা হয় কামালকে। মারধরের ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয় সম্রাট। নিহত আফম কামালের বন্ধুরা জানিয়েছেন সম্রাট কামালের ওপর হামলা চালাতে একাধিকবার টার্গেট করে। এ কারণে বন্ধুরা কামালকে আম্বরখানা দিয়ে একা চলতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু আফম কামাল তাদের নিষেধ মানেননি। তারা জানিয়েছেন ঘটনার দিন রাতেই ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল কামালের। কিন্তু হঠাৎ করে ঢাকায় যাওয়া বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি চৌকিদেখী এলাকায় গিয়ে বন্ধু চমনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বালুচর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দেন। খাসদবির এসে আরও কিছু সময় কাটান। সেখানে কিছু সওদাপাতি কিনেন। বড়বাজার গলির গোয়াইপাড়া গলির মুখে আসা মাত্র তার ওপর হামলা চালানো হয় এবং টার্গেট করে কামালকে হত্যা করা হয়।
বড়বাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন এ ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। গোয়াইপাড়া এলাকার গলির মুখ অপরাধের আস্তানা গড়ে উঠেছে অনেক আগে থেকেই। সম্রাট গ্রুপের কিছু সদস্য সবসময় ওই এলাকায় আড্ডা দিতো। তাদের কাছে স্থানীয় লোকজনও অসহায় হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই ওখানে ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ নিয়ে তারা স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাননি। পুলিশকে অবগত করেও কাজ হয়নি। ফলে সম্রাট বাহিনীর নিরব অত্যাচার সয়ে যাচ্ছিলেন বড়বাজারের বাসিন্দারাও।
এদিকে জেলা বিএনপি নেতা আফম কামাল হত্যার ঘটনায় মামলা করতে গতকাল সন্ধ্যায় এয়ারপোর্ট থানায় যান তার বড় ভাই ময়নুল হক। সঙ্গে ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এ্যাডভোকেট আল আসলাম মুমিন। আইনজীবী জানিয়েছেন, ঘটনার পর সবাই শোকাহত ছিলেন। এ কারণে মামলার এজাহার দিতে বিলম্ব হয়েছে। নিহত কামালের বড় ভাই ময়নুল হক বলেন, মামলায় প্রধান আসামি সম্রাট। এ ছাড়া তার সহযোগী শাকিল, মিশুসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। তিনি জানান. আগের ঘটনার সূত্র ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে দাবি করা হয়েছে। সম্রাট ও তার লোকজনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
এয়ারপোর্ট থানার ওসি খান মো. মাইনুল জাকির জানিয়েছেন, মামলা রেকর্ড হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযানে রয়েছে।
এদিকে আফম কামালের খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর আসামিরা সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ছাতক ও সুনামগঞ্জ এলাকায় চলে যায়।
প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালিয়ে অনেকের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর রটে আফম কামাল হত্যা মামলার প্রধান আসামি সম্রাট সুনামগঞ্জ থেকে আটক হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্রাটসহ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকায় বিষয়টি প্রকাশ করা হচ্ছে না। আফম কামাল খুনের ঘটনায় গতকাল থেকে ৩ দিনের শোক কর্মসূচি শুরু করেছে সিলেট বিএনপি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল তারা কালোব্যাজ ধারণ করেন।
জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আফম কামাল সিলেটের পরিচিত মুখ। তিনি ছাত্রদল থেকে বিএনপি পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে গেছেন। তাকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে কেউ মেনে নিতে পারেননি। এটা সিলেটের রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। আমরা শোক কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে; আফম কামালের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। সেটি না করলে আমরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

You might also like